হিরোশিমার পর নাগাসাকিতেও পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪, ১৮: ৫৪

পৃথিবীতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ংকর দুটি পারমাণবিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে। মার্কিন বাহিনীর এই হামলায় দুটি শহরেই লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং এর মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল জাপান। 

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো—মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে সংঘটিত দুটি বোমা হামলারই মুখোমুখি হয়েছিলেন সুতোমো ইয়ামাগুচি নামে এক ব্যক্তি। দুটি হামলা থেকেই তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। 

হিস্টরি ডটকমের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমা শহরে যখন প্রথম বোমাটি ফেলা হয় সেই সময় একটি ব্যবসায়িক সফরে শহরটিতে অবস্থান করছিলেন ২৯ বছর বয়সী নৌ প্রকৌশলী ইয়ামাগুচি। তিন মাসের ওই সফরের মধ্যে ৬ আগস্টই ছিল তাঁর শেষ দিন। তাই হিরোশিমা ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। 

সেদিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে ইয়ামাগুচি তাঁর কোম্পানির শিপইয়ার্ডে পায়চারি করছিলেন। এমন সময়ই আকাশে একটি আমেরিকান বিমান থেকে প্যারাসুটের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ছোট বস্তু ফেলে দিতে দেখেন তিনি। আর এক মুহূর্তের মধ্যেই আকাশজুড়ে কুণ্ডলী পাকানো মাশরুম আকৃতির আগুন নজরে আসে তাঁর। এই আগুনকে পরবর্তীতে তিনি ম্যাগনেশিয়ামের বিশাল একটি বৈদ্যুতিক ঝলকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। 

ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পাশেই একটি খাদের মধ্যে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ইয়ামাগুচি। কিন্তু পৃথিবীর প্রথম বিস্ফোরিত সেই পারমাণবিক বোমাটির শক ওয়েভ এত শক্তিশালী ছিলে যে, খাদের ভেতর থেকে তাঁকে উড়িয়ে একটি আলু খেতের মধ্যে নিয়ে ফেলে। 

জ্ঞান ফেরার পর ইয়ামাগুচি দেখতে পান, চারপাশ অন্ধকার হয়ে আছে। এমনকি সকালের সূর্যটাও আর দেখা যাচ্ছে না। তাঁর মুখমণ্ডল ও বাহু মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল এবং দুটি কানেরই পর্দা ফেটে গিয়েছিল। 

অন্ধকারের মধ্যেই আহত শরীর নিয়ে সহকর্মীদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন ইয়ামাগুচি। পরে বেঁচে থাকা কয়েকজন এক হয়ে ট্রেন স্টেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ইয়ামাগুচি এভাবেই তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁর বাড়ি ছিল নাকাসাকি। তিন দিন পর ৯ আগস্ট সেখানেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটনায় মার্কিন বাহিনী। 

হিরোশিমা থেকে ইয়ামাগুচি নাগাসাকিতে পৌঁছান ৮ আগস্ট। তাঁর ক্ষত এতটাই গুরুতর ছিল যে, পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চিনতেই পারছিল না। পরের দিন অর্থাৎ ৯ আগস্ট আহত অবস্থায়ই নিজের অফিসে যান ইয়ামাগুচি। অফিস থেকে তাঁকে হিরোশিমায় কী ঘটেছিল সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করতে বলা হয়। তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় ভাবছিলেন, কী করে একটি বোমা পুরো একটা শহরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে! আর ঠিক এমন সময়ই কক্ষের বাইরে হঠাৎ উজ্জ্বল সাদা আলোর ঝলকানির মধ্য দিয়ে আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটে। 

শক ওয়েভের মুহূর্তে এবারও ইয়ামিগুচি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। শক ওয়েভে জানালার কাচগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বাতাসে উড়ে যায়। এমনকি ইয়ামাগুচির শরীরের ব্যান্ডেজগুলোও পর্যন্ত উড়িয়ে নিয়ে যায়। এবারও তিনি ক্যানসার সৃষ্টিকারী পারমাণবিক বোমার রেডিয়েশন দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে দ্য ইনডিপেনডেন্টকে ইয়ামাগুচি বলেছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, মাশরুমের মেঘ হিরোশিমা থেকে আমাকে অনুসরণ করেছে।’ 

রেডিয়েশনের প্রভাবে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইয়ামাগুচি। তবে ক্যানসার নিয়েও তিনি দীর্ঘ দিন বেঁচেছিলেন। ২০১০ সালে পাকস্থলীর ক্যানসারে ৯৩ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগের বছর ২০০৯ সালে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘পরপর দুইবার আমার রেডিয়েশনে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাটি এখন সরকারি নথিভুক্ত। এটি আমার মৃত্যুর পরও তরুণ প্রজন্মকে পারমাণবিক বোমার ভয়াবহ ইতিহাসের সাক্ষ্য দেবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত