ভারতে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯: ১২

ভারতে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ (ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন) বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ অগ্রসর হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়ে বুধবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা। এর উদ্দেশ্য হলো, একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও এ পদক্ষেপ কার্যকর করার পক্ষে বহুদিন ধরে কথা বলে আসছে মোদি সরকার। তাদের যুক্তি, বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন গ্রহণ প্রক্রিয়ায় খরচ ও প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে গোটা দেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতেই এ সিদ্ধান্ত। আবার বিরোধীদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরোধী। এরই মাঝে বুধবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জানান, বিভিন্ন মঞ্চে আলোচনার পরেই এ-সংক্রান্ত কোবিন্দ কমিটির সুপারিশ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

প্রস্তাবিত এই নির্বাচনী ব্যবস্থার বিপক্ষে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘মনোযোগ সরানোর জন্য এটা বিজেপির একটা কৌশল।’ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘এটি বিজেপির আরও একটি গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ।’ 

সব ঠিক থাকলে পার্লামেন্টের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে পেশ হতে পারে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিল। যদিও তার জন্য সংবিধানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী করতে হবে। এর পাশাপাশি সংসদের দুই কক্ষে এই বিল পাস করানোর পথ কতটা সহজ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। 

সমাজতত্ত্ববিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার আশিস নন্দী বলেন, ‘আমি মনে করি, এতে সময় ও উদ্যম নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরতি জেরত বলেন, ‘এবার কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আসেনি বিজেপি সরকার। তাই লোকসভায় এই বিল পাস করানো সহজ হবে না। আর যদি তা হয়েও যায়, তাহলেও রাজ্যসভায় পাস করা নিয়ে সংশয় আছে।’ 

প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। এর মধ্যে নোট বাতিল, ৩৭০ ধারা বিলোপ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), ভারতীয় ন্যায় সংহিতা কার্যকরের মতো বিষয়গুলোও রয়েছে। তৃতীয় দফায় এনডিএর জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ক্ষমতায় এসেও সেই ধারায় ছেদ পড়ল না। 

গত আগস্টে ওয়াকফ সংশোধনী বিল লোকসভায় পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে বিরোধীদের অনড় অবস্থানের জেরে শেষ পর্যন্ত তা আলোচনার জন্য যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটিতে (জেপিসি) পাঠাতে হয়। 

এবার মোদি সরকারের নজরে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাব। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই দফায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। প্রথম দফায় লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হবে। তার ১০০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে পৌরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন। একটাই নির্বাচনার তালিকা হবে। 

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ঐকমত্য গড়তে সচেষ্ট সরকার। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিল প্রস্তুত করা হবে। আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য ‘রূপায়ণ কমিটি’ গঠন করা হবে। বৈষ্ণব বলেন, ‘১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একযোগে নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ল কমিশনও তাদের রিপোর্টে সুপারিশ করেছিল একযোগে নির্বাচন করার।’ 

এই প্রস্তাবের পেছনে যুক্তি হিসেবে অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘নির্বাচনে খুব বেশি খরচ হয়, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়; যা হওয়ার কথা নয়। যাঁরা চান যে উন্নয়ন দ্রুত হোক, তাঁরা যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ফলে বাধাগ্রস্ত না হন, সে জন্যই এই এক দেশ, এক নির্বাচন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত