রুশ-জার্মান সম্পর্কের পক্ষে ছিলেন মেরকেল, ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির বিপক্ষে

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। ফাইল ছবি

জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর করা গ্যাস চুক্তিগুলো জার্মানির ব্যবসা এবং মস্কোর সঙ্গে শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ২০০৮ সালে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে বাধা না দিলে, যুদ্ধ আরও অনেক আগেই শুরু হতে পারত।

মেরকেল বলেছেন, ‘যদি ২০০৮ সালে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পথে এগিয়ে যেত, তবে আমরা আরও আগে সামরিক সংঘাতে জড়াতাম। প্রেসিডেন্ট পুতিন এটি মেনে নিতেন না। তা ছাড়া, সেই সময় ইউক্রেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মতো প্রস্তুতও ছিল না।’

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি মেরকেলের এই সিদ্ধান্তকে একটি ‘ভুল হিসাব’ বলে মনে করেন। তার মতে, মেরকেলের পদক্ষেপ রাশিয়াকে আরও আগ্রাসী করে তুলেছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, মেরকেলের আমলে জার্মানি রাশিয়ার সঙ্গে দুইটি সরাসরি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করেছিল। জার্মানির জ্বালানি খাত এই পাইপলাইনগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তবে ওই দুটি চুক্তিকে পুতিনের ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র বলে অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি।

মেরকেল দাবি করেছেন, ওই প্রকল্পগুলোর দুটি উদ্দেশ্য ছিল—প্রথমত, জার্মানির ব্যবসায়িক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা এবং দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।

তবে সেই সময় পূর্ব ইউরোপের ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো মেরকেলের এমন নীতির কঠোর বিরোধিতা করেছিল। পোল্যান্ডের সংসদ সদস্য রাদোস্লভ ফগিয়েল বলেছেন, ‘জার্মানির গ্যাসের টাকা রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিলকে আরও শক্তিশালী করেছে।’

মেরকেল কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়ার হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। যদিও সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। সম্প্রতি রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে জার্মান শিল্প এখন উচ্চ মূল্যের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে চাপের মধ্যে রয়েছে।

এদিকে, ২০১৫ সালে জার্মানিতে ১০ লাখের বেশি আশ্রয়প্রার্থী প্রবেশেরও অনুমতি দিয়েছিলেন মেরকেল। এটিকে তাঁর আমলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর জন্য মেরকেল প্রশংসিতও হয়েছিলেন। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, মেরকেলের ওই নীতি জার্মানিতে ডানপন্থী এএফডি পার্টির উত্থান ত্বরান্বিত করেছিল। বর্তমানে জার্মান জনমত জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এএফডি। অভিবাসন বিরোধিতাই এই দলের মূল স্লোগান।

এএফডি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, মেরকেল স্বীকার করলেও নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষেই কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, অবৈধ অভিবাসন ঠেকানো এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোই ডানপন্থীদের মোকাবিলার উপায়।

অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের নেতৃত্বে জার্মানি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে দেশটিকে ‘ইউরোপের রুগ্‌ণ ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, মেরকেলের আমলে ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করার মতো দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার গৃহীত হয়নি বলেই জার্মানির আজ এমন পরিণতি।

বর্তমানে ইউরোপের নেতারা যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছেন। মেরকেল মনে করেন, একনায়কী কৌশল মোকাবিলা করতে শক্তিশালী অগ্রাধিকার ও স্পষ্ট যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি জানান, রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর ক্ষমতা বা রাজনৈতিক জীবনের প্রতি তাঁর আর কোনো অনুরাগ নেই।

নিজ আমলে মেরকেল শান্তি বজায় রাখার এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন। তবে বর্তমানের সংকটময় পরিস্থিতিতে তার নীতি ও সিদ্ধান্তের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত