Ajker Patrika

চীনের কাছে প্রযুক্তি গোপন রাখতে মরিয়া রাশিয়া, গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিজ্ঞানীরা 

অনলাইন ডেস্ক
চীনের কাছে প্রযুক্তি গোপন রাখতে মরিয়া রাশিয়া, গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিজ্ঞানীরা 

ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে রাশিয়া রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে চীনের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। তবে এই চীনের কাছেই নিজেদের প্রযুক্তি গোপন রাখতে মরিয়া রাশিয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের কাছে গোপন তথ্য বিনিময়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। পূর্ববর্তী রাষ্ট্রদ্রোহের গ্রেপ্তারগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মস্কো চীনের কাছেও প্রযুক্তিগত সুবিধা হারানোর বিষয়ে বেশ সতর্ক।

এবার দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দেশটির একটি শীর্ষ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়া। চীনের কাছে গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে আরও দুই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন রয়টার্সকে এই তথ্য জানায়।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাইবেরিয়ার খ্রিস্টিয়ানোভিচ ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড মেকানিক্স এর প্রধান আলেকজান্ডার শিপলিউক ২০১৭ সালে চীনে অনুষ্ঠিত একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে গোপন তথ্য হস্তান্তর করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। 

৫৬ বছর বয়সী শিপলিউক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘তথ্যটি গোপন নয়; বরং, এটি অনলাইনে যে কেউ পেতে পারবেন।’ রয়টার্সের সূত্র জানিয়েছে, শিপলিউক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, তথ্যটি গোপনীয় ছিল না, এবং তিনি নির্দোষ। গত আগস্টে গ্রেপ্তার হওয়া এই আইটিএএম পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত আগে জানানো হয়নি।

আইটিএএম বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং চীনের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রদ্রোহের পূর্ববর্তী মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো ‘মাতৃভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ শনাক্ত করতে সতর্ক রয়েছে।’

পেসকভ চলমান কাজের তাৎপর্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট প্রবণতা চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কঠিন।’

সংবেদনশীল তথ্যের জন্য রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক অ-সংযুক্তি, অ-সংঘাত এবং তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য না করার নীতির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রমাগত জোর দিয়ে বলেছেন, ‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে রাশিয়া বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের অবস্থানে রয়েছে। এই উন্নত অস্ত্রগুলো শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে পারে, যার ফলে এগুলো বায়ু-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সহজেই ভেদ করতে পারে।’

গত বছর সাইবেরিয়ায় লেজার বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি কোলকারকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে গ্রেপ্তারের মাত্র দুই দিন পরই তিনি ক্যানসারের কারণে মারা যান। তার আইনজীবী আলেকজান্ডার ফেডুলভ বলেন, ‘কোলকারের বিরুদ্ধে চীনের সঙ্গে গোপন তথ্য বিনিময়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যদিও তাঁর পরিবার অভিযোগটি অস্বীকার করেছে।’

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা টিএএসএস জানিয়েছে, ২০২০ সালে সাইবেরিয়ার টমস্ক শহর থেকে বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার লুকানিনকে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রযুক্তিগত গোপন তথ্য বিনিময়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত বছর তাকে সাড়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সেন্ট পিটার্সবার্গের আর্কটিক একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্রধান বিজ্ঞানী ভ্যালেরি মিটকো ২০২০ সালে চীনের সঙ্গে গোপন তথ্য বিনিময়ের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এরপর দুই বছর পর গৃহবন্দী অবস্থায় ৮১ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত