Ajker Patrika

বাংলাদেশ নিয়ে ইইউ এমপিদের সেই চিঠির ৩ বিষয় আমলে নিয়েছেন বোরেল

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ২২: ১৩
বাংলাদেশ নিয়ে ইইউ এমপিদের সেই চিঠির ৩ বিষয় আমলে নিয়েছেন বোরেল

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। গত ১২ জুন লেখা সেই চিঠিতে সম্ভব হলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। 

বহুল আলোচিত সেই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল। আগামী দিনগুলোতে এ তিনটি বিষয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে জিওপলিটিক্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

আজ শুক্রবার জিওপলিটিক্সে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন শুরুর দুই দিন আগে ৬ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে জোসেপ বোরেল তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিেন। ওই চিঠিতেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং ইইউর নজরে আসন্ন নির্বাচন
জোসেপ বোরেল নিশ্চিত করেছেন, তাঁর অফিস আসন্ন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবাইকে রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির নাম উল্লেখ না করে প্রধান দলগুলোর মধ্যে একটি ‘অকৃত্রিম সংলাপের’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বোরেল মত দিয়েছেন—গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুধু সংসদীয় নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নাগরিক সমাজের জন্য পর্যাপ্ত স্থান নিশ্চিতসহ মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেকোনো মূল্যে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। 

মানবাধিকারে বিশেষ গুরুত্ব
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রায় ২৩ বিলিয়ন ইউরোর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার হলো ইউরোপের দেশগুলো। 

এ অবস্থায় ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশ জিএসপি (বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) সুবিধা হারাতে চললেও বাংলাদেশি উৎপাদকেরা ২০২৪ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জিএসপি-প্লাস সুবিধা চেয়েছেন। 

বোরেলের চিঠি অনুসারে, জিএসপি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ‘১৫টি মূল নীতি’র মধ্যে বর্ণিত মৌলিক মানব ও শ্রম অধিকারের নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন শিগগির এ বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করবে। 

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সেই ১৫টি মূল নীতির মধ্যে মানবাধিকার-বিষয়ক নীতি অন্তর্ভুক্ত আছে সাতটি। এগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) বিষয়টি। এই চুক্তির ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং সুযোগ থাকবে। অনুচ্ছেদ-২-এ উল্লেখিত কোনো পার্থক্য এবং অযৌক্তিক বিধিনিষেধ ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ভোট দেওয়া এবং নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবার সমানাধিকার থাকবে। ভোটারদের স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছায় ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাসহ এই ভোট গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছিল, সহিংসতা নির্বাচনের দিনটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং নির্বাচনটির পুরো প্রক্রিয়ায় একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারসহ ভোট প্রদানও কলঙ্কিত হয়েছে। 

তাই বিবৃতি অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে গত দুটি নির্বাচনকে ‘প্রকৃত পর্যায়ক্রমিক নির্বাচন’ হিসেবে বিবেচনা করছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া ওই নির্বাচনগুলোতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বাস্তবায়ন না হওয়া ছাড়াও ভোটারদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। 

এ অবস্থায় ২০২৪ সালের আসন্ন নির্বাচনটি যদি গত দুটি নির্বাচনের মতো হয়, তাহলে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যে দেশ নাগরিক, রাজনৈতিক এবং মৌলিক মানবাধিকার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিকে সম্মান করে না। 

বোরেলের চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভরিথিং বাট আর্মসে (ইবিএ) বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে। একই ধরনের পরিণতি হতে পারে ইউরোপের বাজারগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও।

আছে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গও
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে খুব বেশি আলোচিত না হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। ২০১৮ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য একটি সময় কারাগারে কাটানোর পর থেকেই নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি।

চিঠিতে জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া তিনি সম্ভাব্য সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন কি না, সেই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় আইনের শর্ত জুড়ে দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে বাধা দিচ্ছে। তাঁর স্বাস্থ্যের যেকোনো বড় অবনতি দেশকে সহিংস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন এবং তাঁর বিপুল অনুসারী রয়েছে। 

আরও উল্লেখ আছে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকার যেসব আইনকে সামনে আনছে, তা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েও উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২২ সালে তিনি ব্যাংককে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত