ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে উভয়সংকটে ভারত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৪: ৪৫
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ১৬

ইরান ও ইসরায়েল উভয়েই ভারতের মিত্র দেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতের কারণে উভয়সংকটে পড়েছে দেশটি। বিশেষ করে উভয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত নয়াদিল্লি। এই অবস্থায় ভারত এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ নেয়নি। তবে জানিয়েছে, বর্তমান সংকটের পরিণতির পূর্ণাঙ্গ স্বরূপ মূল্যায়নের পরই কেবল দেশটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে। 

গত শনিবার ইরান ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশকেই ‘ধৈর্য ধরার’ আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি ‘সংলাপ ও কূটনীতির’ মাধ্যমে সংকট সমাধানে পরামর্শ দিয়েছে। নয়াদিল্লি এই সংঘাতকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এর ফলে অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে। 

ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের কৌশলগত মৈত্রী আছে। দুই দেশ বিগত কয়েক দশক ধরেই প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বর্তমান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ জোট সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়। 

এমনকি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি ইসরায়েল সফরও করেছেন। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। সব মিলিয়ে ভারতের কাছে ইসরায়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, বিশেষ করে নিরাপত্তা খাতে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও রাশিয়ার পর ইসরায়েলই ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী। 

এদিকে, ইরানের সঙ্গে ভারতবর্ষের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কয়েক শ বছরের পুরোনো। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশই সেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এমনকি ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পরও ভাটা পড়েনি দুই দেশের সম্পর্কে। 

 ইরান ভারতে অন্যতম প্রধান তেল সরবরাহকারী দেশ। তেহরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আগে ইরান ভারতে দ্বিতীয় শীর্ষ তেল সরবরাহকারী দেশ ছিল। বিগত চার বছর ধরে ইরান থেকে ভারত কোনো জ্বালানি তেল না কিনতে পারলেও দুই দেশের সম্পর্ক এখনো অটুট। 

সর্বশেষ ২০২২ সালে ইরান ও ভারত একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বছরখানেক আগে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণম জয়শংকর নিজেও ইরান সফরে গিয়েছিলেন দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে। এ ছাড়া ইরানে ভারতের বিশাল বিনিয়োগ আছে। একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রকল্প হলো ইরানে চাবাহার বন্দর নির্মাণ। 

তবে এই সংঘাতের ফলাফল হিসেবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি হরমুজ প্রণালি থেকে ইসরায়েলি মালিকানার একটি মালবাহী জাহাজ আটক করে। সেই জাহাজের বেশ কয়েকজন নাবিক ভারতীয়। অবশ্য ইরানি কর্তৃপক্ষ নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে, তাঁরা ভারতীয় নাবিকদের সঙ্গে দেশটি কর্মকর্তাদের দেখা করার ব্যবস্থা করবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। 

সব মিলিয়ে ইরান ও ইসরায়েলের মতো ভারতের দুই মিত্র দেশ একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় নয়াদিল্লি বেশ খানিকটা উদ্বিগ্ন। তবে দেশটি দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে এখনই নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। বরং অপেক্ষা করে পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র মূল্যায়নের পরই সে বিষয়ে এগিয়ে যেতে চায়। 

এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যসচিব সুনিল বার্থওয়ালে বলেছেন, ‘আঞ্চলিক সংঘাতের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত। এটা অবশ্য সত্যি যে, সংঘাতের আবহ না থাকলে আমাদের পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা পরিপূর্ণভাবে বোঝার পরপরই কেবল নীতিগত হস্তক্ষেপ করা হবে এবং এই ধারাবাহিকতায় সমস্যাগুলোর সমাধানে যা যা করা প্রয়োজন তা সরকার অবশ্যই করবে।’ 

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত