অনলাইন ডেস্ক
তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসে নারীদের ঘরের বাইরে অর্থাৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ধরনের নিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কয়েকজন নারী। কাবুলসহ আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোতে যে নারীরা খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের ওপর নেমে আসে তালেবানদের নির্মম অত্যাচার। প্রতিবাদকারী তিন আফগান নারীর কথা বলা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
কাবুলের রাজপথে প্রতিবাদ
গত ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান জঙ্গিরা কাবুল দখল করলে জাকিয়ার (ছদ্মনাম) জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জাকিয়া চাকরি হারান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর। এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভে অংশ নেন তিনি। কাজ এবং শিক্ষার অধিকার হারানোর পর ক্ষোভ প্রকাশ করার প্রথম সুযোগ ছিল সেটি।
বিক্ষোভকারীরা কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে মিছিল করছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাঁদের থামিয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ স্বরে স্লোগান দেওয়া জাকিয়াকে আটক করে তালেবান সশস্ত্র পুলিশ।
সেদিনের কথা মনে করে জাকিয়া বলেন, ‘তাদের (তালেবান পুলিশ) মধ্যে একজন তার বন্দুকটি আমার মুখের সামনে তুলে বলেছিল, আমি চুপ না করলে সেখানেই আমাকে মেরে ফেলা হবে।’
জাকিয়া সহকর্মী বিক্ষোভকারীদের একটি গাড়িতে উঠতে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিরোধ করেছি। তারা আমার বাহু মুচড়ে দিচ্ছিল। আমাকে তালেবানরা তাদের গাড়িতে ওঠাতে টানছিল। অন্যদিকে, আমার সঙ্গের বিক্ষোভকারীরা আমাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছিল।’
শেষ পর্যন্ত জাকিয়া পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন তিনি যা দেখেছিল, তা তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য আতঙ্কিত করে রেখেছিল। তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা বদ্ধ দরজার আড়ালে হয়নি, হয়েছিল রাজধানী কাবুলের রাস্তায় সবার সামনে।’
গ্রেপ্তার ও অত্যাচার
অনেক আফগান বিক্ষোভকারীর মধ্যে ছিলেন মরিয়ম (ছদ্মনাম) এবং ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী পারওয়ানা ইব্রাহিমখাইল নিজরাবি—যাঁদের তালেবানরা আটক করেছিল। বিধবা এবং সন্তানদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে মরিয়মের ভয় ছিল, চাকরি হারালে তাঁর সন্তানদের নিয়ে তিনি কী করবেন।
তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভে যোগ দেন। সঙ্গের বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার হতে দেখে তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সময়মতো পালিয়ে যেতে পারেননি। মরিয়ম বলেন, ‘আমাকে জোর করে ট্যাক্সি থেকে বের করে এনে তারা আমার ব্যাগ তল্লাশি করে এবং আমার ফোন খুঁজে পেয়েছিল।’
তালেবান কর্মকর্তাদের ফোনের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মারধর করা হয় মরিয়মকে। তাঁকে এতই জোরে মারা হয় যে মরিয়মের মনে হয়েছিল তাঁর কানের পর্দা বুঝি ফেটে গেছে। তালেবানরা তখন তাঁর ফোনে ছবি ও ভিডিও দেখে আরও রেগে যায়।
মরিয়ম বলেন, ‘তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার চুল টেনে ধরেছিল। তারা আমার হাত ও পা ধরে আমাকে তাদের রেঞ্জারের পেছনে ফেলে দেয়। আমাকে অপমানজনক ভাষায় ডাকছিল। তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয় এবং আমার মাথা ঢেকে দেয় একটি কালো ব্যাগ দিয়ে। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না।’
এক মাস পর পারওয়ানাও তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষার্থীদের একটি দল নিয়ে বেশ কয়েকটি মিছিলের আয়োজন করেন তিনি। এরপর তাঁর ওপরেও নেমে আসে অত্যাচার। পারওয়ানা বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকেই তারা আমাকে নির্যাতন শুরু করে।’
পারওয়ানাকে গাড়িতে তুলে দুই পুরুষ সশস্ত্র প্রহরীর মধ্যে বসানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সেখানে বসতে অস্বীকৃতি জানাই, তারা আমাকে সামনের দিকে নিয়ে যায়, মাথা একটি কম্বলে ঢেকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নড়াচড়া করতে নিষেধ করে।’
ভারী অস্ত্রধারীদের মধ্যে পারওয়ানা নিজেকে দুর্বল এবং মৃত ভাবতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে অনেকবার থাপ্পড় মারে। আমার মুখ অসাড় হয়ে গিয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম, আমার সারা শরীর কাঁপছিল।’
জেলজীবন
তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন মরিয়ম, পারওয়ানা ও জাকিয়া। পারওয়ানা বলেছেন, তিনি কখনোই আশা করেননি তালেবানরা তাঁর সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করবে। তারপরও জেলে তাঁর প্রতি তালেবানের অপমানজনক আচরণ দেখে হতবাক হয়ে যান।
জেলে প্রথম খাবার তাঁকে বিস্মিত ও ভীত করেছিল। পারওয়ানা বলেন, ‘মুখের ওপর একটি ধারালো জিনিস অনুভব করি। দেখি একটি পেরেক। ছুড়ে ফেলেছিলাম।’
এরপর খাবারের মধ্যে তিনি চুল ও পাথর খুঁজে পান। পাথর ছুড়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল পারওয়ানাকে। এরপর দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী পারওয়ানার বিরুদ্ধে অনৈতিকতা, পতিতাবৃত্তি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি ছড়ানোর অভিযোগ এনে প্রায় এক মাস জেলে রাখা হয়।
মরিয়মকে একটি নিরাপত্তা ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদের সময় কালো ব্যাগ দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিল। মরিয়ম বলেন, ‘আমি অনেক লোকের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। একজন আমাকে লাথি মেরে জিজ্ঞেস করল, কে আমাকে বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্য অর্থ দিয়েছে। অন্যজন আমাকে ঘুষি মেরে জিজ্ঞেস করল, তুমি কার হয়ে কাজ কর।’
মরিয়ম তখন বলেছিলেন, তিনি একজন বিধবা এবং তাঁর সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য কাজের প্রয়োজন। কিন্তু এসব বলে মরিয়মের কপালে জুটেছে আরও মারধর।
স্বীকারোক্তি ও মুক্তি
মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় প্রবীণদের হস্তক্ষেপের পর পারওয়ানা ও মরিয়ম দুজনকেই আলাদাভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা এখন আর আফগানিস্তানে বসবাস করছেন না।
অপরাধ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল দুজনকেই। তালেবানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়েছিল তাঁদের। তাঁদের পুরুষ আত্মীয়রাও সরকারি কাগজপত্রে সই করে অঙ্গীকার করেছিলেন যে নারীরা আর কোনো প্রতিবাদে অংশ নেবে না।
বিবিসি এই অভিযোগগুলো তালেবান সরকারের সিনিয়র মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের কাছে রেখেছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নারী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান বলেছিল, আফগান সংস্কৃতি এবং শরিয়া আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ উপায়ে নারীরা কাজ এবং স্কুলে যাওয়া চালিয়ে যেতে পারবেন। তারা বারবার জোর দিয়ে বলেছে, ছয় বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে পড়ার নিষেধাজ্ঞা অস্থায়ী। কিন্তু নারীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার কোনো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয়নি তালেবান সরকার।
আফগানিস্তানে ফিরে জাকিয়া অল্পবয়সী মেয়েদের পড়ালেখা শেখানোর জন্য বাসায় টিউশন সেন্টার চালু করেও ব্যর্থ হন। জাকিয়া বলেন, ‘একদল তরুণী নিয়মিতভাবে এক জায়গায় একত্রিত হওয়ায় হুমকি বোধ করছে তালেবান। তারা যা চেয়েছিল তা করতে পেরেছে। আমি আমার নিজের ঘরে বন্দী।’
এখনো তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন জাকিয়া। তবে তাঁরা কোনো প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেন না। ছদ্মনাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যে বিবৃতি প্রকাশ করেন।
আফগানিস্তানের জন্য তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাকিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই করতে পারি না। আমাদের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। নারীদের জনজীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু আমাদের মৌলিক অধিকার চেয়েছিলাম। এই চাওয়াটা কি খুব বেশি?’
তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসে নারীদের ঘরের বাইরে অর্থাৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ধরনের নিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কয়েকজন নারী। কাবুলসহ আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোতে যে নারীরা খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের ওপর নেমে আসে তালেবানদের নির্মম অত্যাচার। প্রতিবাদকারী তিন আফগান নারীর কথা বলা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
কাবুলের রাজপথে প্রতিবাদ
গত ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান জঙ্গিরা কাবুল দখল করলে জাকিয়ার (ছদ্মনাম) জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জাকিয়া চাকরি হারান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর। এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভে অংশ নেন তিনি। কাজ এবং শিক্ষার অধিকার হারানোর পর ক্ষোভ প্রকাশ করার প্রথম সুযোগ ছিল সেটি।
বিক্ষোভকারীরা কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে মিছিল করছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাঁদের থামিয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ স্বরে স্লোগান দেওয়া জাকিয়াকে আটক করে তালেবান সশস্ত্র পুলিশ।
সেদিনের কথা মনে করে জাকিয়া বলেন, ‘তাদের (তালেবান পুলিশ) মধ্যে একজন তার বন্দুকটি আমার মুখের সামনে তুলে বলেছিল, আমি চুপ না করলে সেখানেই আমাকে মেরে ফেলা হবে।’
জাকিয়া সহকর্মী বিক্ষোভকারীদের একটি গাড়িতে উঠতে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিরোধ করেছি। তারা আমার বাহু মুচড়ে দিচ্ছিল। আমাকে তালেবানরা তাদের গাড়িতে ওঠাতে টানছিল। অন্যদিকে, আমার সঙ্গের বিক্ষোভকারীরা আমাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছিল।’
শেষ পর্যন্ত জাকিয়া পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন তিনি যা দেখেছিল, তা তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য আতঙ্কিত করে রেখেছিল। তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা বদ্ধ দরজার আড়ালে হয়নি, হয়েছিল রাজধানী কাবুলের রাস্তায় সবার সামনে।’
গ্রেপ্তার ও অত্যাচার
অনেক আফগান বিক্ষোভকারীর মধ্যে ছিলেন মরিয়ম (ছদ্মনাম) এবং ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী পারওয়ানা ইব্রাহিমখাইল নিজরাবি—যাঁদের তালেবানরা আটক করেছিল। বিধবা এবং সন্তানদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে মরিয়মের ভয় ছিল, চাকরি হারালে তাঁর সন্তানদের নিয়ে তিনি কী করবেন।
তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভে যোগ দেন। সঙ্গের বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার হতে দেখে তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সময়মতো পালিয়ে যেতে পারেননি। মরিয়ম বলেন, ‘আমাকে জোর করে ট্যাক্সি থেকে বের করে এনে তারা আমার ব্যাগ তল্লাশি করে এবং আমার ফোন খুঁজে পেয়েছিল।’
তালেবান কর্মকর্তাদের ফোনের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মারধর করা হয় মরিয়মকে। তাঁকে এতই জোরে মারা হয় যে মরিয়মের মনে হয়েছিল তাঁর কানের পর্দা বুঝি ফেটে গেছে। তালেবানরা তখন তাঁর ফোনে ছবি ও ভিডিও দেখে আরও রেগে যায়।
মরিয়ম বলেন, ‘তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার চুল টেনে ধরেছিল। তারা আমার হাত ও পা ধরে আমাকে তাদের রেঞ্জারের পেছনে ফেলে দেয়। আমাকে অপমানজনক ভাষায় ডাকছিল। তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয় এবং আমার মাথা ঢেকে দেয় একটি কালো ব্যাগ দিয়ে। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না।’
এক মাস পর পারওয়ানাও তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষার্থীদের একটি দল নিয়ে বেশ কয়েকটি মিছিলের আয়োজন করেন তিনি। এরপর তাঁর ওপরেও নেমে আসে অত্যাচার। পারওয়ানা বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকেই তারা আমাকে নির্যাতন শুরু করে।’
পারওয়ানাকে গাড়িতে তুলে দুই পুরুষ সশস্ত্র প্রহরীর মধ্যে বসানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সেখানে বসতে অস্বীকৃতি জানাই, তারা আমাকে সামনের দিকে নিয়ে যায়, মাথা একটি কম্বলে ঢেকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নড়াচড়া করতে নিষেধ করে।’
ভারী অস্ত্রধারীদের মধ্যে পারওয়ানা নিজেকে দুর্বল এবং মৃত ভাবতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে অনেকবার থাপ্পড় মারে। আমার মুখ অসাড় হয়ে গিয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম, আমার সারা শরীর কাঁপছিল।’
জেলজীবন
তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন মরিয়ম, পারওয়ানা ও জাকিয়া। পারওয়ানা বলেছেন, তিনি কখনোই আশা করেননি তালেবানরা তাঁর সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করবে। তারপরও জেলে তাঁর প্রতি তালেবানের অপমানজনক আচরণ দেখে হতবাক হয়ে যান।
জেলে প্রথম খাবার তাঁকে বিস্মিত ও ভীত করেছিল। পারওয়ানা বলেন, ‘মুখের ওপর একটি ধারালো জিনিস অনুভব করি। দেখি একটি পেরেক। ছুড়ে ফেলেছিলাম।’
এরপর খাবারের মধ্যে তিনি চুল ও পাথর খুঁজে পান। পাথর ছুড়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল পারওয়ানাকে। এরপর দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী পারওয়ানার বিরুদ্ধে অনৈতিকতা, পতিতাবৃত্তি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি ছড়ানোর অভিযোগ এনে প্রায় এক মাস জেলে রাখা হয়।
মরিয়মকে একটি নিরাপত্তা ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদের সময় কালো ব্যাগ দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিল। মরিয়ম বলেন, ‘আমি অনেক লোকের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম। একজন আমাকে লাথি মেরে জিজ্ঞেস করল, কে আমাকে বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্য অর্থ দিয়েছে। অন্যজন আমাকে ঘুষি মেরে জিজ্ঞেস করল, তুমি কার হয়ে কাজ কর।’
মরিয়ম তখন বলেছিলেন, তিনি একজন বিধবা এবং তাঁর সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য কাজের প্রয়োজন। কিন্তু এসব বলে মরিয়মের কপালে জুটেছে আরও মারধর।
স্বীকারোক্তি ও মুক্তি
মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় প্রবীণদের হস্তক্ষেপের পর পারওয়ানা ও মরিয়ম দুজনকেই আলাদাভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা এখন আর আফগানিস্তানে বসবাস করছেন না।
অপরাধ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল দুজনকেই। তালেবানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়েছিল তাঁদের। তাঁদের পুরুষ আত্মীয়রাও সরকারি কাগজপত্রে সই করে অঙ্গীকার করেছিলেন যে নারীরা আর কোনো প্রতিবাদে অংশ নেবে না।
বিবিসি এই অভিযোগগুলো তালেবান সরকারের সিনিয়র মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের কাছে রেখেছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নারী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান বলেছিল, আফগান সংস্কৃতি এবং শরিয়া আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ উপায়ে নারীরা কাজ এবং স্কুলে যাওয়া চালিয়ে যেতে পারবেন। তারা বারবার জোর দিয়ে বলেছে, ছয় বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে পড়ার নিষেধাজ্ঞা অস্থায়ী। কিন্তু নারীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার কোনো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয়নি তালেবান সরকার।
আফগানিস্তানে ফিরে জাকিয়া অল্পবয়সী মেয়েদের পড়ালেখা শেখানোর জন্য বাসায় টিউশন সেন্টার চালু করেও ব্যর্থ হন। জাকিয়া বলেন, ‘একদল তরুণী নিয়মিতভাবে এক জায়গায় একত্রিত হওয়ায় হুমকি বোধ করছে তালেবান। তারা যা চেয়েছিল তা করতে পেরেছে। আমি আমার নিজের ঘরে বন্দী।’
এখনো তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন জাকিয়া। তবে তাঁরা কোনো প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেন না। ছদ্মনাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যে বিবৃতি প্রকাশ করেন।
আফগানিস্তানের জন্য তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাকিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই করতে পারি না। আমাদের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। নারীদের জনজীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু আমাদের মৌলিক অধিকার চেয়েছিলাম। এই চাওয়াটা কি খুব বেশি?’
সৌদি আরবের প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থল পরিবর্তনের জন্য এখন থেকে নিয়োগকর্তার অনুমতি বাধ্যতামূলক। শ্রম আইন সংস্কারের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও নিয়োগকর্তার দায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
৪৩ মিনিট আগেশরীরের উচ্চতা দিয়ে দুজনই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। এবার গিনেস ওয়ার্ল্ডস রেকর্ডের ৭০ তম সংস্করণেও ‘আইকন’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে তাঁদের দুজনকে। বিশ্বখ্যাত এই দুই নারীর মধ্যে রুমেইসা গেলিগো পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ নারীর স্বীকৃতি পেয়েছেন আর জ্যোতি আমগে হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে খাটো নারী।
১ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একই ধরনের পরোয়ানা জারি করা হয়েছে হামাস...
২ ঘণ্টা আগেপশ্চিম ইংল্যান্ডের উইলস্টায়ার শহরে স্বামী পিটারকে নিয়ে বাস করেন রুথ ডোইল। ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল লটারি বিজয়ী ছিলেন তিনি। এক মিলিয়ন পাউন্ডের এই লটারি তাঁর জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। কিন্তু লটারি বিজয়ের সেই খবরটি তিনি প্রায় দুই মাস পর জানতে পেরেছিলেন...
২ ঘণ্টা আগে