Ajker Patrika

ছোট দেশ বলে ভারত ধমক দেওয়ার লাইসেন্স পায়নি: চীন থেকে ফিরেই মুইজ্জু

অনলাইন ডেস্ক
ছোট দেশ বলে ভারত ধমক দেওয়ার লাইসেন্স পায়নি: চীন থেকে ফিরেই মুইজ্জু

চীনে পাঁচ দিনের হাই–প্রোফাইল রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরেই ভারতকে একহাত নিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। আজ শনিবার একটি প্রতিবাদ নোটে তিনি লিখেছেন, আমরা ছোট দেশ হতে পারি কিন্তু ‘এতে তারা আমাদের ধমক দেওয়ার লাইসেন্স পায় না’।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের কূটনৈতিক বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এর জেরে ওই তিন মন্ত্রীকেই বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে চীন থেকে ফিরেই আরও কঠোর বার্তা দিলেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু।

কোনো দেশের নাম না করে মুইজ্জু বলেছেন, ‘আমরা ছোট হতে পারি কিন্তু এতে তারা আমাদের ধমক দেওয়ার লাইসেন্স পেয়ে যায় না।’

মুইজ্জু গত বছরের নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সফরটিই করলেন চীনে। চীনে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর থেকে ফিরে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদিও আমাদের এই মহাসাগরে (ভারত মহাসাগর) ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে, আমাদের ৯ লাখ বর্গ কিলোমিটারের একটি বিশাল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। মালদ্বীপ এই মহাসাগরের সবচেয়ে বড় অংশের দাবিদার দেশগুলোর মধ্যে একটি।’

মুইজ্জু বলেন, ‘এই মহাসাগরটি একটি নির্দিষ্ট দেশের আওতাধীন নয়। এই মহাসাগরটি এটির সীমানার মধ্যে অবস্থিত সমস্ত দেশের অন্তর্গত।’

মুইজ্জু তাঁর বক্তব্যে কোনো দেশের নাম না করলেও এটি যে ভারতকে ইঙ্গিত করেই আপাত বিদ্রূপ, সেটি স্পষ্ট।

মালদ্বীপ সান অনলাইন পোর্টাল মুইজ্জুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলে, ‘আমরা কারও বাড়ির পেছনের উঠানে (অবস্থিত) নই। আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।’

চীন সফরের সময় মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের মধ্যে ২০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চীনের শীর্ষস্থানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দুই পক্ষ তাদের নিজ নিজ মূল স্বার্থ রক্ষায় একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।’

কোনো দেশের নাম না নিয়ে বিবৃতিতে মুইজ্জু বলেন, ‘চীন মালদ্বীপকে তার জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং জাতীয় মর্যাদা সমুন্নত রাখতে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, মালদ্বীপের জাতীয় অবস্থার সঙ্গে মানানসই উন্নয়ন পথের অন্বেষণকে সম্মান ও সমর্থন করে এবং মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগত হস্তক্ষেপের দৃঢ় বিরোধিতা করে।’

মালেতে অনুষ্ঠিত এই মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মুইজ্জু আরও বলেন, চীন তাঁর দেশের জন্য ১৩ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। এর সিংহভাগ মালেতে রাস্তা পুনর্নির্মাণে ব্যয় করা হবে। শনিবার মালেতে মেয়র নির্বাচন হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি রাজধানীর সাবেক মেয়র ছিলেন।

স্থানীয় নিউজ পোর্টাল সান অনলাইন মুইজ্জুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, অনুদানের প্রায় ১৩ কোটি ডলার উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করা হবে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হবে মালে শহরের রাস্তার উন্নয়নে।

এদিকে মালদ্বীপে চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়াং লিক্সিন বলেছেন, মালদ্বীপ যদি প্রেসিডেন্ট শির উদ্যোগের সঙ্গে সম্মত হয় তবে বেইজিংয়ের কাছ থেকে আরও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সমর্থন পাবে।

চীন সফরে মুইজ্জুর সঙ্গে ছিলেন ওয়াং। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপ ও চীনের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের তিনটি মূল কারণ রয়েছে: প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, প্রেসিডেন্ট শির উদ্যোগ এবং প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের ভিত্তিকে শক্তিশালী করা। এই ভিত্তির মাধ্যমে, আমি মনে করি, আমরা মালদ্বীপের জন্য উপকারী আরও প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’

ওয়াং বলেন, তৃতীয় বিষয়টি হলো, বিস্তৃত বিষয়ে পারস্পরিক পরামর্শ, যৌথ নির্মাণ এবং যৌথ স্বার্থের নীতি অনুসরণ করা। আমি মনে করি যে, এই তিনটি মূল কারণের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যতে একটি খুব ফলপ্রসূ এবং টেকসই সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে তিন মন্ত্রীর অবমাননাকর মন্তব্য এবং মালদ্বীপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ—এই দুটি ঘটনা মুইজ্জুর চীন সফরকে প্রভাবিত করেছে। ইইউ পর্যবেক্ষক মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালদ্বীপের ক্ষমতাসীন জোট প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপ (পিপিএম) এবং পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) ভারত–বিরোধী মনোভাব পোষণ করে এবং ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুইজ্জুকে জয়ী করতে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।

মুইজ্জুর বেইজিং সফরের সময়, দুই দেশ মালদ্বীপের রাসমলে ৩০ হাজার আবাসন ইউনিট নির্মাণের পাশাপাশি হুলহুমলেতে একটি সমন্বিত পর্যটন অঞ্চল গড়ে তুলতে ৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি মালদ্বীপের জাতীয় বিমান সংস্থাকে চীনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিতে একটি চুক্তি হয়েছে।

এ ছাড়া চীন ভিলিমালে একটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট তৃতীয় হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য অনুদান দেবে।

মালেতে ভারত–নির্মিত ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল দেশটির বৃহত্তম স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ৩০০ শয্যার হাসপাতালটি ১৯৯২ সালে নির্মাণ করেছিল ভারত। অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে চীন তখনো দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সফল উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। ২০১৮ সালে ভারতীয় সহায়তায় আরও ডায়াগনস্টিক এবং চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত