Ajker Patrika

কী ঘটেছিল তালেবানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সেই নারীদের ভাগ্যে

আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ১৮: ১৩
কী ঘটেছিল তালেবানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সেই নারীদের ভাগ্যে

তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসে নারীদের ঘরের বাইরে অর্থাৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ধরনের নিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কয়েকজন নারী। কাবুলসহ আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোতে যে নারীরা খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের ওপর নেমে আসে তালেবানদের নির্মম অত্যাচার। প্রতিবাদকারী তিন আফগান নারীর কথা বলা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

কাবুলের রাজপথে প্রতিবাদ
গত ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান জঙ্গিরা কাবুল দখল করলে জাকিয়ার (ছদ্মনাম) জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জাকিয়া চাকরি হারান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর। এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভে অংশ নেন তিনি। কাজ এবং শিক্ষার অধিকার হারানোর পর ক্ষোভ প্রকাশ করার প্রথম সুযোগ ছিল সেটি।

বিক্ষোভকারীরা কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে মিছিল করছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাঁদের থামিয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ স্বরে স্লোগান দেওয়া জাকিয়াকে আটক করে তালেবান সশস্ত্র পুলিশ।

সেদিনের কথা মনে করে জাকিয়া বলেন, ‘তাদের (তালেবান পুলিশ) মধ্যে একজন তার বন্দুকটি আমার মুখের সামনে তুলে বলেছিল, আমি চুপ না করলে সেখানেই আমাকে মেরে ফেলা হবে।’

জাকিয়া সহকর্মী বিক্ষোভকারীদের একটি গাড়িতে উঠতে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিরোধ করেছি। তারা আমার বাহু মুচড়ে দিচ্ছিল। আমাকে তালেবানরা তাদের গাড়িতে ওঠাতে টানছিল। অন্যদিকে, আমার সঙ্গের বিক্ষোভকারীরা আমাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছিল।’

শেষ পর্যন্ত জাকিয়া পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন তিনি যা দেখেছিল, তা তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য আতঙ্কিত করে রেখেছিল। তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা বদ্ধ দরজার আড়ালে হয়নি, হয়েছিল রাজধানী কাবুলের রাস্তায় সবার সামনে।’

গ্রেপ্তার ও অত্যাচার
অনেক আফগান বিক্ষোভকারীর মধ্যে ছিলেন মরিয়ম (ছদ্মনাম) এবং ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী পারওয়ানা ইব্রাহিমখাইল নিজরাবি—যাঁদের তালেবানরা আটক করেছিল। বিধবা এবং সন্তানদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে মরিয়মের ভয় ছিল, চাকরি হারালে তাঁর সন্তানদের নিয়ে তিনি কী করবেন।

তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভে যোগ দেন। সঙ্গের বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার হতে দেখে তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সময়মতো পালিয়ে যেতে পারেননি। মরিয়ম বলেন, ‘আমাকে জোর করে ট্যাক্সি থেকে বের করে এনে তারা আমার ব্যাগ তল্লাশি করে এবং আমার ফোন খুঁজে পেয়েছিল।’

তালেবান কর্মকর্তাদের ফোনের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মারধর করা হয় মরিয়মকে। তাঁকে এতই জোরে মারা হয় যে মরিয়মের মনে হয়েছিল তাঁর কানের পর্দা বুঝি ফেটে গেছে। তালেবানরা তখন তাঁর ফোনে ছবি ও ভিডিও দেখে আরও রেগে যায়।

মরিয়ম বলেন, ‘তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার চুল টেনে ধরেছিল। তারা আমার হাত ও পা ধরে আমাকে তাদের রেঞ্জারের পেছনে ফেলে দেয়। আমাকে অপমানজনক ভাষায় ডাকছিল। তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয় এবং আমার মাথা ঢেকে দেয় একটি কালো ব্যাগ দিয়ে। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না।’

এক মাস পর পারওয়ানাও তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষার্থীদের একটি দল নিয়ে বেশ কয়েকটি মিছিলের আয়োজন করেন তিনি। এরপর তাঁর ওপরেও নেমে আসে অত্যাচার। পারওয়ানা বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকেই তারা আমাকে নির্যাতন শুরু করে।’

পারওয়ানাকে গাড়িতে তুলে দুই পুরুষ সশস্ত্র প্রহরীর মধ্যে বসানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সেখানে বসতে অস্বীকৃতি জানাই, তারা আমাকে সামনের দিকে নিয়ে যায়, মাথা একটি কম্বলে ঢেকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নড়াচড়া করতে নিষেধ করে।’

ভারী অস্ত্রধারীদের মধ্যে পারওয়ানা নিজেকে দুর্বল এবং মৃত ভাবতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে অনেকবার থাপ্পড় মারে। আমার মুখ অসাড় হয়ে গিয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম, আমার সারা শরীর কাঁপছিল।’

জেলজীবন 
তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন মরিয়ম, পারওয়ানা ও জাকিয়া। পারওয়ানা বলেছেন, তিনি কখনোই আশা করেননি তালেবানরা তাঁর সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করবে। তারপরও জেলে তাঁর প্রতি তালেবানের অপমানজনক আচরণ দেখে হতবাক হয়ে যান।

জেলে প্রথম খাবার তাঁকে বিস্মিত ও ভীত করেছিল। পারওয়ানা বলেন, ‘মুখের ওপর একটি ধারালো জিনিস অনুভব করি। দেখি একটি পেরেক। ছুড়ে ফেলেছিলাম।’

এরপর খাবারের মধ্যে তিনি চুল ও পাথর খুঁজে পান। পাথর ছুড়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল পারওয়ানাকে। এরপর দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী পারওয়ানার বিরুদ্ধে অনৈতিকতা, পতিতাবৃত্তি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি ছড়ানোর অভিযোগ এনে প্রায় এক মাস জেলে রাখা হয়।

মরিয়মকে একটি নিরাপত্তা ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদের সময় কালো ব্যাগ দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিল। মরিয়ম বলেন, ‘আমি অনেক লোকের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। একজন আমাকে লাথি মেরে জিজ্ঞেস করল, কে আমাকে বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্য অর্থ দিয়েছে। অন্যজন আমাকে ঘুষি মেরে জিজ্ঞেস করল, তুমি কার হয়ে কাজ কর।’

মরিয়ম তখন বলেছিলেন, তিনি একজন বিধবা এবং তাঁর সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য কাজের প্রয়োজন। কিন্তু এসব বলে মরিয়মের কপালে জুটেছে আরও মারধর।

স্বীকারোক্তি ও মুক্তি
মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় প্রবীণদের হস্তক্ষেপের পর পারওয়ানা ও মরিয়ম দুজনকেই আলাদাভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা এখন আর আফগানিস্তানে বসবাস করছেন না।

অপরাধ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল দুজনকেই। তালেবানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়েছিল তাঁদের। তাঁদের পুরুষ আত্মীয়রাও সরকারি কাগজপত্রে সই করে অঙ্গীকার করেছিলেন যে নারীরা আর কোনো প্রতিবাদে অংশ নেবে না।

বিবিসি এই অভিযোগগুলো তালেবান সরকারের সিনিয়র মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের কাছে রেখেছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নারী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।

স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান বলেছিল, আফগান সংস্কৃতি এবং শরিয়া আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ উপায়ে নারীরা কাজ এবং স্কুলে যাওয়া চালিয়ে যেতে পারবেন। তারা বারবার জোর দিয়ে বলেছে, ছয় বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে পড়ার নিষেধাজ্ঞা অস্থায়ী। কিন্তু নারীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার কোনো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয়নি তালেবান সরকার।

আফগানিস্তানে ফিরে জাকিয়া অল্পবয়সী মেয়েদের পড়ালেখা শেখানোর জন্য বাসায় টিউশন সেন্টার চালু করেও ব্যর্থ হন। জাকিয়া বলেন, ‘একদল তরুণী নিয়মিতভাবে এক জায়গায় একত্রিত হওয়ায় হুমকি বোধ করছে তালেবান। তারা যা চেয়েছিল তা করতে পেরেছে। আমি আমার নিজের ঘরে বন্দী।’

এখনো তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন জাকিয়া। তবে তাঁরা কোনো প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেন না। ছদ্মনাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যে বিবৃতি প্রকাশ করেন।

আফগানিস্তানের জন্য তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাকিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই করতে পারি না। আমাদের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। নারীদের জনজীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু আমাদের মৌলিক অধিকার চেয়েছিলাম। এই চাওয়াটা কি খুব বেশি?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৬
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। দীর্ঘ দুই বছর পর এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠটি পুনরায় চালু হলো। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রূপ আর দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নয়। দেখলে মনে হবে যেন একটি বিশাল উদ্বাস্তু শিবির।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো প্রায় ৫০০ বাস্তুচ্যুত পরিবারের আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময়ের বিশাল লেকচার হলের জায়গায় এখন সারি সারি তাঁবু টাঙানো।

২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

সেখানে আশ্রয় নেওয়া একজন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলে এখানে এসেছি। কিন্তু এটি শিক্ষার জায়গা, আশ্রয়কেন্দ্র নয়। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই বিদ্যাপীঠের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।’

ইউনেসকোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ একে ‘স্কলাস্টিসাইড’ বা পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজাভিত্তিক আল-মেজান সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ১৩৭টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, ৭৬০ জন শিক্ষক এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক নিহত হয়েছেন।

গাজার সর্বশেষ সচল বিদ্যাপীঠ ইসরা ইউনিভার্সিটিকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে মাত্র চারটি সচল শ্রেণিকক্ষে বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদেল আওয়াদুল্লাহ জানান, ভাঙা দেয়ালগুলো প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, তাই আমরা ধার করা জেনারেটর চালিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সচল রাখার চেষ্টা করছি।’

মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইউমনা আলবাবা বলেন, ‘আমি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটি তেমন নয়। মনোযোগ দেওয়ার মতো পরিবেশ বা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম—কোনোটিই এখানে নেই। তবুও আমি খুশি যে সশরীরে ক্লাস করতে পারছি। আমরা শূন্য থেকে সবকিছু গড়ার স্বপ্ন দেখছি।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গাজার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা মূলত ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি উপড়ে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও গাজার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির ১৭ বছরের কারাদণ্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। তোশাখানা বা রাষ্ট্রীয় উপহার ভান্ডারের মূল্যবান উপহার কম দামে কিনে নেওয়ার অভিযোগে আজ শনিবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। তবে ইমরান খানের আইনজীবীরা এই রায়কে ‘একপক্ষীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলছেন, বিবাদী পক্ষের কোনো বক্তব্য না শুনেই এই সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালত এই রায় দেন। সাজাটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছর কারাদণ্ড। এ ছাড়া কারাদণ্ডের পাশাপাশি উভয়কে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, ইমরান খান বর্তমানে জমি-সংক্রান্ত একটি দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই ১৭ বছরের কারাদণ্ড কার্যকর শুরু হবে।

এ মামলাটি মূলত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া অত্যন্ত দামি কিছু উপহার (বিলাসবহুল ঘড়ি) নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে—ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন উপহারগুলো তোশাখানায় জমা দেন। পরে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রাষ্ট্রীয় নিয়ম লঙ্ঘন করে কম মূল্যে সেগুলো তোশাখানা থেকে নিজের নামে কিনে নেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এর ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কয়েক মিলিয়ন রুপির ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের মুখপাত্র জুলফি বুখারি বলেছেন, এটি ন্যায়বিচারের নীতি লঙ্ঘন করে করা একটি ‘ফরমায়েশি রায়’।

এ রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার পাঞ্জাব প্রদেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।

ইমরান খানের আইনজীবী সালমান সফদর জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার জন্য তাঁদের আইনি দলকে নির্দেশ দিয়েছেন কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর দলের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর পরিবার বা আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি সেটলারদের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিস্তিনি গ্রামে মানবঢাল একদল স্বেচ্ছাসেবক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

প্রতিদিন সকালে কিশোর ইসরায়েলি সেটলাররা পাহাড়ের ওপর থেকে একপাল ছাগল তাড়িয়ে নিচের উপত্যকায় ফিলিস্তিনি গ্রাম রাস আইন আল-আউজার দিকে নিয়ে আসে।

এ সময় গ্রামের নারী, পুরুষ ও শিশুরা আশ্রয় নেয় তাদের কুঁড়েঘর ও তাঁবুর ভেতর। কোনো ফিলিস্তিনি যদি সামান্য প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সেখানে হাজির হয় ইসরায়েলি সেনা বা সীমান্ত পুলিশ। এরপর শুরু হয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। বিনা বিচারে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আটক তো আছেই।

বলা বাহুল্য, ইসরায়েলি সেটলারদের লক্ষ্য—তাদের গবাদিপশু দিয়ে গ্রামটি দখল করে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়া।

আশার কথা, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এহেন ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিরোধের শক্তি হয়ে সম্প্রতি হাজির হয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা পাহাড় থেকে নামতে থাকা ইসরায়েলি সেটলারদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের সরিয়ে দেন।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আজ শনিবারে রাস আইন আল-আউজা গ্রামের বাসিন্দাদের রক্ষাকারীদের মধ্যে ছিলেন চারজন ইসরায়েলি ইহুদি, একজন হাঙ্গেরিয়ান ও একজন মার্কিন নাগরিক। তাঁরা ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ির চারপাশে মানবঢাল তৈরি করে এগিয়ে আসা পশুগুলো তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি মেজর ও স্বেচ্ছাসেবী আমির পানস্কি বলেন, ‘সেটলাররা এমন সব উসকানি দেয়, যার ফলে ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়। আর সেটাকেই অজুহাত বানিয়ে তাদের ওপর চলে দমন-পীড়ন। আমরা এখানে সুরক্ষাকবচ হিসেবে আছি। আমরা আমাদের দেহকে ইহুদি সেটলার ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছি।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যতবার কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেন, ততবারই সেটলার রাখালেরা পাল্টা কৌশলে তাঁদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করে। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের একেবারে কাছে চলে যায়। স্বেচ্ছাসেবকেরা তখন হাত নেড়ে ও চিৎকার করে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকার চেষ্টা করেন।

এ সময় সেটলাররা মোবাইল ফোন উঁচু করে পুরো দৃশ্য ধারণ করে এবং সরাসরি মন্তব্য করতে থাকে। অন্যদিকে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের দেহে লাগানো থাকে বডি ক্যামেরা, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা করার ভুয়া অভিযোগ না ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত