Ajker Patrika

আস্থা ভোটে হারলেন প্রধানমন্ত্রী দহল, নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কি ফিরবে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ২২: ০৩
আস্থা ভোটে হারলেন প্রধানমন্ত্রী দহল, নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কি ফিরবে

সংসদে আস্থা ভোটে হেরে গেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল। আজ শুক্রবার তাঁর জোট সরকারের বৃহত্তম শরিক দল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আস্থা ভোটে টিকতে পারলেন না তিনি। ফলে মাত্র ১৯ মাস ক্ষমতার থাকার পর অফিস ছাড়তে হচ্ছে তাঁকে। 

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে ভোটে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্ধেকের বেশি সদস্যের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল। 

ভোট শেষে পার্লামেন্টের স্পিকার দেব রাজ ঘিমিরে ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পড়েছে মাত্র ৬৩টি ভোট। ১৯৪ জন সদস্য তাঁর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ভোট শেষে ভবন ত্যাগের আগে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে দহলকে করমর্দন করতে দেখা যায়। 

বিধি অনুযায়ী, এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নতুন সরকার গঠনের আগপর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন দহল। সংসদের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর নেপালের প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি নতুন সরকারের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলবেন।

জোট সরকারের প্রধান মিত্র, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনিফাইড মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) গত সপ্তাহে সমর্থন প্রত্যাহার করে দেশের বৃহত্তম দল নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই প্রধানমন্ত্রী দহলকে সংসদে একটি আস্থা প্রস্তাব আনতে হয়। নেপালি কংগ্রেস নতুন জোট গঠন করেছে। জোট ইতিমধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খড়গা প্রসাদ অলিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছে।

জোট ভেঙে যাওয়ার কোনো কারণ এর আগে স্পষ্ট হয়নি। হঠাৎ করেই শরিক দলটি দহলের সঙ্গ ছাড়ার ঘোষণা দেয়। 

যাহোক, দলটির নেতা খড়গা প্রসাদ অলিকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিল নেপালি কংগ্রেস। এতেই বর্তে গেছেন তিনি। দহল সরকারের পতনের এটিই কারণ। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিবর্তন এখন নেপালের জন্য ভালো হতে পারে। কারণ, দুটি বৃহত্তম দল সরকার পরিচালনায় থাকলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসতে পারে।

যেখানে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তনের কারণে নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দীর্ঘদিন ধরে অধরা থেকে গেছে। দহল গত ১৬ বছরের মধ্যে ১৩তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। 

আগের দৃষ্টান্ত টেনে বিশ্লেষকেরা এ-ও বলছেন, ইতিহাসের দিকে তাকালে বড় দলের জোট সরকারে থাকলেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এ দেশে জোট সরকার বেশি দিন টেকে না। এ ধরনের সরকার বরং আরও বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে। 

 ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দহল একটি নড়বড়ে জোটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সরকারে তাঁর দলের অবস্থান তৃতীয়। এমন দুর্বল অবস্থানে থেকেও তিনি জোট গঠন করে এর নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হন। জোটের শরিকদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে পাঁচবার সংসদে আস্থা ভোট চাইতে হয়েছে তাঁকে।

২০০৬ সালে দহলের মাওবাদী সংগঠন সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেয়। এরপর নেপালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। 

দহল প্রচণ্ড নামেও পরিচিত। তাঁকে কট্টর বামপন্থী বলে মনে করা হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সহিংস মাওবাদী কমিউনিস্ট বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এতে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং অনেকে নিখোঁজ হয়। 

মাওবাদীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ ছেড়ে ২০০৬ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শান্তি প্রক্রিয়ায় যোগ দেয় এবং মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে। দহলের দল ২০০৮ সালে সর্বাধিক সংসদীয় আসন পায় এবং দহল প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু এক বছর পরই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত