Ajker Patrika

মদ ছেড়ে গাঁজায় ঝুঁকছে জেনারেশন জেড, আঙুরখেত ভাঙছেন চাষিরা 

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ২০: ১১
মদ ছেড়ে গাঁজায় ঝুঁকছে জেনারেশন জেড, আঙুরখেত ভাঙছেন চাষিরা 

পৃথিবীতে কমে গেছে রেড ওয়াইনের (মদ) চাহিদা। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত মদ মজুত আছে বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহশালায়। ফলে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চাষিরা পণ্যটির অন্যতম কাঁচামাল আঙুরের খেত নষ্ট করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে জেনারেশন জেড (১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম) মদ ছেড়ে ঝুঁকছে গাঁজা সেবনের দিকে। সেটিও মদের বাজারে ধস নামার পেছনে বড় কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার আঙুর চাষি টনি টাউনসেনড গত বছর নিজের ১৪ হেক্টর আঙুরের শ্যামল ও প্রাণবন্ত খেত ভেঙে দিয়েছেন। কারণ আঙুর পুষ্ট হওয়ার পর সেগুলো তুলতে গেলে তাঁর প্রায় ২৩ হাজার মার্কিন ডলার লোকসান হতো। দাবদাহের আশঙ্কায় বাকি খেতগুলোও তিনি নষ্ট করে দেওয়া চিন্তা করছেন। 

টাউনসেন্ড নষ্ট করে দেওয়া আঙুরের খেতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি মদশিল্পে থাকতে পেরে আনন্দ পেয়েছি। কিন্তু এভাবে চালিয়ে গেলে লোকসান ছাড়া কিছু দেখছি না। 

টাউনসেন্ড দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রিভারল্যান্ডে বাস করেন। এই অঞ্চলেই দেশটির মোট আঙুরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয়। তবে কোভিডের কারণে ২০২০ সাল থেকে জ্বালানি খরচ এবং চীনা শুল্ক বৃদ্ধির পর দেশটিতে আঙুরের সরবরাহ এবং দাম হতাশাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। টাউনসেন্ডের আয়ের একমাত্র উৎস আঙুর চাষ নয়। তিনি মদ এবং খাদ্য পর্যটনের সঙ্গে আংশিকভাবে জড়িত ছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সব কৃষক তাঁর মতো এতটা ভাগ্যবান নয়। 

রিভারল্যান্ড ওয়াইনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার লিন্ডাল রো বলেন, ‘অনেক লোক আছে যারা ওয়াইন শিল্পের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না। 

এই সমস্যা শুধু অস্ট্রেলিয়ায় নয়, সারা বিশ্বে চলছে। বিশ্বব্যাপী মদের উৎপাদন ২০২৩ সালে ৬০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্নে পৌঁছেছে, একই সঙ্গে চাহিদা আরও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব ভাইন অ্যান্ড ওয়াইনের তথ্য বলছে, মদ্যপান হ্রাস পাওয়ায় গত বছর বিশ্বব্যাপী মদের উৎপাদন ১৯৯৫ সালের পর সবচেয়ে কম হয়েছে। পানীয়ের ধরন পরিবর্তন এবং দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা মদ শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যর সেন্ট্রাল ভ্যালিতে অবস্থিত লোডি ওয়াইনগ্রেইপ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক স্টুয়ার্ট স্পেনসার বলেছেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়া বর্তমানে আমরা গত ৩০ বছরের মধ্যে মদের সরবরাহের তুলনায় নিম্ন খারাপ চাহিদা লক্ষ্য করছি।’ 

এদিকে ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ ওয়াইন অস্ট্রেলিয়ার গত বছরের নভেম্বরের রিপোর্ট অনুসারে, অস্ট্রেলিয়া ২০২২–২৩ মৌসুমে গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরিমাণে মদ উৎপাদন করেছে। এরপরেও দেশটি মদের সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। 

অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গবেষণা সংস্থা আইডব্লিউএসআরের কনজিউমার ইনসাইটসের প্রধান অপারেটিং অফিসার রিচার্ড হালস্টেড বলেছেন, কোভিড-১৯, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও সারের বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিমার পরিমাণ বাড়ছে। এভাবে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় মদ শিল্পকে অস্থিতিশীল করেছে। 

মদ্যপানের অভ্যাস পরিবর্তন রেড ওয়াইন শিল্পে সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে। ফ্রান্সের বোর্দো ওয়াইন কাউন্সিলের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ চ্যাটো বলেছেন, বেশি ভাগ লোক এখন রেড ওয়াইনের পরিবর্তে কম অ্যালকোহলযুক্ত স্পার্কলিং, রোজ বা সাদা ওয়াইন পান করছে। জেড জেনারেশনের মধ্যেও মদের ভোক্তা কমেছে। 

ফলে রিভারল্যান্ডের লিন্ডাল রো আশা করেন না যে, অঞ্চলটির রেড ওয়াইন উৎপাদকেরা চলতি মৌসুমে লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হবেন। ফলে অনেক কৃষক এরই মধ্য আঙুরের খেত তুলে ফেলে অন্য ফসল যেমন; বাদাম বা তরমুজ চাষাবাদ শুরু করছেন। 

স্পেনে শিল্প গ্রুপ ফেডার্যাসিওন এস্পানোলা দেল ভিনোর মহাপরিচালক লুইস বেনিটেজ জোসের মতে, দেশটিতে রিওজা রেড ওয়াইনের অতিরিক্ত সরবরাহ ও সাদা ওয়াইনের বেশি চাহিদা রয়েছে। ফলে কৃষকেরা এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। কারণ আপনি রেড ওয়াইনকে কোনোভাবেই সাদাতে রূপান্তর করতে পারবেন না। 

এদিকে ফ্রান্সে কৃষকদের দেশব্যাপী আঙুর খেত তুলে ফেলতে এবং ওয়াইনকে ইথানলে রূপান্তরিত করতে সরকার ২০ কোটি ইউরো বরাদ্দ করেছে। প্রতিটি কৃষককে প্রতি হেক্টোলিটারে ৭৫ ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রধান রেড-ওয়াইন-উৎপাদনকারী অঞ্চল বোর্দোতে ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আঙুর খেত তোলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

এর মধ্যেও ফ্রান্স ইতালিকে ছাড়িয়ে ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়াইন উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। 

জ্বালানি ভর্তুকি এবং ইইউয়ের সবুজায়ন নীতি বাতিলের প্রতিবাদে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে রাস্তা অবরোধ করে শুরু হওয়া ‘ফরাসি কৃষক বিক্ষোভে’ অংশ নিয়েছিল বোর্দোর চাষিরা। আঙুর খেত উপড়ে ফেলা এবং বিকল্প ফসল রোপণের জন্য আঙুর চাষিরা আরও ১৫ কোটি ইউরো বরাদ্দ পায়। 

এমন ধাক্কা ওয়াইনের মতো শিল্পে সামাল দেওয়া বেশ কঠিন। অনেক ওয়াইন প্রস্তুতকারক প্রজন্ম ধরে এটি করে আসছেন, এটি তাঁদের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। ফলে হঠাৎ করে আঙুর চাষ বন্ধ করে দিলে তাঁরা বিপদে পড়বেন। 

ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের চাষিরা মদের অন্যতম কাঁচামাল আঙুরের খেত নষ্ট করে দিচ্ছেন। রিচার্ড হালস্টেড বলেন, ‘আপনি আজ যা রোপণ করবেন তা আপনার বাচ্চাদের এমনকি আপনার নাতি-নাতনিদের আয়ের উৎস হবে। ভালোভাবে একটি আঙুর খেত রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখান থেকে আয় করতে পারবেন। সুতরাং যখন বাজার পরিবর্তিত হয় তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।’ 

ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের শিল্প ব্যবস্থাপক স্পিরোস মালান্দ্রাকিস বলেছেন, মদের ব্র্যান্ডগুলো পরিবর্তিত চাহিদা পূরণে যথেষ্ট কাজ করেনি। উদাহরণস্বরূপ, মদের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড তৈরিতে গুরুত্ব দিলেও জনগণের অর্থসংকটের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ শিল্পটি মদপানকারীদের নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। 

মালন্দ্রাকিস আরও বলেন, সস্তা বা আর্থিক সামর্থ্যের অনুকূলে ওয়াইন ব্র্যান্ড না থাকলে ওয়াইন ব্যবসা লাটে ওঠাই স্বাভাবিক। তখন মানুষ শুধু ককটেল, বিয়ার বা সস্তা স্পিরিট ব্র্যান্ড খাওয়া শুরু করবে। এ ছাড়া জেনারেশন জেড গাঁজার দিকে ঝুঁকে পড়াতেও ওয়াইনের চাহিদা কমেছে বলে মনে করেন তিনি। 

এতে অনেক কৃষকের সামনে মদ শিল্প ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ২০২২ সালে রিভারল্যান্ড ওয়াইন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, অঞ্চলটির প্রায় এক-চতুর্থাংশ কৃষক আগামী তিন বছরের মধ্যে আঙুর চাষ ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত