Ajker Patrika

এক দশকের মধ্যে বৃহত্তম বিক্ষোভ, এরদোয়ানের বিরুদ্ধে কেন খেপলেন তুর্কিরা

অনলাইন ডেস্ক
তুরস্কে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান প্রয়োগ করছে পুলিশ। ছবি: এএফপি
তুরস্কে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান প্রয়োগ করছে পুলিশ। ছবি: এএফপি

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক। এক দশকের মধ্যে এত বড় বিক্ষোভ দেখেনি দেশটি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা–গ্রেপ্তারের হুমকি উপেক্ষা করে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হচ্ছেন ইমামোগলুর সমর্থকেরা।

গত ১৯ মার্চ ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের দিনই ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমায়েত বেড়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে গত শনিবার।

বিক্ষোভ বড় হয়ে এখন পরিণত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের জমায়েতে। বিরোধী নেতা ওজগুর ওজেল দাবি করছেন, বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। ইস্তাম্বুল থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে। আঙ্কারায় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দিন ধরেই ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে বিক্ষোভকারীদের। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছে। কিন্তু তাতে দমছে না বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের দিকে পাল্টা পাথর ও আগুনের ফ্লেয়ার ছুড়ছে তারা।

কিন্তু কেন এত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন তুরস্কের নাগরিকেরা? আজ সোমবার ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে বিক্ষোভ, দিন দিন জমায়েত আরও বড় হচ্ছে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ—ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী। তাঁর সমর্থকদের মতে, এই গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া।

উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারের একদিন আগে, ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় ইমামোগলুর ডিগ্রিও বাতিল করেছে। ডিগ্রি না থাকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সাইপ্রাসের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তাঁর ডিপ্লোমায় অনিয়ম পাওয়া গেছে।

ইমামোগলুর রাজনৈতিক দল সিএইচপি যখন ২০২৮ সালের নির্বাচনের জন্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিল।

তবে, অনেক বিক্ষোভকারী বলছেন, এই আন্দোলন শুধু ইমামোগলুর জন্য নয়; এটি গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বড় ধরনের অসন্তোষের প্রতিফলন।

বিক্ষোভকারীদের ‘রাস্তার মাস্তান’ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আদালতের বিপক্ষে গিয়ে চুরি, দুর্নীতি ও প্রতারণার পক্ষ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। আমরা আগেও কখনো রাস্তার সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।’

তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, শুধু গত শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে ৩২৩ বিক্ষোভকারী। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

গত ১৯ মার্চ দুর্নীতির অভিযোগে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি অভিযোগ আনা হয়, তিনি একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—যারা জালিয়াতি, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং ঘুষ লেনদেন করেছে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে—এমন অভিযোগও আনা হয়েছে। পিকেকে বহু আগে থেকেই তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত একটি সংগঠন।

সরকারি কৌঁসুলিরা ইমামোগলুকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ‘অপরাধী সংগঠনের সন্দেহভাজন নেতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তাঁরা। তবে আদালতের নথি বলছে, ইমামোগলুসহ আরও ২০ জনকে শুধু দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আনা ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তা’ করার অভিযোগটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, ‘যদিও সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার বিষয়ে জোরালো সন্দেহ রয়েছে, তবে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তাঁকে শুধু ওই মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইমামোগলু। গত শনিবার আদালতে তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আমি এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’ নিজের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে তুর্কিদের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন এই নেতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

৫৩ বছর বয়সী একরেম ইমামোগলু ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। তিনি রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)–এর সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে, নানামুখী অস্থিরতায় আগাম নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত