দুটি আলাদা প্রজননে একই সঙ্গে ‘মা’ ও ‘বাবা’ হলেন এক চীনা নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৩২
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ০১
Thumbnail image
ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

একটি বিরল প্রজনন পরিস্থিতির অধিকারী দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ৫৯ বছর বয়সী এক নারী। একই সঙ্গে মা ও বাবা হয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন তিনি।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ওই নারী দুটি ভিন্ন বিবাহ থেকে দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম পুত্রের জন্ম দিয়েছেন একজন পুরুষের সঙ্গে এবং দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম দিয়েছেন একজন নারীর গর্ভে।

জানা গেছে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিশান কাউন্টির একটি গ্রামে বেড়ে ওঠা লিউ (কাল্পনিক নাম) ছোটবেলা থেকেই কিছুটা ভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করতেন। তিনি ছোট চুল রাখতেন এবং পুরুষদের পোশাক পরতেন। ফলে সমবয়সীদের চেয়ে তিনি সব সময়ই কিছুটা আলাদা ছিলেন। তাঁকে প্রায় সময়ই ছেলেদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হতো এবং তাঁর বিরুদ্ধে স্কুলে ছেলেদের টয়লেট ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছিল।

১৮ বছর বয়সে টাং নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন লিউ এবং এক বছরের মধ্যেই তাঁদের এক পুত্রসন্তান জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু এর কিছুদিন পর তাঁর শরীরে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দেয়। এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে তাঁর দাঁড়ি গজায়, স্তনের আকার ছোট হয়ে আসে এবং পুরুষাঙ্গের মতো শারীরিক গঠন দেখা যায়। এই পরিবর্তন লিউয়ের স্বামীর পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

বিবাহবিচ্ছেদের পর লিউ তাঁর ছেলেকে স্বামীর কাছে রেখে অন্য একটি এলাকায় চলে যান। সেখানেই তিনি এক জুতার কারখানায় কাজ শুরু করেন এবং পুরুষ পরিচয়ে জীবনযাপন শুরু করেন। এই সময় তিনি ঝউ নামে এক সহকর্মী নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ঝউ তাঁর শারীরিক অবস্থাকে উপেক্ষা করে তাঁর প্রতি গভীর প্রেম প্রদর্শন করেন।

তাঁদের সম্পর্ক আইনি বাধার মুখে পড়ে। কারণ, লিউয়ের পরিচয়পত্রে তাঁর লিঙ্গ নারী হিসেবে তখনো উল্লেখ ছিল। চীনে সমলিঙ্গ বিবাহের স্বীকৃতি না থাকায় তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্ভব ছিল না।

এরপর লিউ তাঁর সাবেক স্বামী টাংয়ের সাহায্য চান। লিউ এক অস্বাভাবিক প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, ঝউকে আইনিভাবে বিয়ে করবেন টাং। আর লিউ তাঁর ছেলের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াবেন।

টাং এই পরিকল্পনায় রাজি হন এবং ঝউকে আইনিভাবে বিবাহ করেন। তবে ঝউ বসবাস করতে থাকেন লিউয়ের সঙ্গে। ২০০০ সালের শুরুর দিকে ঝউ এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

লিউয়ের এই অদ্ভুত পারিবারিক অবস্থার কারণে তিনি এখন দুটি সন্তানের মা ও বাবা। একজন তাঁকে মা ডাকে, অন্যজন বাবা।

২০০৫ সালে লিউয়ের গল্প স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেক চিকিৎসক তাঁকে বিনা মূল্যে শারীরিক পরীক্ষার প্রস্তাব দিলেও লিউ তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার এনডিটিভি জানিয়েছে, পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিলেও লিউ কখনো লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অপারেশন করাননি। কারণ, এর খরচ তাঁর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে তাঁর পরিচয়পত্রে এখনো তিনি নারী হিসেবে তালিকাভুক্ত।

চীনের সামাজিক মাধ্যমে লিউয়ের জীবনের এই গল্প মানুষের কৌতূহল জাগিয়েছে। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ঈশ্বর! এটা অবিশ্বাস্য।’

আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘নারী থেকে পুরুষ, মা থেকে বাবা—তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা সত্যিই সমৃদ্ধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত