অনলাইন ডেস্ক
মিয়ানমারের রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাজ্যটির অধিকাংশই দখলে নিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে দেশটির জান্তা বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এটি স্পষ্ট যে, আরাকান অবশেষে গণহত্যাকারী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারপরনাই শঙ্কিত।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আরাকানে থেকে যাওয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গা গণহত্যা, জোরপূর্বক স্থানান্তর, নির্যাতন, ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার ও আটক, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং আরও বহু ধরনের নৃশংসতার শিকার হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) হাতে তারা এই দমনপীড়ন ভোগ করছে এবং দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে আটকে পড়েছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহর মংডু ও বুথিডং পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং সেখানকার রোহিঙ্গাদের জোর করে উচ্ছেদ ও অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, বাংলাদেশ সীমান্ত কঠোরভাবে বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গারা পালিয়েও যেতে পারছে না।
আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে তাদের নির্যাতন করত। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরাকানে আরাকান আর্মি (এএ) আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে।
বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশ্নই সামনে হাজির করে যে, আরাকান আর্মি যে ‘আরাকান ড্রিমের’ কথা বলে, তা কি শুধুই রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য? যদি ‘আরাকান ড্রিম’ সত্যিই আন্তরিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, তাহলে আরাকান আর্মি অবশ্যই রোহিঙ্গা এবং আমাদের স্বদেশের অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে হবে এবং একসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
কিন্তু আরাকান আর্মি তা করছে না। বরং রোহিঙ্গা বেসামরিক লোকদের ওপর তার নৃশংসতা বাড়িয়ে তুলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের প্রকৃত পরিচয়—আরাকানের স্থানীয় জনগোষ্ঠী—হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে।
তাহলে আসুন, ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই এবং বুঝি কীভাবে আমরা এই অবস্থায় পৌঁছেছি। প্রকৃতপক্ষে, চলমান সংকট গত বছর শুরু হয়নি। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা হলো—কয়েক দশক ধরে চলা একটি পদ্ধতিগত ও সহিংস নির্যাতন, বৈষম্য এবং মিয়ানমারে সামাজিক জীবনের সব দিক থেকে তাদের বাদ দেওয়ার ফল। একই সঙ্গে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তাও এই অবস্থার জন্য দায়ী।
আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, আমাদের অতীত সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি, যাতে আমরা বর্তমান দেখতে পারি এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি ভালোভাবে। ইতিহাস বলে, চলতি শতকের শুরুর দিকে অং সান সু কি যে ‘পেংলং সম্মেলন’ ডেকেছিলেন তাতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কয়েক শ সংখ্যালঘু প্রতিনিধি—যাদের মধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের নেতারাও ছিলেন—এতে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রায় ১ হাজার প্রতিনিধি সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু উত্তরের আরাকানে মুসলমানদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করা হয়নি, কারণ সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সমস্যাকে একটি গুরুতর বিষয় বা ‘জাতিগত’ প্রশ্ন হিসেবে দেখেনি। আরাকানে মুসলিম সংখ্যালঘু ও জাতিগত রাখাইনদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল। কিন্তু অং সান সু চি চুপ ছিলেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রার্থী তালিকায় কোনো মুসলিম ছিল না।
২০১৬ সালের আগস্টের শেষদিকে অং সান সু চি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে একটি নতুন উপদেষ্টা কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু কফি আনান এই সংকট সমাধান করতে পারেননি; তাঁর দায়িত্ব ছিল কেবল পরামর্শ দেওয়া।
এদিকে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধ রাজনীতিবিদরা এই কমিশনের বিরোধিতা করেছিল। রাখাইন বৌদ্ধ রাজনীতিবিদরা বলেছিল, তারা কমিশনের কাজ বয়কট করবে কারণ তারা বর্তমান দমনমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের ‘রাষ্ট্রহীন’ করে তোলা, সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এনএলডি পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে কমিশন গঠন করেছিল।
২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট কমিশন তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেদিন আরাকানজুড়ে কমিশনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হয়। এতে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহানুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছিল। কমিশন যা সুপারিশ করেছিল, সরকার তা উপেক্ষা করে। কফি আনান কমিশনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করেননি অং সান সু চি। ফলে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল; নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
২০১৭ সালে অং সান সু কি-র শাসনামলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করেছিল। তারা হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক করেছিল এবং শত শত বেসামরিক মানুষের ওপর অকথ্য নৃশংসতা চালিয়েছিল। এই অভিযান রোহিঙ্গা জনগণকে ধ্বংস ও ভীতসন্ত্রস্ত করার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল। তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সম্পদ লুট করা হয়েছিল, যাতে তারা মিয়ানমার ছেড়ে চলে যায়।
রোহিঙ্গারা একে একে পালিয়েছিল, পরে দলবদ্ধভাবে। ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ বাঁশের ভেলায় নাফ নদী পাড়ি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সহায়তায় বাংলাদেশ অবশেষে শরণার্থীদের গ্রহণ করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কিছু বলেনি। রোহিঙ্গারা সবকিছু হারিয়েছে। তাদের সন্তানরা শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ হারিয়েছে। এক প্রজন্ম অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে।
গণহত্যার কয়েক দশক পর, আজ আরাকানে থাকা রোহিঙ্গাদের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি একটি গুরুতর ও জরুরি অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশঙ্কা করি, এএ-র উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গাদের কঠোর বন্দিদশায় রেখে অভুক্ত করে তোলা, যাতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়; আরাকান রোহিঙ্গাশূন্য হয় এবং তাদের জায়গায় জাতিগত রাখাইনদের বসতি স্থাপন করা যায়।
একই সময়ে, প্রতিবেশী দেশ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষক হিসেবে বাংলাদেশকেও মিয়ানমারের কাছে কঠোর প্রশ্ন তুলতে হবে। যদি বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাহলে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যামূলক ও আগ্রাসী নীতিমালা ও আক্রমণ হ্রাস পেতে পারে। তখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে কিছুটা নিরাপত্তার সঙ্গে বাস করতে পারবে অথবা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য আলোচনা শুরু হতে পারে।
আসুন, আমরা এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং ভুক্তভোগীদের জন্য একটি পথ খুঁজে বের করি। এটি এই দশকের সবচেয়ে বড় মানবিক ট্র্যাজেডি। মিয়ানমারে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ার কয়েক দশক পরে, সবচেয়ে প্রান্তিক ও দুর্বলদের রক্ষার জন্য আসুন এখনই পদক্ষেপ নিই, এর আগে যে দেরি হয়ে যায়।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস ফর বার্মা থেকে অনূদিত
মিয়ানমারের রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাজ্যটির অধিকাংশই দখলে নিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে দেশটির জান্তা বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এটি স্পষ্ট যে, আরাকান অবশেষে গণহত্যাকারী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারপরনাই শঙ্কিত।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আরাকানে থেকে যাওয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গা গণহত্যা, জোরপূর্বক স্থানান্তর, নির্যাতন, ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার ও আটক, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং আরও বহু ধরনের নৃশংসতার শিকার হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) হাতে তারা এই দমনপীড়ন ভোগ করছে এবং দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে আটকে পড়েছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহর মংডু ও বুথিডং পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং সেখানকার রোহিঙ্গাদের জোর করে উচ্ছেদ ও অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, বাংলাদেশ সীমান্ত কঠোরভাবে বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গারা পালিয়েও যেতে পারছে না।
আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে তাদের নির্যাতন করত। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরাকানে আরাকান আর্মি (এএ) আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে।
বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশ্নই সামনে হাজির করে যে, আরাকান আর্মি যে ‘আরাকান ড্রিমের’ কথা বলে, তা কি শুধুই রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য? যদি ‘আরাকান ড্রিম’ সত্যিই আন্তরিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, তাহলে আরাকান আর্মি অবশ্যই রোহিঙ্গা এবং আমাদের স্বদেশের অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে হবে এবং একসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
কিন্তু আরাকান আর্মি তা করছে না। বরং রোহিঙ্গা বেসামরিক লোকদের ওপর তার নৃশংসতা বাড়িয়ে তুলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের প্রকৃত পরিচয়—আরাকানের স্থানীয় জনগোষ্ঠী—হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে।
তাহলে আসুন, ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই এবং বুঝি কীভাবে আমরা এই অবস্থায় পৌঁছেছি। প্রকৃতপক্ষে, চলমান সংকট গত বছর শুরু হয়নি। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা হলো—কয়েক দশক ধরে চলা একটি পদ্ধতিগত ও সহিংস নির্যাতন, বৈষম্য এবং মিয়ানমারে সামাজিক জীবনের সব দিক থেকে তাদের বাদ দেওয়ার ফল। একই সঙ্গে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তাও এই অবস্থার জন্য দায়ী।
আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, আমাদের অতীত সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি, যাতে আমরা বর্তমান দেখতে পারি এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি ভালোভাবে। ইতিহাস বলে, চলতি শতকের শুরুর দিকে অং সান সু কি যে ‘পেংলং সম্মেলন’ ডেকেছিলেন তাতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কয়েক শ সংখ্যালঘু প্রতিনিধি—যাদের মধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের নেতারাও ছিলেন—এতে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রায় ১ হাজার প্রতিনিধি সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু উত্তরের আরাকানে মুসলমানদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করা হয়নি, কারণ সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সমস্যাকে একটি গুরুতর বিষয় বা ‘জাতিগত’ প্রশ্ন হিসেবে দেখেনি। আরাকানে মুসলিম সংখ্যালঘু ও জাতিগত রাখাইনদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল। কিন্তু অং সান সু চি চুপ ছিলেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রার্থী তালিকায় কোনো মুসলিম ছিল না।
২০১৬ সালের আগস্টের শেষদিকে অং সান সু চি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে একটি নতুন উপদেষ্টা কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু কফি আনান এই সংকট সমাধান করতে পারেননি; তাঁর দায়িত্ব ছিল কেবল পরামর্শ দেওয়া।
এদিকে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধ রাজনীতিবিদরা এই কমিশনের বিরোধিতা করেছিল। রাখাইন বৌদ্ধ রাজনীতিবিদরা বলেছিল, তারা কমিশনের কাজ বয়কট করবে কারণ তারা বর্তমান দমনমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের ‘রাষ্ট্রহীন’ করে তোলা, সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এনএলডি পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে কমিশন গঠন করেছিল।
২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট কমিশন তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেদিন আরাকানজুড়ে কমিশনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হয়। এতে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহানুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছিল। কমিশন যা সুপারিশ করেছিল, সরকার তা উপেক্ষা করে। কফি আনান কমিশনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করেননি অং সান সু চি। ফলে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল; নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
২০১৭ সালে অং সান সু কি-র শাসনামলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক অভিযান শুরু করেছিল। তারা হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক করেছিল এবং শত শত বেসামরিক মানুষের ওপর অকথ্য নৃশংসতা চালিয়েছিল। এই অভিযান রোহিঙ্গা জনগণকে ধ্বংস ও ভীতসন্ত্রস্ত করার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল। তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সম্পদ লুট করা হয়েছিল, যাতে তারা মিয়ানমার ছেড়ে চলে যায়।
রোহিঙ্গারা একে একে পালিয়েছিল, পরে দলবদ্ধভাবে। ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ বাঁশের ভেলায় নাফ নদী পাড়ি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সহায়তায় বাংলাদেশ অবশেষে শরণার্থীদের গ্রহণ করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কিছু বলেনি। রোহিঙ্গারা সবকিছু হারিয়েছে। তাদের সন্তানরা শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ হারিয়েছে। এক প্রজন্ম অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে।
গণহত্যার কয়েক দশক পর, আজ আরাকানে থাকা রোহিঙ্গাদের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি একটি গুরুতর ও জরুরি অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশঙ্কা করি, এএ-র উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গাদের কঠোর বন্দিদশায় রেখে অভুক্ত করে তোলা, যাতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়; আরাকান রোহিঙ্গাশূন্য হয় এবং তাদের জায়গায় জাতিগত রাখাইনদের বসতি স্থাপন করা যায়।
একই সময়ে, প্রতিবেশী দেশ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষক হিসেবে বাংলাদেশকেও মিয়ানমারের কাছে কঠোর প্রশ্ন তুলতে হবে। যদি বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাহলে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যামূলক ও আগ্রাসী নীতিমালা ও আক্রমণ হ্রাস পেতে পারে। তখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে কিছুটা নিরাপত্তার সঙ্গে বাস করতে পারবে অথবা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য আলোচনা শুরু হতে পারে।
আসুন, আমরা এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং ভুক্তভোগীদের জন্য একটি পথ খুঁজে বের করি। এটি এই দশকের সবচেয়ে বড় মানবিক ট্র্যাজেডি। মিয়ানমারে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হওয়ার কয়েক দশক পরে, সবচেয়ে প্রান্তিক ও দুর্বলদের রক্ষার জন্য আসুন এখনই পদক্ষেপ নিই, এর আগে যে দেরি হয়ে যায়।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস ফর বার্মা থেকে অনূদিত
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, মার্কিন কিছু পণ্যের ওপর নয়াদিল্লি যে ‘উচ্চ শুল্ক’ আরোপ করেছে, তার জবাবে তিনিও দেশটির পণ্যের ওপর সমান শুল্ক আরোপ করবেন। গত সোমবার ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজ বাসভবন মার-এ লাগোতে সাংবাদিকদের...
১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে প্রায় তিন বছর ধরে চলা ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ গত সোমবার তিনি
৩ ঘণ্টা আগেগতকাল মঙ্গলবার ট্রুডোর চারজন মন্ত্রী এ পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনের সঙ্গে এ পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। এই পরিকল্পনায় নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যতক্ষণ না ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা নিশ্চিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার সীমান্তে বাফার জোনে বিশেষ করে মাউন্ট হেরমনের চূড়ায় অবস্থান করবে। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম
৪ ঘণ্টা আগে