নেপালে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে নিহত শতাধিক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ২৮
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ৫০

গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে নেপালে। এতে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এই দুর্যোগে নিখোঁজ রয়েছে বহু মানুষ। 

নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। 

এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ৯৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৮ জন নিখোঁজ এবং ১০০ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়। 

তবে কাঠমান্ডু পোস্ট তাঁদের স্থানীয় প্রতিনিধি, নেপাল পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ফোর্সের সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্যে নিশ্চিত করেছে দেশটিতে এই দুর্বিপাকে মৃতের সংখ্যা অন্তত ১১২। 

ভক্তপুরে একটি কুকুরকে উদ্ধার করছে স্থানীয় জনসাধারণ। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্টমৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এই অবিরাম বৃষ্টি আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে পুর্বাভাস আছে। দেশটির রাজধানী শহর কাঠমান্ডুর চারপাশের উপত্যকায় এই বন্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

নদীগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত হাজার হাজার বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বেশির ভাগ মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ঘর-বাড়ির ছাদে আটকে পড়া লোকজনের ভিডিও ফুটেজ উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। 

প্রবল বৃষ্টিতে কাঠমান্ডু উপত্যকার প্রায় সমস্ত নদী প্লাবিত হয়েছে। দেশের এই অংশে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। 

ভূমিধসে প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। কাঠমান্ডুর পূর্বে ভক্তপুরে ভূমিধসে একটি ভবন বিধ্বস্ত হলে এক সন্তানসম্ভবা নারী ও চার বছরের মেয়েশিশুসহ পাঁচজন মারা গেছে। এদিকে কাঠমান্ডুর পশ্চিমে অবস্থিত ঢাদিং নামের একটি এলাকায় ভূমিধসে চাপা পড়া একটি বাসের ভেতর থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাসটিতে চালকসহ ১২ জন ছিল বলে জানা গেছে। 

এদিকে দেশটির রাজধানী শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মাকওয়ানপুরে অল নেপাল ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ছয় খেলোয়াড় ভূমিধসে নিহত হয়েছেন। অন্যরা বানের জলে ভেসে গেছেন। 

অনেক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্ম হয়েছে এই দুর্বিপাকে। বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকা চারজন দক্ষিণ কাঠমান্ডু উপত্যকার নাকখু নদীর পানির তোড়ে ভেসে যান। 

কাঠমান্ডুর জলমগ্ন একটি সবজির বাজার। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট‘কয়েক ঘণ্টা ধরে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল তাঁরা, ‘জিতেন্দ্র ভান্দারি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, ‘কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।’ 

তবে নদীর ভাটিতে এদের তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে একজন এখনো নিখোঁজ। 

হারি ওম মালা নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও ট্রাকটি হারিয়েছেন। কাঠমান্ডুতে পানিতে ডুবে যায় ট্রাকটি। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় কেবিনে পানি ঢুকে পড়ে। আমরা লাফ দিয়ে বেরিয়ে কোনোমতে সাঁতার কেটে সেখান থেকে সরে আসি। কিন্তু আমার মানিব্যাগ, ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নদীতে ভেসে গেছে। আমার কাছে এখন কিছুই নেই। গোটা রাত প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাটাতে হয়েছে আমাদের।’ 

রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও নেপাল জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্তত ২০০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

সরকারের মুখপাত্র পৃথ্বী সুব্বা গুরুং রাষ্ট্রচালিত নেপাল টেলিভিশন করপোরেশনকে জানিয়েছেন, বন্যায় পানির পাইপগুলোও ভেঙে গেছে এবং টেলিফোন ও বিদ্যুতের লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ঢাদিংয়ে শনিবার ভূমিধসে আটকা পড়ে বাস। অসহায় যাত্রীদের তখন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্টরাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমটির মতে, ১০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের, অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে একত্র করা হয়েছে। 

নেপাল সরকার মানুষকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে আহ্বান জানিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কাঠমান্ডু উপত্যকায় রাতে সড়কভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বর্ষা নেপালে প্রতিবছর এমন ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস নিয়ে আসে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ঘটনা আরও তীব্র হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত