Ajker Patrika

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বিরুদ্ধে ৪৭ ব্রিটিশ এমপিকে ‘সন্দেহজনক’ ই-মেইল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫৩
ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত
ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য সফররত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে ‘অপদস্থ’ করতে পরিকল্পিতভাবে ‘ভুয়া তথ্য’ প্রচার করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন একদল ব্রিটিশ এমপি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে আহসান এইচ মনসুর গভর্নর নিযুক্ত হন। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার অর্থের অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একদল সদস্যের সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তাঁর সহযোগীদের পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে ফেরাতে আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাহায্য চাইছেন। তাঁর ধারণা, পাচার করা সম্পদের কিছু অংশ হয়তো যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার ভাগনি ও ব্রিটেনের বর্তমান লেবার সরকারের সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সহযোগীদের কাছ থেকে সম্পদ গ্রহণ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ব্রিটেনের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চলতি বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে। এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, আহসান এইচ মনসুরকে কেন্দ্র করে লেখা একটি নিবন্ধসহ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে ই-মেইল পেয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা। তাঁদের আশঙ্কা, ভুয়া সাংবাদিকদের লেখা নিবন্ধ পাচার অর্থ উদ্ধারে ঢাকার চেষ্টায় লন্ডনের সহায়তায় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ‘আপাত’ কুৎসা রটানোর প্রচারণা।

আজ সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৪৭ সদস্যের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) অন রেসপনসিবল ট্যাক্স অ্যান্ড করাপশনের সদস্যদের সঙ্গে আহসান এইচ মনসুরের বৈঠক হওয়ার কথা আছে। এর ঠিক আগেই গ্রুপের সদস্যরা সবাই ই-মেইলটি পান।

সেই ই-মেইলের প্রেরক নিজেকে একজন সাংবাদিক দাবি করেছেন এবং এমপিদের কাছে ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট’ নামের একটি ওয়েবসাইটের লিংক পাঠিয়েছেন। আহসান মনসুরের মেয়ের কথিত ‘ধনসম্পদে’র খবর প্রকাশ করার পরও কেন তদন্ত করা হচ্ছে না, তা নিয়ে ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত দুটি নিবন্ধ পাঠিয়েছেন ওই কথিত সাংবাদিক।

নিবন্ধ দুটির কথিত লেখকদের ‘সাংবাদিক’ হিসেবে উল্লেখ ছাড়া অন্য কোনো পরিচিতি ই-মেইলে উল্লেখ নেই। দ্য গার্ডিয়ান যাচাই করে দেখেছে, এই দুই কথিত সাংবাদিক তাঁদের প্রোফাইলে যে ছবি ব্যবহার করেছেন, তা আসলে অনলাইন থেকে নেওয়া অন্য ব্যক্তির ছবি। আহসান এইচ মনসুর এবং কমিটির সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এই ই-মেইলগুলো একটি সুসংগঠিত অপতথ্য প্রচারণার অংশ।

সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তাধীন ব্যক্তিরা ‘আমার খ্যাতি বিনষ্ট করতে এবং বিভিন্নভাবে আমাকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর’ চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, তাঁর মেয়ে মার্কিন নাগরিক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

এপিপিজির সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক ‘পালাটাইন কমিউনিকেশনস’ নামের একটি ব্রিটিশ জনসংযোগ সংস্থা থেকে আরেকটি ই-মেইল পান। সেখানেও ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের লিংক ছিল। এই ই-মেইলে বলা হয়েছে, আহসান এইচ মনসুর যদি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে প্রস্তুত থাকেন, তবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তিনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে কখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

রুপা হক বলেছেন, এমন ই-মেইল পাওয়া ‘খুবই অস্বাভাবিক’ এবং তিনি বিষয়টিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে করা বিক্ষোভের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, এই দুটি কাজই ‘পার্লামেন্ট এবং এমপিদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটাতে ভয় দেখানো এবং হস্তক্ষেপ করার জন্য ডিজাইন করে করা হয়েছে।’

জানা গেছে, এপিপিজির সদস্যরা ই-মেইলগুলো পার্লামেন্টারি সাইবার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেই সঙ্গে সংসদীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে পাঠিয়েছেন। তাঁরা এই অপতথ্যের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।

এপিপিজির সদস্য ও এমপি ফিল ব্রিকক বলেছেন, ‘যদি এমন হয় যে এই যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুতর দুর্নীতি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা, তাহলে আমি মনে করি, আমাদের খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট পার্লামেন্টারি কর্তৃপক্ষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি—এর পেছনে কে অর্থায়ন করেছে এবং কেন, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, যাতে আমরা কীভাবে নিজেদের সর্বোত্তমভাবে রক্ষা করতে পারি।’

পালাটাইন কমিউনিকেশনসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাদের ক্লায়েন্টের নির্দেশাবলি গোপনীয়। ই-মেইলটির বিষয়ে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নিবন্ধের লেখক কারা, সে সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই এবং এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কও নেই, তবে আমরা কখনোই দাবি করিনি যে, এটি একেবারে সত্য। অনেক গণমাধ্যমের অসংখ্য নিবন্ধের মতো, এটি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বৈধ উদ্বেগ উত্থাপন করে, যা আমরা মনে করি এমপিদের বিবেচনাযোগ্য।’

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের এক মুখপাত্র বলেছেন, নিবন্ধগুলোর প্রকৃত লেখক ‘পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন’ এবং তাঁরা আত্মবিশ্বাসী যে বিষয়বস্তু ‘যথেষ্ট নির্ভুল’।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

ভারতকে ভয়ংকর মাদক ফেন্টানিলের কাঁচামাল সরবরাহকারী বলল তুলসী গ্যাবার্ডের দপ্তর

বাংলাদেশকে ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে রাফিনহাকে বিনয়ী হতে বললেন এনজো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত