বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় মৃত্যুদণ্ড বয়ে বেড়ানো হাকামাদা নির্দোষ প্রমাণিত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ০৩
Thumbnail image

মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বেঁচে ছিলেন ৮৮ বছর বয়সী ইওয়াও হাকামাদা। বিবিসি জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার জাপানের একটি আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। কারণ, দীর্ঘ বছর পর প্রমাণ হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো বানোয়াট ছিল। 

বিবিসি জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন হাকামাদা। ১৯৬৮ সালে নিজের বস এবং বসের স্ত্রীসহ তাঁদের দুই কিশোর সন্তানকে হত্যা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি তদন্তকারীদের সন্দেহের কারণে হাকামাদার মামলাটি পুনরায় বিচারের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছিল। 

৫৬ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ড বহন করার ফলে হাকামাদার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তা বড় প্রভাব ফেলেছিল। ফলে নতুন করে যখন বিচার শুরু হয়, তত দিনে তিনি শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিলেন না। তারপরও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। 

হাকামাদার মামলাটি জাপানের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত আইনি কাহিনিগুলোর মধ্যে একটি। এই মামলা নিয়ে তাই মানুষের আগ্রহের সীমা ছিল না। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার দেশটির শিজুওকার আদালতে ৫০০ জনের জন্য নির্ধারিত বিচারকক্ষে প্রবেশের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন ছিল। 

বিবিসি জানিয়েছে, রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আদালত কক্ষের বাইরে থাকা হাকামাদার সমর্থকেরা সমস্বরে উল্লাস প্রকাশ করেন। 

মানসিক অবস্থা শোচনীয় হওয়ার কারণে সব ধরনের শুনানি থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন হাকামাদা। পুনরায় বিচার মঞ্জুর করা হলে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১৪ সাল থেকে তিনি তাঁর ৯১ বছর বয়সী বোন হিদেকোর তত্ত্বাবধানে বাস করছিলেন। 

সাবেক পেশাদার বক্সার হাকামাদা ১৯৬৬ সালে একটি মিসো (জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার) প্রসেসিং প্ল্যান্টে কাজ করতেন। সেবার টোকিওর পশ্চিমে শিজুওকায় অবস্থিত নিজ বাড়ি থেকে হাকামাদার নিয়োগকর্তা ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের দুই সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহগুলো উদ্ধারের সময় ওই বাড়িটিতে আগুন জ্বলছিল। তবে মৃতদেহ উদ্ধারের পর দেখা যায়, তাঁদের চারজনকেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল। 

কর্তৃপক্ষ পরে বসসহ তাঁর পরিবারকে হত্যা, তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগানো এবং ওই বাড়ি থেকে নগদ দুই লাখ ইয়েন চুরির দায়ে হাকামাদাকে অভিযুক্ত করে। প্রাথমিকভাবে হাকামাদা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময় মারধর এবং প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁর কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। দুই বছর পর এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে হাকামাদাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

কয়েক দশক ধরে চলা আইনি এই কাহিনিটি শেষ পর্যন্ত রক্তমাখা কিছু কাপড়ে এসে নিবদ্ধ হয়। হাকামাদার গ্রেপ্তারের এক বছর পর একটি মিসোর ট্যাংক থেকে ওই কাপড়গুলো উদ্ধার করা হয়েছিল এবং ওই কাপড়গুলোকেই তাঁর অপরাধের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। 

তবে বছরের পর বছর হাকামাদার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়ে আসছেন, ওই জামা-কাপড় থেকে উদ্ধার হওয়া ডিএনএ হাকামাদার সঙ্গে মেলে না। ফলে এগুলো অন্য কারোর হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। আইনজীবীরা এটাও বলেন, সেই সময়ের পুলিশ হয়তো এই প্রমাণ নিয়ে কোনো জালিয়াতি করেছে। 

হাকামাদার আইনজীবীদের এসব যুক্তি ২০১৪ সালে বিচারক হিরোকি মুরায়ামাকে সন্তুষ্ট করেছিল। পরে তিনি ‘উদ্ধার হওয়া পোশাকগুলো আসামির ছিল না’ বলে আদালতে ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি নির্দোষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন একজন ব্যক্তিকে জেলে বন্দী করে রাখারও বিরোধিতা করেন বিচারক। ফলে হাকামাদাকে জেল থেকে সেই বছর বোনের তত্ত্বাবধানে পাঠানো হয় এবং মামলাটি পুনঃ বিচারের নির্দেশ দেওয়া হয়। 

তবে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য মামলাটির পুনঃ বিচার শুরু হয় গত বছর। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে হাকামাদাকে নির্দোষ ঘোষণার মধ্য দিয়ে মামলাটির সমাপ্তি হয়েছে। 

পুনরায় বিচারে হাকামাদার আইনজীবীদের ডিএনএ যুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। তবে বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আরেকটি যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেছেন। কারণ, ঘটনার এক বছর পর মিজোর ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা কাপড়ের লাল দাগ রক্ত হতে পারে না। কারণ, এক বছর মিজোতে চুবিয়ে রাখলে কোনো কাপড়ের রক্তের দাগ আর লাল থাকবে না। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, চারজনের হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারীরা রক্তমাখা জামা উদ্ধারের মাধ্যমে একটি কারসাজি করেছিলেন। ফলে হাকামাদাকে নির্দোষ ঘোষণা করতে কোনো দ্বিধা করেননি বিচারক। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের পুনরায় বিচার জাপানে একটি বিরল ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হাকামাদার মামলাটি ছিল এই ধরনের পঞ্চম ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাপানই একমাত্র জি৭ দেশ, যেখানে এখনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁদের দণ্ড কার্যকরের বিষয়ে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত