বাংলাদেশের অস্থিরতার সুযোগে শক্তিশালী হয়ে উঠছে কর্ণাটকের জিনস শিল্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৫
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা অপ্রত্যাশিতভাবে কর্ণাটকের বেল্লারির জিনস শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গত তিন মাসে বেল্লারির এই শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেল্লারির পোলাক্স জিনসের মালিক মল্লিকার্জুন জানান, বেঙ্গালুরু ও অন্ধ্র প্রদেশের পাইকারি ক্রেতারা এখন বেল্লারির কাপড় কিনতে বড় অর্ডার দিচ্ছেন। এতে উৎপাদন ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাপড়ের গুণগত মান বাংলাদেশের কাপড়ের সমতুল্য। কর্ণাটকে বেল্লারিই একমাত্র জেলা, যেখানে বিশ্বমানের পোশাক তৈরির কাজ হচ্ছে।’

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জিনস রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত। বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরেই উন্নতমানের কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের সুনাম আছে। তবে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এতে সময়মতো পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না এবং ব্যয়ও বেড়ে গেছে। মল্লিকার্জুন বলেন, ‘বাংলাদেশের কাপড় বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু অস্থিরতা পুরো খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, যা তাদের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

বাংলাদেশের জিনস শিল্পে এই বিপর্যয়ের কারণে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছেন এবং সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে ভারতীয় পাইকারি ক্রেতারা বেল্লারির দিকে ঝুঁকছেন। মল্লিকার্জুন আরও বলেন, ‘চাহিদা বাড়লেও আমরা কাপড়ের দাম বাড়াইনি। এই পরিস্থিতিতে দাম বাড়ানো স্বাভাবিক হলেও আমরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করিনি।’

বেঙ্গালুরুর পাইকারি ক্রেতারা আগে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক দামের জন্য সেখান থেকেই কাপড় কিনতেন। তবে বাড়তি খরচ, পরিবহন সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে তাঁরা বেল্লারির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। বেল্লারির ব্যবসায়ী ভেনুগোপাল বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী কাপড় কিনতেন। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় ভারতীয় বিক্রেতারা ব্যবসা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।’

ভেনুগোপাল আরও বলেন, ‘বেল্লারি এখন বিশ্ববাজারে পরিচিত হয়ে উঠেছে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এখান থেকে কাঁচামাল কিনে তাদের ফ্যাশন লাইনের জন্য ব্যবহার করছে।’ বেল্লারির মুন্দ্রাগি শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত কারখানাগুলো চাহিদা মেটাতে দিন-রাত কাজ করছে। এই এলাকায় ৫০০টিরও বেশি কারখানা প্রতিদিন গড়ে দুই লাখ জিনস কাপড় উৎপাদন করছে বলে জানান ভেনুগোপাল।

বেল্লারির ডেপুটি কমিশনার প্রশান্ত কুমার মিশ্র জানান, এই শিল্প এখন বড় ধরনের অর্ডার ও রাত-দিন উৎপাদন কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত। তিনি বলেন, ‘এই অর্ডারের কারণে বিশেষ করে প্যাকিং বিভাগে বহু বেকার মানুষ কাজ পেয়েছে।’ তিনি আশ্বাস দেন, ‘শিল্প এলাকায় নিয়মিত পানির সরবরাহ ও বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করছে জেলা প্রশাসন।’

বেল্লারি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জামির আহমেদ খান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে স্থানীয় শিল্পের উন্নতির জন্য সহায়ক হিসেবে উল্লেখ করেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যাগুলো বেল্লারির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এর ফলে এখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে এবং শত শত মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পমালিকেরা কাপড়ের দাম বাড়াননি, তবে নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়ানো উচিত ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত