অবৈধ অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ভারতের অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজক্লিকের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও লেখকের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ। 

আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ তাঁদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেছে বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে চীন থেকে অবৈধ অর্থায়ন পাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। যদিও নিউজক্লিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সমালোচকেরা বলছেন, এ পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ইচ্ছাকৃত আক্রমণ।

• মোদি ভয় পেয়ে গেছেন, নিউজক্লিক তল্লাশির জেরে কংগ্রেস

২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা নিউজক্লিক ওয়েবসাইটটি স্বাধীন সংবাদ ও চলমান ঘটনা প্রকাশ করে থাকে। তবে সরকারের সমালোচনার জন্য এই ওয়েবসাইট বেশি পরিচিত। ভারতের বিদেশি বিনিয়োগের নীতি ভঙ্গ করার দায়ে ২০২১ সালে কর কর্তৃপক্ষ নিউজক্লিকে অভিযান চালায়। 

যেসব সাংবাদিকের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে, তাঁরা হলেন ওয়েবসাইটের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ, সাংবাদিক অভিসার শর্মা, অনিন্দ্য চক্রবর্তী এবং ভাষা সিং, জনপ্রিয় ব্যঙ্গ লেখক সঞ্জয় রাজৌড়া এবং ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমি। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। 

এক্স প্ল্যাটফর্মে অভিসার শর্মা বলেন, পুলিশ তাঁর ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেছে। সাংবাদিক ভাষা জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁর ফোন জব্দ করেছে। অভিযানের বিষয়ে পুলিশের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, দিল্লিতে অবস্থিত ওয়েবসাইটটির কার্যালয়েও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। 

এ বিষয়ে বিবিসির মন্তব্যের আবেদনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র সুমান নালওয়া এবং বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেলে জানাবেন।

গত আগস্টে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ওয়েবসাইটটি ‘চীনা প্রচারণা’ চালানোর জন্য এক মার্কিন ধনিকের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। ওই অভিযোগের সূত্র ধরেই এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নেভিল রয় সিংহাম চীনা সরকারের গণমাধ্যমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিশ্বব্যাপী চীনা অপপ্রচার বিষয়ে অর্থায়ন করার জন্য তিনি তাঁর অলাভজনক সংগঠনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন।

১৭ আগস্ট এই ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে নিউজক্লিক সব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে।

রাজৌড়ার আইনজীবী ইলিন সারস্বত বিবিসিকে বলেন, পুলিশ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সময় রাত ১টার দিকে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়।   

অতীতে রাজৌড়া নিউজক্লিকে সরকারের সমালোচনা করে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরি করত। সারস্বত বলেন, পুলিশ তাঁর ল্যাপটপ, দুটি ফোন, তাঁর পুরোনো কাজের ডিভিডি এবং কিছু নথি জব্দ করে। 

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ বলছে, বর্তমান অভিযানে রাজৌড়ার নাম উল্লেখ নেই, কিন্তু যেহেতু তিনি এই ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই তাঁর ওপর তদন্ত করা হবে। আমাদের পুলিশ অভিযোগের কোনো অনুলিপি দেওয়া হয়নি।’  

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশটিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে কর কর্মকর্তারা ভারতে অবস্থিত বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় এবং সংস্থাটির ভারতে বাণিজ্য পরিচালনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।  

সাংবাদিকদের অধিকারবিষয়ক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এ বছরের মুক্ত গণমাধ্যমের তালিকায় ভারতকে ১৬১তম অবস্থানে রেখেছে। সংগঠনটি জানায়, ভারতের গণমাধ্যমের পরিস্থিতি ‘সমস্যাযুক্ত’ থেকে ‘অত্যন্ত শোচনীয়’ হয়েছে।