বাংলাদেশিদের সেবা দেবে না ত্রিপুরার কোনো হোটেল–রেস্তোরাঁ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ১৭
Thumbnail image
গত ২ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে ত্রিপুরায় বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো পরিষেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। ছবি: সংগৃহীত

কোনো বাংলাদেশি পর্যটককে হোটেলে কক্ষ ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ত্রিপুরার হোটেল মালিক সমিতি। এমনকি কোনো রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিদের খাবার দেওয়া হবে না। বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানায় অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি একশ্রেণির উগ্রবাদী জনগণ তীব্র অত্যাচার করছে। আগেও হতো, কিন্তু এখনকার মতো নয়। বর্তমান পরিস্থিতি ভীষণ উদ্বেগের। আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে আগত নাগরিকদের আমরা অতিথির সম্মান দিয়ে থাকি। সেখানে বাংলাদেশের একশ্রেণির নাগরিকদের সে দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি এমন আচরণ নিন্দনীয়। এই প্রেক্ষাপটে অল ত্রিপুরা হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ২ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে আমাদের রাজ্যে আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো পরিষেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সব ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু আমাদের জাতীয় পতাকাকে অপমান করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, যারা আগে থেকে হোটেলে ছিলেন, শুধু তাদের থাকতে দেওয়া হবে। নতুন করে আর কাউকে থাকতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সামনে স্টিকার লাগানো হবে যেখানে লেখা থাকবে—‘বাংলাদেশিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

এর আগে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায় হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা। সেখানে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেয় তাঁরা। পরে এ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এ ঘটনায় বাংলাদেশ ‘গভীরভাবে ক্ষুব্ধ’।

এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাসপাতাল ও চেম্বারে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বপ্রথম কলকাতার জে এন রায় হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ত্রিপুরার আগরতলার আইএলএস হাসপাতাল এ ঘোষণা দেয়।

এরপর পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এক চিকিৎসক বলেন, তিনি বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এর আগে ভারতীয় পতাকায় প্রণাম করে তাঁর চেম্বারে প্রবেশ করতে হবে।

চন্দ্রনাথ অধিকারী নামের আরেক চিকিৎসক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, তিনি সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। সেখানে সবাইকে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে কোনো বাংলাদেশি রোগীকে দেখবেন না।

তবে পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল (ডব্লিউবিএমসি) বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া বন্ধের বিষয়টিকে সমর্থন করেনি। ডব্লিউবিএমসির সভাপতি ড. সুদীপ্ত রায় বলেছেন, তাঁরা রোগীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেন না। সবার চিকিৎসা করবেন।

গত সোমবার ঢাকার বিমানবন্দরে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার এবং পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করার পর চট্টগ্রামে সহিংসতায় আইনজীবীর প্রাণহানির পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ করেছে।

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তাঁর ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের জটিলতা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখে ভারত। এর পর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকের সংখ্যা কমতে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত