Ajker Patrika

তালেবান শাসনে নারী স্বাধীনতা কোন পথে

ইমরান খান
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২২: ২০
তালেবান শাসনে নারী স্বাধীনতা কোন পথে

২০ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশের শাসনভার ছিল তাদের হাতে। তখন ইসলামি আইনের নামে পশতুন গোষ্ঠীর কিছু নিয়ম সংযুক্ত করে নারীদের জীবন পুরোপুরি ঘরবন্দী করে ফেলে তারা। নারীদের শিক্ষা, রাজনীতি, চাকরি, খেলাধুলা, পর্দা ও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তবে এবার ক্ষমতায় ফেরার আগে-পরে তালেবানের দেওয়া কিছু আশ্বাস নাগরিকদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছিল। মনে হচ্ছিল, হয়তো নতুন এক তালেবান দেখবে বিশ্ব। যে তালেবান হবে আগের চেয়ে পরিণত ও বিবেচনাসম্পন্ন। তবে ১৫ আগস্ট ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো এই প্রশ্ন তুলতেই পারে—নতুন আশ্বাসের মোড়কে কি পুরোনো তালেবানই ফিরে এল? 

নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইপুরোনো অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হওয়ায় তালেবান শাসনে এবার নারীর অধিকার কেমন হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী শঙ্কা ছিল। ১৪ জুলাই জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ‘মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে আফগান নারীদের অবর্ণনীয় ক্ষতি হবে।’ নিউইয়র্ক টাইমসে ১৯ আগস্ট প্রকাশিত এক নিবন্ধে নোবেলজয়ী নারী আন্দোলনকর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেন, ‘তারা নারীদের বিশেষ মর্যাদা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এগুলো সব মিথ্যা এবং ভাঁওতাবাজি।’

এরই মাঝে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন গণমাধ্যমকে বললেন, ‘অবশ্যই আমরা নারীদের শিক্ষা, কাজ এবং বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

একপক্ষের শঙ্কা, আর অন্য পক্ষের আশ্বাসের দোলাচলে আফগান নারীরা আসলে কী পাচ্ছেন, কেমন আছেন, তা বুঝতে আমরা বরং তালেবান সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের দিকে নজর দিই।

ছেলে ও মেয়েদের এক ক্লাসে না বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেশিক্ষা
১৯৯৬ থেকে ২০০১ শাসনামলে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার অনুমতি ছিল না। এবার তালেবানের পক্ষ থেকে আফগান নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। তবে ক্ষমতায় এসে নারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড বদলে লাগানো হয় ‘প্রার্থনা, নির্দেশনা, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ’ শীর্ষক সাইনবোর্ড।

শুরুতে শুধু ছাত্র ও পুরুষ শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নারী শিক্ষক ও ছাত্রীদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান সরকারের এই ঘোষণার পর আফগানিস্তান হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের এমন অবস্থানেও তাদের ভাবনায় কোনো বদল আসেনি। ২৭ সেপ্টেম্বর এক টুইট বার্তায় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য মোহাম্মদ আশরাফ ঘাইরাত ঘোষণা দেন, ‘যত দিন প্রকৃত ইসলামি পরিবেশ সবার জন্য তৈরি করা সম্ভব না হয়, তত দিন মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বা কাজ করতে দেওয়া হবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে আফগানিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনির বলেন, ‘আজ কোনো পিএইচডি, মাস্টার্স ডিগ্রির মূল্য নেই। আপনারা দেখুন যে মোল্লা ও তালেবান যারা এখন ক্ষমতায় আছে, তাঁদের কারোরই কোনো পিএইচডি, মাস্টার্স অথবা উচ্চবিদ্যালয়ের ডিগ্রি পর্যন্ত নেই। কিন্তু তবু তাঁরা সবার চেয়ে বড় পদে রয়েছেন।’ 

এতে গত দুই দশকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় আসা দেশটির হাজার হাজার নারী বিপদে পড়ে যায়। অবশেষে ২৯ আগস্ট তালেবানের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল বাকি হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তানের জনগণ ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়তে পারবে না বলে জানায় তালেবান। এর পর থেকে আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে ছেলেমেয়েদের ক্লাস শুরু হয়।

এরপরও যে শঙ্কা কাটেনি, তার প্রমাণ বিবিসি ঘোষিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকা। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন আফগানিস্তানের ৪৬ জন নারী। নতুন আবিষ্কার এবং বিশ্বকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় তাঁদের নাম এসেছে। তবে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে ওই নারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তালিকায় বেশ কয়েকজনের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে; দেওয়া হয়নি তাঁদের ছবিও।

কোনো নারী সদস্য ছাড়াই ৮ সেপ্টেম্বর ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তালেবানরাজনীতি
তালেবানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নারী অধিকারের বিষয়টি একদম তোয়াক্কা না করার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আফগান সরকার কাঠামো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে আসা প্রথম ঘোষণায় ১৭ আগস্ট তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগনি বলেন, ‘নারীরা পিছিয়ে থাকুক—এটি ইসলামিক আমিরাতের চাওয়া নয়। শরিয়া আইন মেনেই নারীদের আফগান সরকারের অংশ করা হবে।’

এই বক্তব্যে নারীরা কিছুটা আশা পেলেও ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে, তাতে কোনো নারীকে রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টিওএলওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি বলেন, ‘নারীরা মন্ত্রী হতে পারে না। এটি এমন বিষয়, যেটি আপনি তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন, কিন্তু তারা সেটি নিতে পারবে না। তাদের কাজ হলো জন্ম দেওয়া।’ নারীদের সমাজের অর্ধাংশ ভাবতেও নারাজ তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘গত ২০ বছরে নারীদের নিয়ে আফগানিস্তানে যা হয়েছে, তা কি পতিতাবৃত্তি ছাড়া কিছু?’ 

সরকার গঠন ও জেকরুল্লাহ হাশিমির এই বক্তব্য তালেবান শাসনামলে নারীদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ খুব সহজেই অনুমেয়।

 দেশের সকল পার্লার বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সদস্যরাকর্মসংস্থান
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু নারীর কর্মসংস্থান হয়েছিল। তাঁদের আপাতত কর্মস্থলে যেতে নিষেধ করেছেন উপাচার্য। 

আগের মেয়াদে আফগানিস্তানের সব বিউটি পার্লার বন্ধ করে দিয়েছিল তালেবান। ২০০১ সালের পর তালেবান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও আফগান সরকারের অর্থায়নে ছয় মাসের একটি বিউটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উপার্জনের উৎস হিসেবে বেছে নেন বিউটি স্যালন পেশাকে, যা পরে অনেক লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলের পরও তালেবান নেতারা বিউটি পার্লার বন্ধ করে দিয়েছে। সকল দেয়াল থেকে নারীদের ছবি মুছে দিয়েছে তালেবান, যা নারীদের বিজ্ঞাপন করার পথও বন্ধ করে দেয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন অনেক নারী।

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে প্রায় ৮০ নারী কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। এদের মধ্য থেকে ১২ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে ফিরেছেন মাত্র ১২ আফগান নারী। এর কারণ নারী প্রশ্নে তালেবান দৃষ্টিভঙ্গি, যা গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমির কথায় স্পষ্ট—‘আফগান নারীদের পুরুষের সঙ্গে কাজ করা উচিত নয়।’

আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানের পথে নারী ফুটবলাররাখেলাধুলা
নব্বইয়ের দশকে তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানে নারীদের সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ ছিল। ফের দেশটির দখল নিয়ে নারীদের খেলাধুলার ব্যাপারে একই মনোভাব প্রকাশ করেছে তালেবান। ফলে নারী ফুটবলারেরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ৮১ জন নারী ফুটবলার তোরখাম সীমান্তের উত্তর-পশ্চিমাংশ দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ দলের খেলোয়াড়েরা ছিলেন।

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও সব স্বীকৃত দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) নতুন চেয়ারম্যান মিরওয়াইস আশরাফ ক্রিকেট বোর্ডের স্টাফদের সঙ্গে পরিচিতিমূলক এক সভায় ঘোষণা দেন, ‘নারী ক্রিকেট আইসিসির প্রধান আবশ্যিকতাগুলোর একটি। এটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের মেয়েরা স্বাভাবিক নিয়মেই ক্রিকেট খেলবে। আমরা তাদের মৌলিক চাহিদা ও তাদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই।’

এই খেলা এখনো শুরুর আলো দেখতে পারেনি। অন্যান্য খেলার চিত্র কী হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানের পথে নারী ফুটবলাররাচলাফেরা
আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবান শাসনামলে আফগান নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এবার তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আফগানিস্তানে নারীদের বোরকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারীরা মাথায় হিজাব পরেছেন কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরতেই হবে, এমন নয়।’

এর মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর দেশটির পুণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, আফগান নারীরা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৭২ কিলোমিটারের বেশি দূরে ভ্রমণ করতে পারবেন না। যানবাহনে চলাচল করতেও ইসলামিক হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যানবাহন মালিকদেরও শুধু হিজাব পরা নারীদের পরিবহনের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

নাটক-সিনেমায় নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের খবর উপস্থাপনার সময় হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নারীদের জন্য টিভি চ্যানেল চালু করা নারী সাংবাদিক জেহরা নবীর টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্মীদের নিয়ে কাজ করার নিরাপদ জায়গা পাচ্ছি না।’ আগস্টে চাকরি হারানো সাংবাদিক সোনিয়া আহমাদিয়ার বলেন, ‘গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে।’

২৪ আগস্ট তালেবানের মুখপাত্র যাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারীদের আপাতত ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নারীদের কর্মস্থলে যোগদানে স্থায়ীভাবে বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁরা যাতে কাজে ফিরতে পারেন, কর্তৃপক্ষ সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। 

আফগান নারী খাতিরানারীদের কোন চোখে দেখে তালেবান
১৫ আগস্ট ভারতের নিউজ এইটটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগান নারী খাতিরা বলেন, ‘তালেবানের চোখে নারীরা মানুষ নয়। তাদের কাছে নারী মানেই এক টুকরো মাংস।’ তারা নারী শরীরকে কুকুরের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে অবশ্য বিতর্কও কম হয়নি। এর মধ্যেই বিবিসির সাংবাদিক জিয়া শাহরিয়ারের টুইটারে শেয়ার করা এক ভিডিওতে একজন তালেবান কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা কি কেউ কাটা তরমুজ কেনেন? নাকি পুরো তরমুজ কেনেন? অবশ্যই পুরোটা কেনেন। হিজাব না পরা মেয়েরা হলো কাটা তরমুজ।’

এসব বক্তব্যের মধ্যেই নারী অধিকারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাপের মুখে পড়ে তালেবান। চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বিশ্বের শক্তিশালী বেশ কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানের বেশ কিছু তহবিল স্থগিত করে।

এর মাঝেই তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ডিক্রি প্রকাশের সময় বলেন, ‘নারী কোনো সম্পত্তি নয়; বরং মুক্ত ও অভিজাত মানুষ। শান্তি বা অন্য কোনো কিছুর জন্য তাকে কেউ কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে না।’ ডিক্রিতে বিয়ে ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিয়ে সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, জোরপূর্বক কোনো নারীর বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আর প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার রয়েছে। এই ভাষ্য প্রচারের জন্য তথ্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এই ডিক্রি বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।

নারী অধিকার খর্ব হওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে আফগান নারীরানারীর বাক স্বাধীনতা
নারী অধিকারের নানা প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের হেরাতে কিছুসংখ্যক নারী নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তালেবান নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দাবি করেন—শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কাজের অধিকার যেন খর্ব না হয়। এগুলো যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার। বিক্ষোভকারীরা আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। তাঁরা তালেবানের সঙ্গে লড়াই করে নিহত আফগান সৈন্যদের সম্মান জানায়। কেউ কেউ মাইক্রোফোন নিয়ে জড়ো হয় এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।

এ মিছিল পণ্ড করতে ফাঁকা গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে তালেবান। তালেবানরা নারীদের অধিকারে ‘কোনো সমস্যা করবে না’ ঘোষণার একদিন পর এ ঘটনা ঘটল।

শুধু আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে ক্ষান্ত হয়নি তালেবান। ৮ সেপ্টেম্বর কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কারত-এ-চর এলাকায় নারীদের তালেবানবিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া আফগান সংবাদমাধ্যম তাকির দুই সাংবাদিক দারায়াবি ও নাকদিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে তালেবান সদস্যরা। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিবেদক মার্কাস ইয়াম ও আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম ইটিলাট্রোজের প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায় অন্তর্বাস পরা দুই সাংবাদিকের গায়ে আঘাতের চিহ্ন। ইটিলাট্রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম ইউরো নিউজের স্থানীয় প্রধান, টিওএলও নিউজের ক্যামেরা পারসন ওয়াহিদ আহমাদি এবং আরিয়ানা নিউজের ক্যামেরাপারসন সামিমকেও গ্রেপ্তার করে তালেবান।

অর্থনৈতিক সংকট ও আইএসের হামলার পাশাপাশি তালেবানের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল নারী ইস্যু। এ ক্ষেত্রে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই নানা সুমধুর বাণী শোনাতে থাকে। সরকারেও নারীর অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তবে তালেবান সরকার গঠনের পর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করা হয় নারীদের ওপর। তবে ২০ বছর আগের তালেবানের চেয়ে এখনকার তালেবান নারী অধিকারের বিষয়টি কিছুটা হলেও নমনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা। মেয়েদের শিক্ষা, খেলাধুলা নিষিদ্ধসহ বোরকা পরার বাধ্যবাধকতা ছিল। এবার সেসব দিক থেকে তালেবান খানিকটা সরে এসেছে বলাই যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ট্রাম্পের ছবিসহ ১৬ এপস্টেইন নথি গায়েব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ট্রাম্পের ছবিসহ ১৬ এপস্টেইন নথি গায়েব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটে দেশটির পার্লামেন্টের নির্দেশে প্রকাশিত জেফরি এপস্টেইন ফাইল সিরিজের ১৬টি নথি গায়েব হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু নথিতে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও কিছু ছবি ছিল। নিখোঁজ ফাইলগুলো গত শুক্রবার দেখা গেলেও শনিবার থেকে আর দেখা যাচ্ছে না।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, জেফরি এপস্টেইন সংক্রান্ত নথিপত্রের জন্য মার্কিন বিচার বিভাগের নির্ধারিত পাবলিক ওয়েবপেজ থেকে অন্তত ১৬টি ফাইল গায়েব হয়ে গেছে—যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবিও ছিল।

ফাইলগুলো পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কোনো ব্যাখ্যা বা নোটিশ ছাড়াই সরিয়ে ফেলা হয়।

নিখোঁজ ফাইলগুলোর মধ্যে ছিল নগ্ন নারীদের আঁকা কিছু ছবি এবং একটি ড্রয়ার ও ক্রেডেনজারের ওপর রাখা কিছু ছবির দৃশ্য। সেই ছবির ভেতর একটি ড্রয়ারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবি দেখা যায়, যেখানে তার সাথে ছিলেন জেফরি এপস্টেইন, মেলানিয়া ট্রাম্প এবং এপস্টেইনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল।

বিচার বিভাগ ফাইলগুলো সরিয়ে ফেলার কোনো কারণ জানায়নি বা এটি ইচ্ছাকৃত কি না তাও স্পষ্ট করেনি। বিভাগের একজন মুখপাত্রের কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এই ব্যাখ্যাহীন অন্তর্ধান ফাইলগুলো নিয়ে জল্পনা উসকে দিয়েছে যে, কেন এগুলো সরানো হলো এবং কেন জনগণকে জানানো হয়নি। এটি এপস্টেইন এবং তাঁর চারপাশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিনের রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা এক্সে ট্রাম্পের ছবি থাকা নিখোঁজ ফাইলটির দিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘আর কী কী গোপন করা হচ্ছে? মার্কিন জনগণের জন্য আমাদের স্বচ্ছতা প্রয়োজন।’

এই ঘটনা বিচার বিভাগের বহুল প্রতীক্ষিত নথি প্রকাশের বিষয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জনসম্মুখে আনা হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথিতে এপস্টেইনের অপরাধ বা তাঁকে বছরের পর বছর গুরুতর ফেডারেল অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার নেপথ্য সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে খুব সামান্যই নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান যেমন—ভুক্তভোগীদের এফবিআই সাক্ষাৎকার এবং বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ মেমো এতে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আশা করা হয়েছিল, এপস্টেইন সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডগুলো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিচার বিভাগের প্রাথমিক প্রকাশনায় সেগুলো কোথাও নেই। সেখানে বিশেষ করে ২০০৮ সালে এপস্টাইনকে কীভাবে একটি মামুলি অপরাধ স্বীকার করে পার পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো সদুত্তর নেই।

এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেসের সাম্প্রতিক আইন অনুযায়ী এই রেকর্ডগুলো প্রকাশ করার কথা থাকলেও, এতে এপস্টেইনের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত থাকা ব্রিটেনের সাবেক প্রিন্স অ্যান্ড্রুর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম খুব কমই এসেছে।

এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে— ২০০০-এর দশকে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার বিষয়ে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তের কিছু অন্তর্দৃষ্টি এবং ১৯৯৬ সালের একটি অভিযোগ যেখানে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে শিশুদের ছবি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত নথিতে মূলত নিউইয়র্ক এবং ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডে এপস্টেইনের বাড়ির ছবি, এবং কিছু সেলিব্রিটি ও রাজনীতিবিদের ছবি রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কিছু নতুন ছবি থাকলেও ট্রাম্পের ছবি ছিল খুবই নগণ্য। যদিও ক্লিনটন এবং ট্রাম্প উভয়েই এপস্টেইনের সঙ্গে মেলামেশার কথা অস্বীকার করেছেন এবং কারো বিরুদ্ধেই এপস্টাইন সংক্রান্ত কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

কংগ্রেসের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও বিচার বিভাগ জানিয়েছে যে তারা পর্যায়ক্রমে নথিগুলো প্রকাশ করবে। ভুক্তভোগীদের নাম গোপন করার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এই দেরি হচ্ছে বলে তারা দাবি করেছে।

এই ধীরগতিতে এপস্টেইনের হাতে নির্যাতিত নারী এবং কংগ্রেসের সদস্যরা ক্ষুব্ধ। মারিনা লাসার্ডা, যিনি অভিযোগ করেছেন যে ১৪ বছর বয়সে এপস্টেইন তাকে যৌন নির্যাতন শুরু করেছিলেন, তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা আবারও আমাদের ব্যর্থ করছে।’

প্রকাশিত নথিগুলোর একটি বড় অংশই আগে কোনো না কোনোভাবে জনসম্মুখে এসেছিল। তবে এবারই প্রথম এগুলো এক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পুরোপুরি কালো কালি দিয়ে ঢেকে (Blacked out) দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের রিপাবলিকান সহযোগীরা ক্লিনটনের ছবির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে তাঁকে মাইকেল জ্যাকসন এবং ডায়ানা রসের মতো তারকাদের সাথে দেখা গেছে। এছাড়াও অভিনেতা ক্রিস টাকার, কেভিন স্পেসি এবং নিউজকাস্টার ওয়াল্টার ক্রনকাইটের সাথেও এপস্টাইনের ছবি পাওয়া গেছে। তবে এসব ছবির কোনো ক্যাপশন বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

প্রকাশিত নথির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ২০০৭ সালের একটি ঘটনা, যেখানে দেখা গেছে ফেডারেল প্রসিকিউটরদের হাতে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা তখন কোনো চার্জ গঠন করেননি। গ্র্যান্ড জুরির কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ১৪ বছর বয়সী কিশোরীসহ অনেক ভুক্তভোগী এপস্টেইনের যৌন লালসার বর্ণনা দিয়েছিলেন।

সবে শ্রমমন্ত্রী আলেকজান্ডার অ্যাকোস্টা, যিনি সেই সময় মামলার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পরে জানিয়েছিলেন, জুরিরা ভুক্তভোগীদের কথা বিশ্বাস করবেন কি না তা নিয়ে তাঁর সন্দেহ ছিল। তবে বর্তমানে ভুক্তভোগীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলেছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এপস্টেইনের নির্যাতনের শিকার মারিয়া ফারমারের আইনজীবী জেনিফার ফ্রিম্যান বলেন, ‘এটি একই সঙ্গে একটি জয় এবং একটি ট্র্যাজেডি। মনে হচ্ছে সরকার কিছুই করেনি। যদি তারা সামান্যতম তদন্তও করত, তবে তাঁকে অনেক আগেই থামানো যেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় নতুন শাসনকাঠানো কার্যকর শিগগির: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, গাজার নতুন শাসন কাঠামো খুব শিগগির কার্যকর হতে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক পরিষদ এবং ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের (কৌশলগত বিশেষজ্ঞ) সমন্বয়ে গঠিত হবে এই শাসনকাঠামো। এই শাসনকাঠামো গঠনের পরপরই সেখানে বিদেশি সৈন্য মোতায়েন করা হবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের চালানো গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রুবিও বলেন, গাজায় বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয়। গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ইসরায়েল হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং হামাসও পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

রুবিও বলেন, ‘এ কারণেই আমরা প্রথম ধাপটি পুরোপুরি সম্পন্ন করার বিষয়ে জরুরি তাগিদ অনুভব করছি। এই ধাপের মধ্যে রয়েছে বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ গঠন এবং সেখানে কাজ করার জন্য ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর পরপরই সেখানে স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’

রুবিও জানান, টেকনোক্র্যাট গ্রুপে যোগ দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি অগ্রগতি হয়েছে এবং ওয়াশিংটন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না করলেও ‘খুব শিগগিরই’ এই শাসনকাঠামো চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

গাজার জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স বা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের পরিকল্পনা করতে চলতি সপ্তাহে দোহায় সহযোগী দেশগুলোর সাথে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড একটি সম্মেলনের আয়োজন করার পর রুবিও এই মন্তব্য করলেন।

গত সপ্তাহে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, গত নভেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই বাহিনী অনুমোদনের পর আগামী মাসেই আন্তর্জাতিক সৈন্য গাজায় মোতায়েন হতে পারে। তবে হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে তা এখনও অস্পষ্ট। এছাড়া, আইএসএফ-এ সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে এমন দেশগুলো এই ভয়ে আছে যে, হামাস তাদের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

রুবিও নির্দিষ্ট করে বলেননি যে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব কার হবে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, যেসব দেশ সৈন্য দিতে আগ্রহী তারা এই বাহিনীর সুনির্দিষ্ট ম্যান্ডেট এবং অর্থায়ন সম্পর্কে জানতে চায়।

রুবিও বলেন, ‘কাউকে চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দিতে বলার আগে আমার মনে হয় আমাদের আরও কিছু উত্তর দেওয়া উচিত। তবে আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, এমন বেশ কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যারা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তারা এই স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশ হতে ইচ্ছুক।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তান এই বাহিনীতে আগ্রহ প্রকাশকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

রুবিও আরও যোগ করেন যে, গাজা পুনর্গঠনের জন্য দাতাদের তহবিল নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। পুনর্গঠন তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি দাতা সম্মেলনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বলেন, ‘আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে জেনে কে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে? তারা (দাতারা) জানতে চায় গাজার দায়িত্বে কে আছে এবং তারা সেখানে নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার উপকূলে আবার তেলের ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ঘোষিত ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে। তাঁর এমন ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় এই অভিযান চালানো হলো।

এর আগে গত সপ্তাহে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দের পর এটি দ্বিতীয় ঘটনা। তবে এই ট্যাংকারের নাম বা নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে পেন্টাগন বা হোয়াইট হাউস এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্টগার্ড এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আগের অভিযানকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল মাদুরো সরকার।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবরোধ ঘোষণার পর থেকে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানিতে ধস নেমেছে। আটকের ভয়ে ভেনেজুয়েলার জলসীমার ভেতরে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল নিয়ে বহু ট্যাংকার নোঙর করে আছে।

গত সপ্তাহের অভিযানের পর থেকে দেশটির অপরিশোধিত তেল রপ্তানি আরও কমেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দৈনিক প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সরবরাহ বন্ধ হবে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় এশীয় ও ইউরোপীয় বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া উপকূলে ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ নামে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ২৬টি সামরিক হামলা চালিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো অভিযোগ করেছেন, এই অবরোধ ও সামরিক তৎপরতা আসলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল সম্পদ দখলে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা।

ভেনেজুয়েলার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। ডিসেম্বরে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, যা এখন চরম ঝুঁকির মুখে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ডেমোক্র্যাট কিছু কংগ্রেসম্যান ‘যুদ্ধের শামিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, শিগগির ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে স্থল হামলাও শুরু হতে পারে।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে দেশটির তেল কিনতে আগ্রহী ব্যবসায়ী ও শোধনাগারগুলো তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ ব্যবহার করে আসছে। এসব ট্যাংকার নিজেদের অবস্থান গোপন রাখে এবং অনেক ক্ষেত্রে ইরান বা রাশিয়ার তেল পরিবহনের জন্য নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সরকারি অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নিকাব বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই নারী চিকিৎসক নুসরাত পারভীন নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেননি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি কাজে যোগদান করেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাটনার সিভিল সার্জন অবিনাশ কুমার সিং। এমনকি তাঁর বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

পাটনার সিভিল সার্জন জানান, নুসরাত পারভীনের কাজে যোগদানের শেষ সময় ২০ ডিসেম্বরের পর আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন সময়সীমা কত দিন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, ‘তিনি সোমবার যোগ দেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।’

নুসরাত পারভীনের পাটনা সদরের সাবলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেখানকার সার্জন বিজয় কুমার জানিয়েছেন, আজ ৫-৬ জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও নুসরাতের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তাঁর নিয়োগপত্র এখনো সেখানে পৌঁছায়নি।

নুসরাত পারভীন পাটনার সরকারি তিব্বি কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, নুসরাত সর্বশেষ ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর কলেজে এসেছিলেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত মিডিয়া কাভারেজ এড়াতে চাইছেন। এই বিতর্কের কারণে নুসরাত আদৌ চাকরিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।

এদিকে নুসরাতের পরিবার কলকাতায় চলে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের ওপর নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি করা বিতর্কে বিরক্ত।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাটনায় আয়ুশ চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, নুসরাত পারভীন নিয়োগপত্র নিতে মঞ্চে এলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর মুখের নিকাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একপর্যায়ে তা টেনে সরিয়ে দেন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান। তবে তিনি এই ঘটনাকে ‘বিতর্ক’ বলতে নারাজ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাবা ও মেয়ের মধ্যে কি কোনো বিতর্ক হতে পারে? নীতীশ কুমার নারী শিক্ষার্থীদের নিজের মেয়ের মতো মনে করেন। আপনারা বিষয়টিকে কোথায় নিয়ে গেছেন?’

তবে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত