যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত করেছেন মোদি: মমতা

কলকাতা, ২০ মে: করোনা মোকাবিলায় ভিডিও বৈঠক নিয়েও ভারতে রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিতর্কের নেতৃত্বে সেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বৃহস্পতিবার মোদির ডাকা ভিডিও-বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, সেই বৈঠকে রাজ্যের তরফে কোনো বক্তব্য রাখতেই দেননি প্রধানমন্ত্রী। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, সংসদীয় শিষ্টাচার ভুলে মমতা  এখন গণমাধ্যমের সহানুভূতি আদায় করতে চাইছেন। বিজেপিবিরোধীরা অবশ্য মমতাকেই সমর্থন করছেন।

ভারতের কোভিড পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। পুরো দেশে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। করোনার পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস-এর সংক্রমণও ছড়াচ্ছে ভারত। কলকাতাতেও ৫ জন আক্রান্ত বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার । এই অবস্থায় করোনা টিকাকরণ নিয়ে চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশীয় রাজ্যগুলোকে প্রয়োজনমতো টিকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের ১০টি রাজ্যের সরকার ও কিছু জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও বৈঠক করেন মোদি। বৈঠকে তিনি নির্দেশ দেন, গ্রামাঞ্চলে কোভিড নিয়ে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। গ্রামাঞ্চলে বাড়াতে হবে পরীক্ষা। সেইসঙ্গে তিনি জানান, কোভিড টিকাকরণের ক্যালেন্ডার বানানো হচ্ছে। সেইমতো সবাই টিকা পাবেন। টিকা অপচয় বন্ধের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের কথা বলতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। বৈঠকের পরই সংবাদ সম্মেলন ডেকে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। তাঁর মূল অভিযোগ, রাজ্যগুলোর কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কথাই শুনতে চাননি প্রধানমন্ত্রী। মমতার মতে, ৩০ হাজার কোটি রুপি কেন্দ্র দিলে সবাই বিনা পয়সায় টিকা পেতেন। সেটা বলারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।

ভিডিও বৈঠক নিয়েও মমতার সঙ্গে মোদির বিরোধ আরও তীব্র হলো। মমতার অভিযোগ, ‘উনি (মোদি) চেনা চার–পাঁচজনকে দিয়ে বলিয়ে নিজে বলে মিটিং শেষ করে দিলেন। আমি, আমরা মুখ্যমন্ত্রীরা স্তম্ভিত তাঁর অসৌজন্যে। আমাদের পুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমরা লজ্জিত।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মিটিংয়ে ডেকে একটা কথাও না বলতে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার শামিল।’

এদিকে, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার মমতার মন্ত্রিসভার ২ সদস্য ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখার্জিদের আজ বৃহস্পতিবারও জামিন হয়নি। একই সঙ্গে জেলের হেফাজতেই রয়েছেন বিধায়ক মদন মিত্র ও সাবেক মেয়র শোভন চ্যাটার্জি। তাঁদের জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে হাইকোর্টে আজ শুনানির কথা ছিল। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি না থাকায় শুনানি স্থগিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মমতা এদিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তোলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘ববি (ফিরহাদ), সুব্রতদাদের আটকে রেখেছে ওরা। আশা করি এর সঠিক বিচার হবে।’

মমতার অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। প্রদেশ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতে, ‘নারদ–কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়াদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশেই তদন্ত চলছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের সঙ্গে বিজেপির কোনো সম্পর্ক নেই।’ করোনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, গত বছরও রাজ্য সরকার ব্যর্থ হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। সঠিক তথ্য না দিয়ে লাশ গুম করেছে সরকার। মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরছে। এখন নিজেদের ব্যর্থতা কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।