সিল্ক রোডের ধারণা পাল্টে দেওয়া দুই শহর আবিষ্কার

অনলাইন ডেস্ক    
Thumbnail image
উজবেকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি অঞ্চল। ছবি: বিবিসি

উজবেকিস্তানের পাহাড়ি পূর্বাঞ্চলে দুটি মধ্যযুগীয় শহরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি এমন একটি আবিষ্কার যা সিল্ক রোড সম্পর্কে আমাদের অতীত ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে।

একসময় প্রাচ্য ও পশ্চিমের মধ্যে পণ্য ও চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদান হতো সিল্ক রোড ধরে। বহু বছর ধরে ধারণা করা হতো এই বাণিজ্য রুট নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন শহরকে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এখন অন্তত দুটি উচ্চভূমির শহর খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো ওই রুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে অবস্থান করছিল।

শহর দুটির মধ্যে একটির নাম তুগুনবুলাক। এই শহরটি কমপক্ষে ১২০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই শহরের উচ্চতা ছিল ৬ হাজার ৬০০ ফুটেরও বেশি। এই শহরেরই কাছাকাছি এলাকায় তাশবুলাক নামে অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি শহর ছিল।

নতুন শহর আবিষ্কারের বিষয়ে গবেষণা দলটির সদস্য প্রত্নতাত্ত্বিক ফারহোদ মাকসুদভ বলেন, ‘মধ্য এশিয়ার ইতিহাস এখন এই অনুসন্ধানের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে।’

গবেষক দলটি বিশ্বাস করে, তুগুনবুলাক এবং তাশবুলাক অষ্টম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলটি সে সময় একটি শক্তিশালী তুর্কি রাজবংশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।

শহর দুটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এতটাই ওপরে ছিল যে, বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ এই উচ্চতা বা তার চেয়েও বেশি উঁচুতে বসবাস করে। তিব্বতের লাসা এবং পেরুর কুসকো এ ধরনের উঁচু জনবসতির বিরল উদাহরণ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উজবেকিস্তানের ন্যাশনাল সেন্টার অব আর্কিওলজির পরিচালক ফারহোদ মাকসুদভ এবং সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল ফ্র্যাচেত্তি শহর দুটি আবিষ্কারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে তাঁদের এই সম্পর্কিত গবেষণাটি সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষক দলটি ২০১১ সালে পাহাড়ে ট্রেকিং করার সময় প্রথম তাশবুলাক শহরটি আবিষ্কার করেছিল। গবেষকেরা সেখানে সমাধিস্থল, হাজার হাজার মৃৎপাত্রের ভাঙা টুকরো এবং অন্যান্য চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিলেন। ঐতিহাসিক নথিপত্রে এই অঞ্চলের শহরগুলোর বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও গবেষক দলটি ধারণাও করেনি যে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ৬ হাজার ফুট ওপরে এমন একটি শহরের অস্তিত্ব তাঁরা খুঁজে পাবেন।

এই আবিষ্কারের বিষয়ে বিবিসিকে মাইকেল ফ্র্যাচেত্তি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম।’ তিনি জানান, এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে ট্রেকিং করাও খুব কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। এত উঁচুতে উঠতে গিয়ে গবেষকেরা প্রবল বাতাস, ঝড় এবং রসদ স্বল্পতার মুখোমুখি হয়েছিলেন।

প্রথম শহরটি আবিষ্কারের চার বছর পর স্থানীয় একজন বন প্রশাসক গবেষক দলটিকে তাশবুলাকের কাছাকাছি আরেকটি স্থান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার অনুরোধ করেন। কারণ তিনি তাঁর বাড়ির উঠোনে প্রায় সময় এক ধরনের ভাঙা সিরামিকের উপস্থিতি দেখতেন।

ফ্র্যাচেত্তি বলেন, ‘আমরা তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং আবিষ্কার করলাম তার বাড়িটি একটি মধ্যযুগীয় দুর্গের ওপর নির্মিত। তিনি একটি বিশাল শহরে বসবাস করছিলেন।’

তবে এই আবিষ্কারগুলোর মধ্যে গবেষক দলটির কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি ছিল—শহরগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে একাডেমিক সম্প্রদায়কে বোঝানো। এ অবস্থায় ২০২২ সালে দলটি একটি বিশেষায়িত ড্রোন নিয়ে ফিরে এসেছিল এবং এই ড্রোনের সাহায্যে তাঁরা তুগুনবুলাকের দেয়াল, গার্ড টাওয়ার, জটিল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য দুর্গ উন্মোচন করেছিলেন।

গবেষকেরা মনে করেন, লোহার আকরিক গলানোর জন্য শক্তিশালী বাতাসের বিপরীতে প্রয়োজনীয় আগুন জ্বালাতে তুগুনবুলাক এবং তাশবুলাকে বসতি স্থাপন করেছিল। প্রাথমিক খননে এ ধরনের নজির পাওয়া গেছে। ফারহোদ মাকসুদভ বলেন, ‘মধ্যযুগে যাদের হাতে লোহা ছিল, তারা খুব শক্তিশালী ছিল। তবে এই লোহা হয়তো তাঁদের পতনেরও কারণ ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত