Ajker Patrika

এবার নিখোঁজ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কী আছে তাঁর ভাগ্যে

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬: ৪২
এবার নিখোঁজ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, কী আছে তাঁর ভাগ্যে

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে দেখা মিলছে না চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফুর। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকে ধারণা করছেন, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়তো দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছেন বা করেছেন। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ এখনো লি শ্যাংফুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চীনা কর্তৃপক্ষ ৬৫ বছর বয়স্ক লিং শ্যাংফুর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে এবং এ কারণে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে ভিয়েতনামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও লি সেই বৈঠক থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

তিন সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিত থাকা লি শ্যাংফু সম্ভবত দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের পরিণতি বরণ করেছেন—এমনটাই ভাবছেন অনেকে। কিন গ্যাং গত জুলাই মাসে শেষবারের মতো জনসমক্ষে হাজির হয়েছিলেন। তারপর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। পরে আগস্টে তাঁকে সরিয়ে তাঁর পূর্বসূরি ওয়াং ইকে আবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

লি শ্যাংফু ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা চীনের গণমুক্তি ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। লি শ্যাংফু পিএলএর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজি থেকে ১৯৮২ সালে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। পরে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন এবং চীনের সিচ্যাং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকেন্দ্রের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।

২০১৬ সালে লি চীনের সশস্ত্র বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। এই বাহিনী মূলত মহাকাশ ও সাইবার স্ফেয়ারে যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গঠিত। ২০১৭ সালে তাঁকে পিএলএর ক্রয় ইউনিটের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে লি চলতি বছরের মার্চে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। 

মন্ত্রী হিসেবে লি শ্যাংফু চীনের স্টেট কাউন্সিলের পাঁচ সদস্যের একজন, যাঁরা দেশের অন্যান্য মন্ত্রীর তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতাবান এবং মর্যাদাবান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে রি চলতি বছরের জুনে সিঙ্গাপুরে সাংগ্রি-লা প্রতিরক্ষা সংলাপে অংশ নেন। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বের তাঁর সমমর্যাদার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসোবোরন এক্সপোর্টের কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র লি শ্যাংফুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার জের ধরে সাংগ্রি-লা সংলাপে তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে হাত মেলানোর বাইরে কোনো কথাই বলেননি।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে শেষবারের মতো দেখা গেছে গত ১৫ আগস্ট। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো কাছাকাছি অনুষ্ঠিত একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে। এর দুই দিন পর তাঁকে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে দেখা যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করতে। এরপর তিনি বেইজিংয়ের একটি নিরাপত্তা ফোরামে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ২৯ আগস্ট। তারপর থেকেই লি’র আর দেখা মেলেনি।

কী আছে লি শ্যাংফুর ভাগ্যে

চলতি বছরের জুলাইয়ে চীন কর্তৃপক্ষ দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর রকেট ফোর্সের প্রধান লি ইয়চাওকে পদচ্যুত করে। সেই ঘটনার পর আগে বেশ কয়েক সপ্তাহ তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে পদচ্যুত করার আগে গত জুলাই মাস থেকে জনসমক্ষে অনুপস্থিত। পরে তাঁর জায়গায় তাঁর পূর্বসূরি ওয়াং ইকে আবারও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই শীর্ষ দুই নেতার অন্তর্ধানের বিষয়ে চীন সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।

গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের বার্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লি শ্যাংফু সেই সম্মেলনে উপস্থিত হননি, এমনকি সেই সম্মেলন আর আয়োজনই করা হয়নি। এ ঘটনার পরে লি’র ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে জল্পনা বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ভিয়েতনামি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ হ্যানয়কে জানিয়েছে যে তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফু শারীরিকভাবে সুস্থ নন। 

লি’র অন্তর্ধানের বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছেন জাপানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাম ইমানুয়েল। তিনি গত ৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে লেখেন, ‘সি চিনপিংয়ের মন্ত্রিসভা এখন আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস ‘কেউ কোথাও নেই’-এর মতো হয়ে গেছে।’ 

রাম ইমানুয়েল আজ শুক্রবার সকালের একটি টুইটে আরও উল্লেখ করেন, তিন সপ্তাহ ধরে লি’র কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না কিংবা তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। ধারণা করছি, তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো মুখ খোলেনি চীনা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৬
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। দীর্ঘ দুই বছর পর এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠটি পুনরায় চালু হলো। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রূপ আর দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নয়। দেখলে মনে হবে যেন একটি বিশাল উদ্বাস্তু শিবির।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো প্রায় ৫০০ বাস্তুচ্যুত পরিবারের আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময়ের বিশাল লেকচার হলের জায়গায় এখন সারি সারি তাঁবু টাঙানো।

২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

সেখানে আশ্রয় নেওয়া একজন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলে এখানে এসেছি। কিন্তু এটি শিক্ষার জায়গা, আশ্রয়কেন্দ্র নয়। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই বিদ্যাপীঠের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।’

ইউনেসকোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ একে ‘স্কলাস্টিসাইড’ বা পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজাভিত্তিক আল-মেজান সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ১৩৭টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, ৭৬০ জন শিক্ষক এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক নিহত হয়েছেন।

গাজার সর্বশেষ সচল বিদ্যাপীঠ ইসরা ইউনিভার্সিটিকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে মাত্র চারটি সচল শ্রেণিকক্ষে বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদেল আওয়াদুল্লাহ জানান, ভাঙা দেয়ালগুলো প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, তাই আমরা ধার করা জেনারেটর চালিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সচল রাখার চেষ্টা করছি।’

মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইউমনা আলবাবা বলেন, ‘আমি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটি তেমন নয়। মনোযোগ দেওয়ার মতো পরিবেশ বা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম—কোনোটিই এখানে নেই। তবুও আমি খুশি যে সশরীরে ক্লাস করতে পারছি। আমরা শূন্য থেকে সবকিছু গড়ার স্বপ্ন দেখছি।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গাজার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা মূলত ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি উপড়ে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও গাজার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির ১৭ বছরের কারাদণ্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। তোশাখানা বা রাষ্ট্রীয় উপহার ভান্ডারের মূল্যবান উপহার কম দামে কিনে নেওয়ার অভিযোগে আজ শনিবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। তবে ইমরান খানের আইনজীবীরা এই রায়কে ‘একপক্ষীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলছেন, বিবাদী পক্ষের কোনো বক্তব্য না শুনেই এই সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালত এই রায় দেন। সাজাটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছর কারাদণ্ড। এ ছাড়া কারাদণ্ডের পাশাপাশি উভয়কে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, ইমরান খান বর্তমানে জমি-সংক্রান্ত একটি দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই ১৭ বছরের কারাদণ্ড কার্যকর শুরু হবে।

এ মামলাটি মূলত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া অত্যন্ত দামি কিছু উপহার (বিলাসবহুল ঘড়ি) নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে—ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন উপহারগুলো তোশাখানায় জমা দেন। পরে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রাষ্ট্রীয় নিয়ম লঙ্ঘন করে কম মূল্যে সেগুলো তোশাখানা থেকে নিজের নামে কিনে নেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এর ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কয়েক মিলিয়ন রুপির ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের মুখপাত্র জুলফি বুখারি বলেছেন, এটি ন্যায়বিচারের নীতি লঙ্ঘন করে করা একটি ‘ফরমায়েশি রায়’।

এ রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার পাঞ্জাব প্রদেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।

ইমরান খানের আইনজীবী সালমান সফদর জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার জন্য তাঁদের আইনি দলকে নির্দেশ দিয়েছেন কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর দলের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর পরিবার বা আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি সেটলারদের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিস্তিনি গ্রামে মানবঢাল একদল স্বেচ্ছাসেবক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

প্রতিদিন সকালে কিশোর ইসরায়েলি সেটলাররা পাহাড়ের ওপর থেকে একপাল ছাগল তাড়িয়ে নিচের উপত্যকায় ফিলিস্তিনি গ্রাম রাস আইন আল-আউজার দিকে নিয়ে আসে।

এ সময় গ্রামের নারী, পুরুষ ও শিশুরা আশ্রয় নেয় তাদের কুঁড়েঘর ও তাঁবুর ভেতর। কোনো ফিলিস্তিনি যদি সামান্য প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সেখানে হাজির হয় ইসরায়েলি সেনা বা সীমান্ত পুলিশ। এরপর শুরু হয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। বিনা বিচারে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আটক তো আছেই।

বলা বাহুল্য, ইসরায়েলি সেটলারদের লক্ষ্য—তাদের গবাদিপশু দিয়ে গ্রামটি দখল করে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়া।

আশার কথা, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এহেন ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিরোধের শক্তি হয়ে সম্প্রতি হাজির হয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা পাহাড় থেকে নামতে থাকা ইসরায়েলি সেটলারদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের সরিয়ে দেন।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আজ শনিবারে রাস আইন আল-আউজা গ্রামের বাসিন্দাদের রক্ষাকারীদের মধ্যে ছিলেন চারজন ইসরায়েলি ইহুদি, একজন হাঙ্গেরিয়ান ও একজন মার্কিন নাগরিক। তাঁরা ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ির চারপাশে মানবঢাল তৈরি করে এগিয়ে আসা পশুগুলো তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি মেজর ও স্বেচ্ছাসেবী আমির পানস্কি বলেন, ‘সেটলাররা এমন সব উসকানি দেয়, যার ফলে ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়। আর সেটাকেই অজুহাত বানিয়ে তাদের ওপর চলে দমন-পীড়ন। আমরা এখানে সুরক্ষাকবচ হিসেবে আছি। আমরা আমাদের দেহকে ইহুদি সেটলার ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছি।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যতবার কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেন, ততবারই সেটলার রাখালেরা পাল্টা কৌশলে তাঁদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করে। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের একেবারে কাছে চলে যায়। স্বেচ্ছাসেবকেরা তখন হাত নেড়ে ও চিৎকার করে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকার চেষ্টা করেন।

এ সময় সেটলাররা মোবাইল ফোন উঁচু করে পুরো দৃশ্য ধারণ করে এবং সরাসরি মন্তব্য করতে থাকে। অন্যদিকে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের দেহে লাগানো থাকে বডি ক্যামেরা, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা করার ভুয়া অভিযোগ না ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত