লেপার্ড ট্যাংকও পুড়িয়ে দেওয়া হবে: রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ১৫
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪২

ইউক্রেনে আমেরিকা ও রাশিয়ার ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণার নিন্দা করেছে রাশিয়া। মস্কো এটিকে ‘স্রেফ উসকানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, সরবরাহ করা এসব ট্যাংক ধ্বংস করা হবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক মুখপাত্র বলেছেন, ট্যাংকগুলোকে বাকি সবগুলোর মতোই পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এগুলো শুধু খরচই বাড়িয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে ৩১টি শক্তিশালী এম-১ আব্রামস ট্যাংক পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এর কিছু সময় আগেই জার্মানিও ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেয়। 

গতকাল সকালে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে কীভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা যায়, এই সিদ্ধান্ত তার একটি নমুনা।’ এ সময় লেপার্ড ট্যাংক ব্যবহারকারী ইউরোপের অন্য দেশগুলোর ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় জার্মানি। জার্মানির আইনে বলা আছে, জার্মান লেপার্ড ট্যাংক ব্যবহারকারী দেশগুলোর অন্য দেশে এই ট্যাংক পাঠাতে বার্লিনের অনুমতি লাগবে। জার্মান আইনের অধীনে পোল্যান্ড বা ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো এসব ট্যাংক পুনরায় রপ্তানি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। 

চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে ট্যাংক চেয়ে জোরালোভাবে আবেদন করছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আমেরিকা ও জার্মানির ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন পশ্চিমারা। দুই মিত্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেন। তাদের বিশ্বাস, এর ফলে নিজেদের সামরিক বাহিনীতে গতি ফিরে আসতে এবং মস্কোর আক্রমণের প্রায় এক বছর পর ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল ফিরে পেতে সহযোগিতা করবে। ইউক্রেন বলছে, এসব ট্যাংক আগামী বসন্তে সম্ভাব্য রুশ হামলা প্রতিহত করতে সহায়তা করতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধে জয়ের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আজ মুক্ত বিশ্ব একটি অভিন্ন লক্ষ্য—ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য আগের মতো ঐক্যবদ্ধ।

এদিকে ট্যাংক পাঠানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, পুতিন আশা করেছিলেন যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংকল্প দুর্বল করবেন। তিনি শুরু থেকেই ভুল পথে এগোচ্ছেন। এখনো তিনি ভুল পথেই হাঁটছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে যুদ্ধে এই ট্যাংকগুলোকে কার্যকরভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জামও দিচ্ছি। ট্যাংকগুলো ইউক্রেনকে তাদের ভূমি সুরক্ষায় সহায়তা করবে। এগুলো রাশিয়ার জন্য আক্রমণাত্মক হুমকি নয়।’ বাইডেন আরও বলেন, ইউক্রেন সেনাদের একেকটি ব্যাটালিয়নে ৩১টি ট্যাংক থাকে, সে জন্য তাদের ৩১টি ট্যাংক দেওয়া হচ্ছে। 

লেপার্ড-২ ট্যাংকঅবশ্য এর আগে অনেকটা ভিন্ন সুরেই কথা বলেছিল বাইডেন প্রশাসন। তারা বলে আসছিল, ভারী এম-১ আব্রামস ট্যাংকগুলো সরবরাহ করা কঠিন, রক্ষণাবেক্ষণ করা ব্যয়বহুল এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের পরিচালনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। 

জার্মানির নির্মিত লেপার্ড-২ ট্যাংকগুলো সেনাবাহিনীর ভান্ডার থেকে সরবরাহ করা হবে এবং দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সেগুলো ইউক্রেনে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই জার্মান ট্যাংকগুলোকে যুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর ট্যাংক হিসেবে মনে করা হয়। এক বিবৃতিতে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ইউক্রেনকে দুই ব্যাটালিয়ন লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে জার্মান সেনাবাহিনীর ভান্ডার থেকে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়া হবে। এ ট্যাংক পরিচালনার জন্য ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণও দেবে বার্লিন। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের জন্য আরও ২৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজে আরও সাঁজোয়া যান ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফিনল্যান্ড নতুন করে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণের অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর মধ্যে জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক ছিল না। তখন জার্মানি বলেছিল, সবাই মতৈক্য হলেই এই ট্যাংক পাঠানো যাবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রায় ১১ মাস। ন্যাটোর সামরিক ব্যক্তিরা মনে করছেন মস্কো গত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নতুন করে সেনাসমাবেশ শুরু করেছে। তারা নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। তবে শিগগিরই রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে পিছু হটাতে ইউক্রেনের সামনে বড় রকমের সুযোগ আসবে বলে মনে করছেন পশ্চিমারা। তাঁদের ধারণা মস্কোর গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষিত সেনার অভাব রয়েছে। 

স্বাভাবিকভাবেই ইউক্রেন ও এর মিত্রদের কথা সমর্থনে নারাজ রাশিয়া। এই যুদ্ধে ন্যাটোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়ে সতর্ক করে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ট্যাংক সরবরাহে যুদ্ধের বর্তমান গতিপ্রকৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। গত সপ্তাহে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না, বরং এটি ইউক্রেন ও দেশটির জনগণের সমস্যা বাড়াবে।’

আরও পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত