বিজেপির শুভেন্দুর কাছে খবর আছে, ঢাকা থেকে কলকাতা দখলে যাচ্ছে ৩ লাখ ‘হাতে টানা রিকশা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৩৭
শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে আবারও বক্তব্য দিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বলেছেন, তাঁর কাছে খবর আছে, বাংলাদেশ থেকে হাতে টানা ৩ লাখ রিকশা কলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আজ সোমবার শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমার কাছে খবর আছে, ঢাকা থেকে ৩ লাখ হাতে টানা রিকশা রওনা দিয়েছে কলকাতা দখল করার জন্য। আরে, ওদের আছেটা কী? রাফাল রাখা আছে হাসিমারায় (পশ্চিমবঙ্গের আলিদুয়ারপুর শহরে ভারতীয় বিমানঘাঁটি)।’

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় হাতে টানা রিকশা থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশের কোথাও হাতে টানা রিকশা নেই। বিশ শতকেরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকের দিকে বাংলাদেশে প্রথম রিকশার আমদানি হয়। তখনো বাংলাদেশে হাতে টানা রিকশা ছিল না বললেই চলে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রচলন হয়েছে।

এর আগে, গতকাল রোববার শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ভারত একটি রাফাল যুদ্ধবিমান পাঠালেই বাংলাদেশ কেঁপে উঠবে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষদের ভারতের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে ভারতের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে জেনে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।

শুভেন্দু বলেন, ‘ভারত যদি একটি রাফাল যুদ্ধবিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলেই (বাংলাদেশ) তারা কেঁপে উঠবে। বাংলাদেশের ভারতের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তারা যেন ভালোভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে ভারতের শক্তি সম্পর্কে জেনে নেয়।’

কাঁথির এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘তাদের মনে রাখা উচিত, আলু-পেঁয়াজের মতো সামগ্রীর জন্যও বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ একটি প্যাকেট আয়োডিনযুক্ত লবণও উৎপাদন করতে পারে না, তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা জানা উচিত।’

এদিকে, গত শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের সিভিক ভলান্টিয়ারদের সামলানোও কঠিন হবে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ২০১৩ সালে এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার। পরে ২০১৪ সালে বাহিনীর নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। মূলত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মেলা-পার্বণে ভিড় সামলানো এদের দায়িত্ব।

সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘সিভিক ভলান্টিয়াররাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে থামানোর জন্য যথেষ্ট। তবে যারা ঢাকার রাস্তায় এ ধরনের মন্তব্য করছে, তারা কোনো সরকারি পদে নেই।’ বাংলাদেশের সাবেক কিছু কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সুকান্ত এই মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের জনগণকে ইঙ্গিত করে সুকান্ত আরও বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশিরা) দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা মানুষকে অন্ধ করে তোলে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যা ঘটছে তা বেদনাদায়ক। তবে বাংলার মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এ ধরনের শক্তি ভারতে ঘৃণা ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

অপরদিকে, গতকাল রোববার বিজেপি নেতা ও তেলেঙ্গানার বিধায়ক টি রাজা সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ১৫ মিনিটের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিতে বলেন, যাতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর যে কথিত নির্যাতন চলছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করে পরিস্থিতি পরিষ্কার (ক্লিয়ার) করতে পারেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের পতাকাও টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে রাজা সিং দাবি করেন যে, প্রতিবেশী দেশে হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের দোকান লুট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারা সাহায্যের জন্য আবেদন করছে। আমি বলতে চাই যে জঙ্গি (বজরং দলের অনুসারী) বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। মোদিজি, কেবল ১৫ মিনিটের জন্য দরজা খুলে দিন, আমরা কাজটি করব।’

মঞ্চে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলে রাজা সিং বলেন, ‘যারা ভারতের বিরুদ্ধে যাবে, তারা একই পরিণতির শিকার হবে।’ এ সময় তিনি একটি তলোয়ারও বের করেন এবং বলেন, ‘এই তলোয়ার কেবল খাপের মধ্যে পুরে রাখার জন্য নয়। এটি প্রতিটি হিন্দুর বাড়িতে থাকা উচিত।’

উল্লেখ্য, বিজেপির নেতাদের তরফ থেকে এমন হুমকি এমন এক সময়ে সামনে এল যখন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি একদিনের সফরে আজ সোমবার বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর এই সফর পূর্ব নির্ধারিত বলে দাবি করা হলেও এটি দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে চলমান শীতলতা প্রশমনের একটি সুযোগ হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত