Ajker Patrika

স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদন

সিনথেটিক মাদকের উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমাচ্ছে মিয়ানমার, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে উদ্বেগ

আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫৭
ক্রিস্টাল মেথ ধরে আছেন থাইল্যান্ডের এক বাইকচালক। ছবি: এএফপি
ক্রিস্টাল মেথ ধরে আছেন থাইল্যান্ডের এক বাইকচালক। ছবি: এএফপি

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে সিনথেটিক মাদক জব্দের বিষয়টি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের মধ্যেও এ ধরনের মাদকের ব্যাপক উৎপাদনের খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমারের মাদক চক্রগুলো মেটাঅ্যামফিটামিন, এক্সট্যাসি, কেটামিন ও ইয়াবার (যা মেটাঅ্যামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সমন্বয়ে গঠিত) দাম কমিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আরও বেশি বেশি এসব মাদক সরবরাহ করছে।

মিয়ানমারের শান রাজ্য এই অঞ্চলের সিনথেটিক মাদকের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত। আর থাইল্যান্ড হলো গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (এই অঞ্চলটি থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল, লাওস ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে গঠিত) অঞ্চলের মাদক পরিবহনের প্রধান রুট।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের (ইউএনওডিসি) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, থাইল্যান্ডে ২০২৩ সালে ৬৪৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ২৬ দশমিক ৪ টন ক্রিস্টাল আইস জব্দ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে জব্দ করা হয়েছিল ৩৯৫ মিলিয়ন ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ১৭ দশমিক ৬ টন আইস।

থাইল্যান্ডের নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড (ওএনসিবি) জানিয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ। সে সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ছিল বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুত বর্ধনশীল ক্রিস্টাল মেথের বাজার। ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন মাদক জব্দের পরিমাণ ৮ গুণেরও বেশি বেড়েছিল।

থাইল্যান্ডের নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড জানিয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে থাই কর্তৃপক্ষ ৪৮৮ মিলিয়ন ইয়াবা ট্যাবলেট এবং প্রায় ১০ টন আইস জব্দ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, ‘আইস জব্দের পরিমাণ গত তিন বছরে ওঠানামা করছে...আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রথমে এগুলো দক্ষিণ থাইল্যান্ডে পাচার হচ্ছে। পরে সেখান থেকে তৃতীয় দেশে বিতরণের জন্য পাঠানো হচ্ছে।’

তারা আরও বলেছে, ‘মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ সাংগঠনিক অপরাধ চক্রগুলোকে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে দিয়েছে, যার ফলে অসীম পরিমাণ মাদক উৎপাদনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০১৯ সালে প্রায় ১৪০ টন বিভিন্ন ধরনের মেটাঅ্যামফিটামিন মাদক জব্দ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে ১৯০ টনে দাঁড়ায়। এতে আরও বলা হয়, মাদক চক্রগুলো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত নয়, এমন রাসায়নিক ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চক্রগুলো উচ্চতর বিশুদ্ধতার সিনথেটিক মাদক তৈরি করছে। ইউএনওডিসি বলেছে, ‘উৎপাদন বাড়ানোর কারণে, এক টনেরও বেশি মাদক পরিবহনকারী চালান এখন খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে।’ ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে ক্রিস্টাল মেথের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ হাজার মার্কিন ডলার ছিল। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ থেকে ৭ হাজার ডলারে।

পাচারকারীরা আগে সাধারণত মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের সীমান্ত ব্যবহার করে স্থলপথে মাদক পরিবহন করত। কিন্তু গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে অভিযান বাড়ানোর পর সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলো কৌশল পরিবর্তন করে সমুদ্রপথকে কাজে লাগাতে শুরু করে।

ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলো ক্রমশ স্থলভিত্তিক পাচার করিডরের সঙ্গে সমুদ্রপথের সংযোগ স্থাপন করছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, থাইল্যান্ড, চীন ও লাওস সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ চলমান থাকায় মাদক পাচার পরিস্থিতি শিগগির উন্নতির সম্ভাবনা কম।

২০২১ সালে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হটানোর পর থেকেই দেশটি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মেথ উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের শান রাজ্য এই মেথ উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। দেশটিতে যুদ্ধ চলমান থাকায় মাদকের বিরুদ্ধে জান্তা সরকারের অভিযান খুব কমই কাজে দিয়েছে।

মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলের প্রধান সো হুত ২০২৩ সালের জুনে একটি প্রতিবেদনে বলেন, মাদক-বাণিজ্য ধ্বংসের প্রচেষ্টা কোনো প্রভাব ফেলছে না। তিনি বলেন, ‘অসংখ্য মাদকাসক্ত, উৎপাদক, পাচারকারী এবং চক্রগুলোর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও বিচারের পরও মাদক উৎপাদন বা পাচার মোটেই কমেনি।’ ২০২৩ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান প্রকাশ করেন যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সশস্ত্র জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর একটি মাদক-বাণিজ্য থেকে লাভবান হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের সেন্ট্রাল নারকোটিকস ব্যুরোর (সিএনবি) তথ্য অনুসারে, সিঙ্গাপুরে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়া মাদকসেবীদের প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১ হাজার ৬২১ জন মেথ ব্যবহারকারী। ২০২২ সালে ১ হাজার ৪৫১ জন মেথ ব্যবহারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সিনথেটিক এই মাদক সিঙ্গাপুরের নতুন ও তরুণ মাদকসেবীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার করছেন। ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার ৯৫২ জন নতুন মাদকসেবীর মধ্যে ৫৯৯ জনই মেটাঅ্যামফিটামিন ব্যবহার করেছিলেন। যা আগের বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়া ২০ বছরের কম বয়সী মেথ ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বাড়ে।

সিঙ্গাপুরে আসক্তি নিয়ে কাজ করা মনোবিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু দা রোজা আশঙ্কা করেন, মাদকের সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ার কারণে গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সরবরাহ বাড়লে আপনি দেখবেন নতুন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বাড়ছে এবং বর্তমান ব্যবহারকারীরা মাদকের বাড়তি ডোজ কিনছে। এটি জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরিয়ায় একযোগে ৭০ স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অপারেশন হক-আই স্ট্রাইকে ব্যবহৃত একটি কেসি-১৩৫ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
অপারেশন হক-আই স্ট্রাইকে ব্যবহৃত একটি কেসি-১৩৫ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

সিরিয়ার পালমিরা শহরে মার্কিন বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আস্তানা লক্ষ্য করে সিরিয়াজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। এই অভিযানে জর্ডানের যুদ্ধবিমানও অংশ নিয়েছে।

মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় গেল রাত ২টা) ‘অপারেশন হক-আই স্ট্রাইক’ নামে এই অভিযান শুরু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে আইএসের অবকাঠামো ও অস্ত্রাগারসহ ৭০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

ফাইটার জেট, অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং আর্টিলারি ব্যবহার করে ১০০টিরও বেশি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভেদী গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, দেইর আজ-জোর প্রদেশে আইএসের অন্তত পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ওই অঞ্চলে ড্রোন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আইএসের এক শীর্ষ নেতাও রয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেমনটা কথা দিয়েছিলাম, আমাদের ওপর হামলাকারী খুনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা অত্যন্ত কঠোর প্রতিশোধ নিচ্ছি।’ তিনি উল্লেখ করেন, সিরিয়ার বর্তমান সরকার এই অভিযানে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিচ্ছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই অভিযানের লক্ষ্য স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এটি কোনো যুদ্ধের শুরু নয়—এটি প্রতিশোধের ঘোষণা। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যদি আপনি আমেরিকানদের লক্ষ্যবস্তু করেন, তবে আপনার বাকি জীবন এটা জেনে কাটাতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করবে।’

১৩ ডিসেম্বর পালমিরায় এক আইএস সদস্যের অতর্কিত হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন বেসামরিক দোভাষী নিহত হন। আহত হন আরও তিন সেনা। এক বছর আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর এটিই ছিল প্রথম কোনো হামলা, যাতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রাণহানি ঘটে।

সেন্টকমের দাবি, ওই হামলাকারী একজন আইএস সদস্য ছিলেন। পরে পাল্টা অভিযানে হামলাকারীকে হত্যা করা হয়।

২০২৪ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথে হাঁটছেন। গত নভেম্বরেই তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আসাদ-পরবর্তী সিরিয়া এখন আইএস দমনে আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাইওয়ানে মেট্রো স্টেশনে স্মোক বোমা ছুড়ে ছুরি হামলা, নিহত ৩

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের একটি ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের একটি ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে ছুরি হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি মেট্রো স্টেশনে স্মোক বোমা ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালান।

তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী চো জুং-তাই জানান, ২৭ বছর বয়সী সন্দেহভাজন হামলাকারী চাং ওয়েন প্রথমে তাইপের ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনে স্মোক বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করেন। এরপর তিনি কাছের আরেকটি স্টেশনে গিয়ে পথচারীদের ছুরিকাঘাত করতে থাকেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার পর বহুতল একটি ভবন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন সন্দেহভাজন ব্যক্তি। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। হামলার পেছনের উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কালো পোশাক ও বেসবল ক্যাপ পরা এক ব্যক্তি ব্যস্ত সড়কের ওপর স্মোক বোমা ছুড়ছেন। এরপর তাঁকে হাতে বড় ছুরি নিয়ে গাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়।

প্রধানমন্ত্রী চো বলেন, তাইপে মেট্রো স্টেশনটি একটি ব্যস্ত আন্ডারগ্রাউন্ড শপিং স্ট্রিটের সঙ্গে সংযুক্ত। সেখানেই প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি হামলাকারীকে থামানোর চেষ্টা করলে তাঁকে ভোঁতা কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

এরপর হামলাকারী আন্ডারগ্রাউন্ড শপিং সেন্টার দিয়ে পালিয়ে প্রায় ৮০০ মিটার দূরের ঝংশান স্টেশনে পৌঁছান। এরপর তিনি ঝংশান স্টেশনের বাইরে আবারও স্মোক বোমা ছোড়েন এবং ছুরিকাঘাত করে আরও কয়েকজনকে আহত করেন। পরে কাছের একটি বইয়ের দোকান ও ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ঢুকে পড়েন। পুলিশ স্থানটি ঘিরে ফেললে হামলাকারী ভবন থেকে পড়ে যান।

এদিকে হামলার পর মেট্রোতে (আন্ডারগ্রাউন্ড), রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী চো জুং-তাই। তিনি বলেছেন, ‘সন্দেহভাজন হামলাকারীর সম্পর্কে তদন্ত করে তার উদ্দেশ্য ও অন্য কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই চিংতেও ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগেও অপরাধের রেকর্ড ছিল এবং তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন।

তাইওয়ানে সহিংস অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে কম। এ ধরনের বড় হামলা সর্বশেষ ঘটে ২০১৪ সালে। তাইপের একটি মেট্রোতে (আন্ডারগ্রাউন্ড) এক ব্যক্তি চারজনকে হত্যা করেন। ওই ঘটনায় হামলাকারীকে দুই বছর পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুয়াশার কারণে পশ্চিমবঙ্গের জনসভায় গেলেন না নরেন্দ্র মোদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ঘন কুয়াশার কারণে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও, ভার্চুয়াল মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কৃষ্ণনগরে নির্বাচনী প্রচারের সুর বেঁধে দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ শনিবার নদীয়ার তাহেরপুরে বিজেপির জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি অনুপ্রবেশ ইস্যু থেকে শুরু করে ‘জঙ্গলরাজ’—একাধিক বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন।

সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টারটি প্রবল কুয়াশার কারণে তাহেরপুরের সভাস্থলে অবতরণ করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে কপ্টারটি কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে যায়। এরপর দমদম বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভার কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পৌঁছানোর আগে সভাস্থলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া চাকদহ সংলগ্ন এলাকায় ‘গো ব্যাক মোদী’ প্ল্যাকার্ড দেখা যাওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা বাংলা কব্জা করবে বলে স্থির করেছে, আর তৃণমূল তাদেরই পছন্দ করছে। অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে তারা আইনের বিরোধ করছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের বদলে ওরা মোদীকে “গো ব্যাক” বলছে। এটা তৃণমূলের আসল চেহারা।’

বাংলার মানুষের উদ্দেশে আবেগঘন বার্তায় মোদী বলেন, ‘তৃণমূল মোদীর বিরোধ করতে চাইলে করুক, কিন্তু রাজ্যের উন্নয়ন কেন আটকানো হচ্ছে? মোদীর বিরোধ করতে গিয়ে বাংলার মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পাপ করবেন না। ” তিনি বিহারের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে যেমন ‘জঙ্গলরাজ’ উপড়ে ফেলা হয়েছে, বাংলাতেও বিজেপি শান্তি ও উন্নয়ন ফেরাবে।’

এদিন রিমোটের মাধ্যমে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের কৃষ্ণনগর থেকে বড়জাগুলি পর্যন্ত প্রায় ৬৮ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তার উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে নদীয়ার এই নতুন সড়ক ব্যবস্থাকে উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভূমি এই বাংলা থেকেই ‘বিকশিত ভারতের’ মন্ত্র হিসেবে ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বামপন্থীদের ৩০ বছরের শাসনের সমালোচনা করে বলেন, তৃণমূল বামেদের সব খারাপ গুণগুলো গ্রহণ করে নিয়েছে, ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের অবদানের কথা স্মরণ করে শ্রীচৈতন্যদেব ও হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসামে মধ্যরাতে ট্রেনের ধাক্কায় ৭ হাতির মৃত্যু, রক্ষা পেলেন যাত্রীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২১
শুক্রবার গভীর রাতে হাতির পালের ওপর উঠে যায় এক্সপ্রেস ট্রেন। ছবি: এক্স
শুক্রবার গভীর রাতে হাতির পালের ওপর উঠে যায় এক্সপ্রেস ট্রেন। ছবি: এক্স

ভারতের আসাম রাজ্যের হোজাই জেলায় এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল সাতটি বন্য হাতি। গতকাল শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সাইরাং-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের সঙ্গে হাতির পালের এই ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনায় একটি হাতি গুরুতর জখম হয়েছে, যার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে রাজধানী এক্সপ্রেসের শক্তিশালী ইঞ্জিনসহ পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সত্ত্বেও ট্রেনের যাত্রীরা সবাই সুরক্ষিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের লামডিং ডিভিশনের অন্তর্গত যমুনামুখ-কামপুর সেকশনে শুক্রবার রাত ২টো ১৭ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও রেল সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় ১১-১২টি হাতির একটি পাল রেললাইন পার হচ্ছিল। ঘন কুয়াশা ও রাতের অন্ধকারের মধ্যে দ্রুতগতিতে থাকা সাইরাং-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসটি হাতির পালের ওপর উঠে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সাতটি হাতি এবং ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের দাবি, এই এলাকায় হাতির যাতায়াত থাকলেও ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো পর্যাপ্ত সতর্কতা ছিল না।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা কপিঞ্জলকিশোর শর্মা জানিয়েছেন, যে স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে কোনো নির্ধারিত ‘এলিফ্যান্ট করিডর’ ছিল না। তিনি বলেন, ‘চালক লাইনের ওপর হাতির পাল দেখতে পেয়েই দ্রুত আপৎকালীন ব্রেক কষেছিলেন। কিন্তু ট্রেনের গতিবেগ অত্যন্ত বেশি থাকায় এবং দূরত্ব কম হওয়ায় ধাক্কা এড়ানো সম্ভব হয়নি।’

রেল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ট্রেনের কোনো যাত্রী আহত হননি এবং লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করে লাইন সচল করার কাজ চলছে।

দুর্ঘটনাস্থলটি আসামের গুয়াহাটি থেকে ১২৬ কিলোমিটার দূরে হোজাই জেলায় অবস্থিত। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং বন দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আটকে পড়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রেলের পক্ষ থেকে দ্রুত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনার জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি দেশের রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের যাত্রাপথ রিশিডিউল করা হয়েছে এবং অনেক ট্রেনকে বিকল্প পথে চালানো হচ্ছে।

বন দপ্তরের বিশেষ দল ইতিমধ্যে মৃত হাতিগুলোর ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মৃত হাতিগুলোর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হাতির পাশাপাশি শাবকও থাকতে পারে। রেললাইনটি হাতির চলাচলের স্বাভাবিক পথ না হওয়া সত্ত্বেও কেন সেখানে হাতির পাল এল এবং চালকের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বন্য প্রাণীপ্রেমীরা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং রেললাইনের ধারে সেন্সর বা আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত