উগ্র ডানপন্থীদের উত্থানে ভয়ে আছে ফ্রান্সের মুসলিম জনগোষ্ঠী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ২০: ৫৫
Thumbnail image

গত রোববার (৩০ জুন) অনুষ্ঠিত ফ্রান্সের নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছে। প্রথম ধাপের এই নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, দেশটিতে উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালির ক্ষমতায় আসার পথ অনেকটাই সুগম হয়েছে। তবে এই বিষয়টি ফ্রান্সে বসবাস করা লাখ লাখ মুসলিমের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

মঙ্গলবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে নির্বাচন-পরবর্তী ফ্রান্সের মুসলিম সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে ফ্রান্সে বসবাস করা ফাতিমাতা নামে ২২ বছর বয়সী এমন এক নারীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল-জাজিরাকে ফাতিমাতা বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, ফ্রান্স আমাকে প্রতারিত করেছে। এটা জেনে কষ্ট পেয়েছি যে,১ কোটি ৬০ হাজার মানুষ এমন একটি দলকে ভোট দিয়েছে, যে দলটি হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রচারণা চালায়।’ 

মৌরিতানিয়ান এবং সেনেগালিজ বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া ফাতিমাতা প্যারিসের এমন একটি শহরতলিতে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে অসংখ্য অভিবাসী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বসবাস করেন। হিজাব পরা এই নারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। ১৩ বছর বয়সেই তিনি ফরাসি নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। 

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালির নেতৃত্বে রয়েছেন মেরি লে পেন। সম্প্রতি তাঁর ডান হাত হিসেবে খ্যাত ২৮ বছর বয়সী জর্ডান ব্রান্ডেলা হিজাবকে ‘বৈষম্যের বস্তু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ব্রান্ডেলাই হতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্রান্ডেলা এটাও বলেছিলেন, দল ক্ষমতায় আসলে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তিদের কখনোই দেশের কৌশলগত পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হবে না। 

রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ দেশটিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই কৌশল তাঁর দলের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ (৩৩.১৫ শতাংশ) ভোট পেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে লে পেনের ন্যাশনাল র‍্যালি। অন্যদিকে ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থী দল মাত্র ২০.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। 

ফ্রান্সে বসবাস করা আলজেরীয় বংশোদ্ভূত ২৭ বছর বয়সী ইলিয়াস মার্কেটিংয়ে চাকরি করেন। তিনি জানালেন, নির্বাচনের এমন ফলাফল দেখে অসংখ্য মুসলিম ফ্রান্স ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। 

দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে ব্রান্ডেলার বক্তব্যগুলো এখন হতাশা তৈরি করেছে ১৮ বছর বয়সী আলজেরীয় বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী তিজিরি মাসাউদেনের মাঝেও। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল র‍্যালি বলছে, দ্বৈত নাগরিকেরা রাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানগুলোতে থাকতে পারবেন না। এই নীতি ফ্রান্সে আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেবে। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছি এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে কাজ করার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু ন্যাশনাল র‍্যালির বিলটি পাস হলে আমার পড়াশোনার আর কোনো মূল্যই থাকল না।’ 

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালি একসময় ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭২ সালে মেরি লে পেনের বাবা জ্যঁ মেরি লে পেন এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত