বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে বদলে গেছে ঝাড়খন্ডের জনমিতি: ভারত সরকার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ১৩
Thumbnail image

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং সে কারণে সেখানকার জনমিতি বদলে গেছে। ভারতের ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড ট্রাইবস (এনসিএসটি) দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল কো এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড ট্রাইবসের কর্মকর্তা আশা লাকড়া জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের কারণে সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে জনমিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে গেছে। দ্য হিন্দুকে আশা লাকড়া বলেছেন, তাদের তদন্ত নিশ্চিত করেছে যে ‘অনুপ্রবেশ ঘটছে।’ ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তাঁরা এ বিষয়ে প্রমাণও সংগ্রহ করেছেন। 

আশা লাকড়া জানান, স্থানীয় বাসিন্দা, গ্রামবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি এমন এক সময়ে সামনে এলো, যার মাত্র কিছুদিন পরেই রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রধান হেমন্ত সরেনের নিজের আসন বারহাইতও সাঁওতাল পরগনায় অবস্থিত। 

ভারতের আদিবাসী মন্ত্রণালয়ের অধীন এই কমিশনের প্রধান এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বলতে পারছি না ঠিক কখন এই অনুপ্রবেশ ঘটেছে, কিন্তু আপনি যদি বারহাইত সাঁওতালি উত্তর এবং দক্ষিণের মতো এলাকাগুলো দেখেন—সবই আদিবাসী গ্রাম ছিল। আজ এখানে আদিবাসীদের সংখ্যা কমে গেছে। এটি প্রমাণ করে যে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং এটি গত দুই দশক বা তারও বেশি সময়ে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের প্রতিবেদনে এটি বলেছি।’ 

এর আগে, ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১১ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে জমা দেওয়া এক দলিলে দাবি করে, এই অঞ্চলে ‘অনুপ্রবেশ’ হয়েছে এবং ১৯৫১ সাল থেকে এই অঞ্চলের উপজাতীয় জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এ দুটি বিষয় কীভাবে পরস্পর সংযুক্ত, তা মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেনি। দলিলে বলা হয়, ‘বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের কারণে উপজাতীয় জনসংখ্যার হ্রাসের পরিমাণ, উপজাতীয়দের মধ্যে কম শিশু জন্মের হার, খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া এবং অন্যান্য কারণও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’ 

একসময় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করা আশা লাকড়া দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করছে। এ ছাড়া বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই অভিযোগের পালে হাওয়া দিয়েছেন। 

এদিকে, ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সংগঠনগুলোর জোট ঝাড়খণ্ড জনাধিকার মহাসভা গত শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্য সচিব এবং পুলিশ মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে ঘৃণাত্মক বক্তব্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপি নেতাদের বিচার চেয়েছে। 

আশা লাকড়া জানিয়েছেন, কমিশন সাহেবগঞ্জ, পাকুর, গোড্ডা এবং জামতারা জেলা পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তিনি বলেন, কমিশন গত দুই মাসে এসব জেলায় প্রায় দেড় শ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। যারা ‘সাক্ষ্য দিয়েছে যে বাংলাদেশিরা তাদের গ্রামে অনুপ্রবেশ করছে এবং আদিবাসী নারীদের বিভ্রান্ত করে জমি দখল করছে এবং বিয়ের ফাঁদে ফেলছে।’ তবে আশা লাকড়া স্পষ্ট করেছেন যে, যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন। 

লাকড়া জানিয়েছেন, এনসিএসটি তদন্ত দল এমন উদাহরণও খুঁজে পেয়েছে, যেখানে পবিত্র আদিবাসী ভূমি—যেখানে স্থানীয়রা উপাসনা করে—মুসলমানদের জন্য কবরস্থানে পরিণত করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনা ঘটেছে সাহেবগঞ্জ জেলার তেতারিয়া গ্রামে। আশা বলেন, ‘আমরা প্রতিটি জেলায় এর উদাহরণ পেয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত