গণতন্ত্রের জন্য দুর্ধর্ষ গেরিলা নেতায় পরিণত হলেন মিয়ানমারের এক কবি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ২০: ১৪
Thumbnail image

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৩ সালে রসায়নে স্নাতক মং সাংখা কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন স্কুল জীবনেই। ২০১৫ সালে একটি কবিতার জন্য তাঁকে জেলেও ঢুকিয়েছিল মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তা সরকার। 

এরপর দেশটিতে আরও বহু ঘটনা ঘটে গেছে। ক্ষমতায় এসেছে সুকির নেতৃত্বাধীন এনএলডি। জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাংখা। রোহিঙ্গা নির্যাতনের জেরে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সরকারেরও পতন ঘটেছে দেশটির সামরিক বাহিনীর একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। 

ঘটনার এই সব পরম্পরায় সাংখা এখন একটি গেরিলা দলের নেতা। অনুগত যোদ্ধাদের নিয়ে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে মিয়ানমারের জান্তা সেনাদের বিরুদ্ধে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ পরিচালনা করছেন তিনি। প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরও বড় লড়াইয়ের। 

শুক্রবার রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে কবি থেকে গেরিলা নেতায় পরিণত হওয়া মং সাংখা অন্যতম। তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গেরিলা বাহিনী জান্তা সরকারকে সরাসরি মোকাবিলার জন্য বর্তমানে মিয়ানমারের মধ্যবর্তী অঞ্চলগুলোতে আস্তানা গাড়ার পরিকল্পনা করছে। 

 ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে বামার পিপলস লিবারেশন আর্মি (বিপিএলএ) নামে ওই গেরিলা দলটি গড়ে তুলেছিলেন সাংখা। জান্তাদের মোকাবিলা করার জন্য বর্তমানে এই দলটি মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অবস্থান করে মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি খণ্ড খণ্ড যুদ্ধেও অংশ নিচ্ছে। 

থাইল্যান্ডের কাছাকাছি সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় মং সাংখা জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁর বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে চায়। মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট) নেতৃত্বে শত শত গণতন্ত্রকামী মিলিশিয়া দলের সমন্বয়ে পিডিএফ গড়ে উঠেছে। 

মিয়ানমারভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির দেওয়া তথ্যমতে, সাংখার নেতৃত্বাধীন বিপিএলএ বাহিনীতে ১ হাজারেরও বেশি যোদ্ধা রয়েছেন। এ হিসেবে মিয়ানমারে নব্য গেরিলা দলগুলোর মধ্যে তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি যোদ্ধা রয়েছে। 

বিপিএলএ-এর এমন উত্থান মূলত সাংখার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই। অন্যান্য সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। মিয়ানমারে ক্যু হওয়ার আগে কবি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সাংখা। শুধু তাই নয়, একজন অধিকারকর্মী হিসেবে দেশটির সামরিক বাহিনী সহ নির্বাচিত সরকারেরও তীব্র সমালোচক ছিলেন তিনি। 

জানা যায়, ২০১৫ সালে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কবিতা লিখে জেলে যাওয়ার সময় সুকির নেতৃত্বাধীন এনএলডি দলের যুব শাখার সভ্য ছিলেন সাংখা। ২০১৬ সালে এনএলডি ক্ষমতায় আসার পর জেল থেকে মুক্তি পান তিনি। যদিও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর জের ধরে ২০১৮ সালেই দল থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৬ সালে জেল থেকে মুক্তির পর প্রেমিকার সঙ্গে মং সাংখা। ছবি: সংগৃহীত

 ২০২১ সালে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ক্যু ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার পর দেশজুড়ে শুরু হওয়া আন্দোলন সংগ্রামে মিশে গিয়েছিলেন মং সাংখা। আন্দোলনকারীদের ওপর জান্তা সরকারের অনমনীয় আচরণ দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শুধু মুখের প্রতিবাদে কাজ হবে না। অভ্যুত্থানের দুই মাসের মধ্যেই তিনি বিপিএলএ গেরিলা দলটি গঠন করেন এবং বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই লড়াই করে আসা দলগুলোর কাছে প্রশিক্ষণের জন্য সহযোগিতা চান। 

শুরুর দিকে কাঠের তৈরি কিছু বন্দুক এবং এয়ারগানই ছিল সাংখার বাহিনীর ভরসা। তবে বর্তমানে এম ১৬ এবং একে-৮১ এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রও তাঁদের সংগ্রহে আছে। এ ছাড়া অপারেশন চালাতে গিয়ে অন্যান্য দলগুলোর কাছ থেকেও তারা অস্ত্র ধার করেন। 

মিত্র দলগুলোর কাছ থেকে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতা পেলেও মং সাংখা জানিয়েছেন মূলত ডোনেশানের মাধ্যমেই তাদের ব্যয় নির্বাহ হয়। অন্যান্য গেরিলা দল আয়ের জন্য মাদক পাচারের মতো বিষয়ে জড়িত হলেও বিপিএলএ এসব থেকে দূরে থাকে। ডোনেশান ছাড়া নিজেদের ব্র্যান্ড চিহ্নিত হুডি পোশাক বিক্রি এবং সাংখার কবিতার বই বিক্রি করেও কিছু আয় হয় গেরিলা দলটির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত