Ajker Patrika

মায়ের চিকিৎসার জন্য আসাম গিয়ে স্থানীয় যুবককে বিয়ে, নাগরিকত্বের অপেক্ষায় বাংলাদেশি নারী

অনলাইন ডেস্ক    
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালে ভারতের আসামে গিয়েছিল বাংলাদেশের সিলেটের এক পরিবার। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে পরিবারের এক মেয়ে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়ে। শেষমেশ তাঁকে বিয়ে করে সেখানেই থেকে যান তিনি। তবে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কখনোই প্রশস্ত ছিল না। ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার হিন্দুসহ ছয়টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি আইন পাস করে। সেই আইনের মাধ্যমে এবার ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওই নারী।

মায়ের চিকিৎসার জন্য যখন ভারতে গিয়েছিলেন ওই নারী, তখন তাঁর বয়স অনেকটাই কম। হাসপাতালেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আসামের বদরপুরের এক যুবকের। তিনিও তাঁর বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য শিলচরে গিয়েছিলেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল এবং এই সময় ওই মেয়ের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যুবকটি। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব ও প্রেম। এদিকে মায়ের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার আগে, ওই নারী প্রেমের কথা জানান পরিবারকে।

দুজনেই হিন্দু পরিবারের হওয়ায় হিন্দু রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয় এবং বাংলাদেশি ওই নারী থেকে যান ভারতে। পরে তাদের এক সন্তানও হয়। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর শহরে স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করছেন ওই নারী। কিন্তু ভারতের নাগরিক কখনোই হননি তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে এনআরসির প্রক্রিয়া শুরু হয় আসামে। বহু মানুষের কাছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ আসে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় আসামে। সমস্যায় পড়েন ওই নারী।

এরপর, ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পেশ করে বর্তমান বিজেপি সরকার। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, শিখ এবং পারসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইন পাশ হলেও বহুদিন এর প্রণয়নবিধি প্রকাশ করেনি সরকার। এ বছরের মার্চে সেই আইনের প্রণয়ন বিধি প্রকাশ হয়। তারপরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন ওই নারী।

এপ্রিল মাসে আসামের বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থী এই আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বদরপুরের ওই নারীও। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

স্থানীয় আইনজীবীদের মতে, সিএএ—এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দাবি করতে গেলে আবেদনকারীকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয়, তিনি ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে তাঁর দেশ ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটা পর্যন্ত যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, শুধু তারাই আবেদন করতে পারেন। ভারতে প্রবেশ করার পর এই দেশে থাকার প্রমাণও দিতে হয় এই আইনে নাগরিকত্ব চাইলে।

ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব জানান, গত বছর ভারতের নির্বাচন কমিশন আসামের বদরপুরের একটি অংশকে করিমগঞ্জ জেলা থেকে বাদ দিয়ে কাছাড়ের সঙ্গে জুড়ে দেয়। বদরপুরের ওই নারী প্রথমে করিমগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেছিলেন। তবে পরে দেখা যায়, তাঁর বাড়ি কাছাড় জেলার আওতায়। ফলে তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন এবং পরে আবারও আবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা সেখানেই থাকেন। ২০০৭ সাল থেকে এদেশেই রয়েছেন তিনি। ফলে সিএএ-তে আবেদনে প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে অসুবিধে হয়নি তার। এবার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী শিগগিরই তিনি ভারতের নাগরিক হবেন।

ধর্মানন্দের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের বিধি কিছুটা অসম্পূর্ণ এবং জটিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই সেই দেশের নথি সঙ্গে করে আনতে পারেননি। অথচ সিএএ—এর বিধিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে অন্তত এমন একটি নথি দেখাতেই হবে। হয়তো এই কারণেই অনেকে আবেদন করছেন না। আবার প্রক্রিয়াটি এতটাই জটিল, অনেকে তা সামাল দিতে পারেন না। আমরা স্বেচ্ছায় তাদের সাহায্য করছি এবং আমার হাত ধরে এখন পর্যন্ত নয়জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে একজন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।’

ডয়চে ভেলের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই নারীর পরিবার কথা বললেও তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাদের আইনজীবী এখনই ওই নারীর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ, নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনের আগে জোট নয়, এনসিপির সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত বিএনপির

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘বাঁচা-মরা’র ম্যাচের আগে ধাক্কা খেল পাকিস্তান

জয়পুরে সম্প্রীতির নজির, ঈদগাহে আসা মুসলিমদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা

অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে অবৈধ যাত্রী ওঠানোর দায়ে ক্যাটারিং সার্ভিসের কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত