Ajker Patrika

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, কার্যকর রোববার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৮
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ফিলিস্তিনিদের উল্লাস। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ফিলিস্তিনিদের উল্লাস। ছবি: এএফপি

টানা ১৫ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধে অবশেষে কার্যকর যুদ্ধবিরতি হতে চলেছে। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। আজ শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির একটি চুক্তি অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। আগামীকাল রোববার এই চুক্তি কার্যকর হবে।

কার্যালয় জানায়, নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তিটি অনুমোদন পাওয়ার পর পূর্ণ মন্ত্রিসভায় ছয় ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় নেতানিয়াহু সরকারের ২৪ মন্ত্রী চুক্তির পক্ষে ভোট দেন আর ৮ জন বিরোধিতা করেন। কয়েকজন মন্ত্রী এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁরা মনে করেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হামাসের কাছে আত্মসমর্পণের সমান।

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, চুক্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। হোয়াইট হাউস আশা করছে, যুদ্ধবিরতি রোববার সকালে শুরু হবে। রেড ক্রসের মাধ্যমে রোববার দুপুরে তিন নারী জিম্মিকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

হোয়াইট হাউসের পক্ষে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকগার্ক বলেন, ‘আমরা এই চুক্তির প্রতিটি বিবরণ সুনিশ্চিত করেছি। আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে এটি রবিবার কার্যকর হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে ছয় সপ্তাহে তিন ধাপে বন্দী বিনিময় হবে। প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন বন্দীকে মুক্তি দেবে। তাঁদের মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ রয়েছেন।

ইসরায়েলও চুক্তির আওতায় সব ফিলিস্তিনি নারী এবং ১৯ বছরের কম বয়সী শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে। প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৬৫০–এর মধ্যে হতে পারে।

গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় রোববার মুক্তি পেতে যাওয়া ৯৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর নাম ঘোষণা করে। ম্যাকগার্ক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ৭ দিন পর আরও চারজন নারী জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর পর প্রতি সাত দিন অন্তর তিনজন করে জিম্মি মুক্তি পাবে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মতি জানানোর পরও গাজায় ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজার চিকিৎসকেরা জানান, আজ শনিবার ভোরে খান ইউনিসের পশ্চিমে মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বুধবার চুক্তি ঘোষণার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৯-এ দাঁড়াল।

কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি বন্ধ হবে। ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার এবং গাজার জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির পথ খুলে দেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, চুক্তি কার্যকর হলে গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকায় হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন সেনা ও বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং ২৫০ জনকে বন্দী করে। এর পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২৩ লাখ। অন্যদিকে জিম্মিদের অনেককেই মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গাজায় হামাসের কাছে এখনো ৯৮ জন জিম্মি জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত