১৪০০ কোটি ডলারের অনলাইন ‘কেলেঙ্কারিতে মিয়ানমার জান্তা’ 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ০৭
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৩৯

চীনা সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের শান রাজ্যে পরিচালিত ‘অনলাইন কেলেঙ্কারি সিন্ডিকেটগুলো’ বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার আয় করছিল। দেশটির সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় রাজ্যর চারটি পরিবার ওই সিন্ডিকেট পরিচালনা করত। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াইরত একটি বিদ্রোহী আদিবাসী সেনা কমান্ডার এমনটি বলেছেন। 

মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) নেতা পেং ডেরেন নববর্ষের বার্তায় সমর্থকদের এমনটি জানান। মিয়ানমারের স্বাধীন সংবাদ সংস্থা ‘দ্য ইরাবতী’ এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করেছে। 

জোট এবং জান্তা বলেছে, সম্মিলিতভাবে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এই সপ্তাহে কোকাং অঞ্চলের প্রধান শহর এবং অনলাইন কেলেঙ্কারির অভিযানের কেন্দ্রস্থল লাউকাইয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ের পরে তাঁরা এ নিয়ন্ত্রণ নেন। শত শত জান্তা অফিসার এবং সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানা গেছে। 

লাউকাইয়ের অনলাইন কেলেঙ্কারি কেন্দ্রগুলোতে কাজ করা পাঁচ শতাধিক থাই নাগরিক, যারা লাউকাইং নামেও পরিচিত, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লড়াইয়ের স্থবিরতার সময় তাঁদের উদ্ধার এবং নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭৪ জন মানব পাচারের শিকার হন বলে জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। 

দ্য ইরাবতী বিদ্রোহী সেনা পেংকে উদ্ধৃত করে জানায়, চারটি বড় পরিবার ওই এলাকায় শতাধিক অনলাইন কেলেঙ্কারি চালাত। যেগুলো ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স আক্রমণের আগে লক্ষাধিক লোককে এসব কেলেঙ্কারির কাজ করাতে বাধ্য করা হতো। 

কেলেঙ্কারি কেন্দ্রের বেশির ভাগ কর্মচারী চীনের নাগরিক বা চীনা ভাষায় কথা বলতেন; কারণ, কেলেঙ্কারির লক্ষ্য ছিল মূলত চীনা জনগণ, যাদের বিলিয়ন ডলারের প্রলোভন দেখিয়ে এসব কাজে জড়ানো হতো। 

চীনা মিডিয়া এই সপ্তাহে জানিয়েছে, অভিযান দমনে বেইজিংয়ের চাপে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার ও বাস্তুচ্যুতকরণ বাড়িয়েছে। গত বছরে প্রায় ৪১ হাজার সন্দেহভাজনকে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

মিয়ানমারের শান রাজ্যের লাউকাই এলাকা

পালিয়েছে মূল হোতারা
কর্মচারীদের উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ধরা যায়নি এই অনলাইন কেলেঙ্কারি চক্রের মূল হোতাদের। আক্রমণের সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে অপরাধ সিন্ডিকেটের নেতাদের শহর থেকে উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন বিদ্রোহী নেতা পেং। 

তিনটি আদিবাসী সেনা সংগঠন নিয়ে গঠিত ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের একটি এমএনডিএএ। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য থেকে জান্তা সৈন্যদের তাড়ানোর জন্য তাঁরা গত বছরের ২৭ অক্টোবর অপারেশন-১০২৭ শুরু করে।

বাই, ওয়েই এবং দুটি লিউ গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে পেং বলেন, যে চারটি পরিবার সিন্ডিকেট চালায়, তাঁরা জান্তা দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। 

তাঁদের পিতৃপুরুষেরা হলেন বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত কোকাং অঞ্চলের সাবেক চেয়ারম্যান বাই সুচেং, কোকাং বর্ডার গার্ড ফোর্সের নেতা ওয়েই সান, জান্তা-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক আইনপ্রণেতা লিউ গুওক্সি এবং লাউক্কাইয়ের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি লিউ ঝেংজিয়াং। 

পেং বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং এই চারটি পরিবার কোকাংয়ে ২০০৯ সাল থেকে মাদক উৎপাদন এবং সাইবার অপরাধকে বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এই অঞ্চলকে সাইবার অপরাধের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। 

সামরিক শাসনকে পরাজিত করার সঙ্গে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অপারেশন-১০২৭ এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল অনলাইন কেলেঙ্কারি সিন্ডিকেট নির্মূল করা। 

পেংয়ের অভিযোগের জবাবে জান্তাপন্থী সংবাদপত্রগুলো দাবি করেছে, অনলাইন কেলেঙ্কারি সিন্ডিকেট নেতাদের মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার দিয়ে লাউকাই থেকে উদ্ধার করার তথ্যটি মিথ্যা। 

তবে পেংয়ের অভিযোগের আগেই মিয়ানমারের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, অপারেশন-১০২৭ চলাকালে নেতৃস্থানীয় কোকাং ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করে রাজধানী নেপিদোতে নেওয়া হয়েছে। 

চিন্তিত থাইল্যান্ড
লাউক্কাইতে ব্যাপক অভিযানের মধ্যে রয়্যাল থাই আর্মির জয়েন্ট অপারেশন ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাক্কাপং জানপেংপেন গত ২৭ ডিসেম্বর নেপিদোতে মিয়ানমারের জান্তা নেতা মিন অং হ্লাইংয়ে সঙ্গে দেখা করেন। 

উত্তরের শান রাজ্যের অনলাইন কেলেঙ্কারি সিন্ডিকেটগুলো মিয়ানমার-থাই সীমান্তের তাক প্রদেশে স্থানান্তরিত হবে—এমন উদ্বেগের মধ্যে বৈঠকটি হয়েছিল। 

দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, মিয়ানমারের কারেন রাজ্যের মায়াওয়াডির কাছে লিউ এবং বাই গোষ্ঠীর ক্যাসিনো এবং অনলাইন কেলেঙ্কারির সিন্ডিকেট পরিচালনার আবাসন রয়েছে। এই এলাকায় জান্তাপন্থী কারেন বর্ডার ফোর্স সক্রিয়। 

মায়াওয়াডির দক্ষিণ এবং উত্তরে অবস্থিত দুটি চীনা বিনিয়োগের নতুন শহর প্রকল্প ‘কেকে পার্ক এবং শ্বে কোকো’ অনলাইন জুয়া, সাইবার স্ক্যাম এবং মানব পাচারের জন্য কুখ্যাত কেন্দ্র। 

কেকে পার্ককে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম সাইবার জালিয়াতির কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করে পেং বলেছেন, জান্তা এখনো কেকে পার্ককে নিয়ন্ত্রণ করছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত