Ajker Patrika

মাত্র ৩০ দিনের প্রস্তুতিতেই ওডিশার নারী মুসলিম বিধায়ক হন সোফিয়া 

আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪, ২১: ৩৪
মাত্র ৩০ দিনের প্রস্তুতিতেই ওডিশার নারী মুসলিম বিধায়ক হন সোফিয়া 

এই বছরের শুরুর দিকে ওডিশার কন্যা সোফিয়া ফিরদৌস বাবা মোহাম্মদ মকিমের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে রিয়েল এস্টেট ফার্ম মেট্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মকিম জানতে পারেন প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য। 

দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ওডিশা গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন করপোরেশন (ওআরএইচডিসি) ঋণ জালিয়াতির মামলার কারণে মকিমকে দোষী সাবস্ত করেন। 

মাত্র ৩০ দিন বাকি এবং কোনো প্রার্থী না থাকায় কংগ্রেস সোফিয়া ফিরদৌসের ওপর ভরসা করে। ৩২ বছর বয়সী সোফিয়া তখন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের চাকরি ছেড়ে দেন এবং কংগ্রেসের মনোনয়ন নেন। নির্বাচনে বিজেপির পূর্ণ চন্দ্র মহাপাত্রকে ৮ হাজার ১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে রাজ্যের প্রথম নারী মুসলিম বিধায়ক হন। 

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ফিরদৌস অকপটে নিজের হঠাৎ রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। 

ওডিশার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌসসাক্ষাৎকারে সোফিয়া জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই। যখন আমার বাবা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষম ছিলেন, তখন আমাদের বাসভবনে ৪০০-৫০০ সমর্থকের একটি বিশাল সমাবেশ ডেকেছিল। কটকে আমার বাবা যে কঠোর পরিশ্রম এবং শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, তা স্বীকার করে তাঁরা সর্বসম্মতভাবে আমাকে ভোটের মাঠে নামতে সমর্থন দিয়েছিলেন।’ 

২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে সোফিয়া ফিরদৌস বাবার নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ভোটারদের দরজায়-দরজায় গিয়ে ভোট চেয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া এবং কংগ্রেস পার্টি কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। দলের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে পরিচিতি ও সখ্য তাঁকে সবার কাছে পছন্দনীয় করে তোলে। মিডিয়া সেই গতি আরও বাড়ায় এবং দলের সিনিয়র নেতা গিরিবালা বেহেরার একটি কল তাঁর প্রার্থিতা নিশ্চিত করে। 

সোফিয়া ফিরদৌস স্বল্প সময়ে নির্বাচনী প্রচার চালানোর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। মাত্র এক মাস প্রস্তুতি নিয়ে নানা আশঙ্কা তাঁকে পীড়িত করে। ভোটাররা বাবা মকিম থেকে আস্থা তাঁর প্রতি রাখবেন কি না তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। 

সোফিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমার কাছে মাত্র এক মাস সময় ছিল। আমার প্রধান ভয় ছিল যে লোকেরা আমার বাবাকে ভালোভাবে চিনে। কারণ, তিনি তৃণমূলে অনেক কাজ করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে হেরেছিলেন এবং তারপর ২০১৯ সালে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাহলে মানুষ কেন এত তাড়াতাড়ি আমাকে ভোট দেবে এবং বিশ্বাস করবে?’ 

সোফিয়া আরও বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছি। তারপরে এটি বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আবার মাঠে নেমেছি। মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য মাত্র এক মাস সময় ছিল এবং এ সময় আমি ঘরে ঘরে প্রচার চালানোর মনোনিবেশ করেছি। এটি সত্যিই আমার জন্য কাজে দিয়েছে। আমি মনে করি, আমার বাবার ভালো কাজের রিপোর্টগুলো গর্বের সঙ্গে মানুষের মাঝে বিলি করায় সফলতা এসেছে।’ 

ওডিশা বিধানসভার অন্যতম কনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে ফিরদৌস এখন বিজেপি এবং নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলের (বিজেডি) পাকা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়বেন। এ নিয়ে সোফিয়া বলেন, ‘আমি রোমাঞ্চিত। আমি ২১ বছর বয়সে ২০১৩ সালে রিয়েল এস্টেটে যোগ দিয়েছিলাম। ২-৩ বছরে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথোরিটি (আরইআরএ) কার্যকর হয়েছিল। আমি অনেক পড়াশোনা করেছি এবং আরইআরএতে উপস্থাপনা শুরু করেছি। এভাবেই আমি সরকারের নীতিনির্ধারণী বিভাগে প্রবেশ করি। তারপরও পঞ্চাশ ও ষাটোর্ধ্ব সিনিয়ররা বলবেন, ‘“সে একটি বাচ্চা মেয়ে।” আমি এটিকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছি এবং আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছি।’ 

ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং কটকের বিধায়ক নন্দিনী সতপতী সোফিয়ার অনুপ্রেরণা। তিনি সেই ‘ওডিশার আয়রন লেডি’র পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান। 

কটকের ড্রেনেজ এবং মশা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি কটক শহরকে ভারতের সবচেয়ে সুন্দর রাজধানী শহর বানানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন তিনি। 

ওডিশার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস‘মুসলিম বিধায়ক’ হিসেবে পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সোফিয়া ফিরদৌস বলেন, ‘আমি একজন ওড়িয়া, একজন ভারতীয় এবং সবার প্রথমে একজন নারী। রিয়েল এস্টেটে আমার কর্মজীবন এবং পেশাদার জীবনজুড়ে আমি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং করব। রাজনীতিতেও তা চালিয়ে যাব। একজন মুসলিম রাজনীতিবিদ হওয়ার বিষয়ে আমি কখনোই ভাবিনি।’ 

ওডিশার সাম্প্রতিক রাজ্য নির্বাচনে বিজেডি নেতা পাটনায়েকের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে রাজ্যটির ১৪৭ আসনের বিধানসভায় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ৭৮টি আসন লাভ করে ক্ষমতায় এসেছে। বিজেডি ৫১টি, কংগ্রেস ১৪টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসন পেয়েছে। আর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যটিতে ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপি ২০টি এবং কংগ্রেস ১টিতে জয় পেয়েছে। অপর দিকে বিজেডির ঝুলি রয়ে গেছে শূন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পকে তরুণদের ‘রোল মডেল’ বললেন এক সময়ের ঘোর বিরোধী নিকি মিনাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় রক্ষণশীল সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত ‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেছেন মার্কিন র‍্যাপ তারকা নিকি মিনাজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য ট্রাম্প ও ভ্যান্সকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিনাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ‘ফরচুন’ জানিয়েছে, এই সম্মেলনটি প্রয়াত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজন করা হয়। মঞ্চে নিকি মিনাজের সাক্ষাৎকার নেন চার্লি কার্কের স্ত্রী ও বর্তমানে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর নেতৃত্বে থাকা অ্যারিকা কার্ক। আলোচনায় ট্রাম্পের প্রতি নতুন সমর্থনের কথা জানান মিনাজ—যদিও অতীতে তিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতারও নিন্দা জানান।

মিনাজ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিউ-স্কাম’ নামটি ব্যবহার করেন। বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন—বর্তমান প্রশাসনে হৃদয় ও আত্মা আছে এবং ট্রাম্প ও ভ্যান্স দুজনই এমন নেতা, যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।

এদিকে মঞ্চে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে মিনাজ তাঁকে ‘অ্যাসাসিন’ বলে ফেলেন। কথাটি বলার পরই তিনি থেমে যান এবং পরিস্থিতি কিছুটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় শব্দটি উপস্থিত অনেকের মনে আঘাত দেয়।

সম্প্রতি মিনাজ ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতন সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যেখানে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে মার্কিন মিশনে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনাতেও অংশ নেন।

নিজের পরিবর্তিত অবস্থান নিয়ে মিনাজ বলেন, ‘মত বদলানো দোষের নয়—মনের কথা বলাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেছে।’ বিনোদন জগৎ থেকে সমালোচনার প্রসঙ্গে জানান, তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করা এই শিল্পী এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর মত বদলানো ঠিকই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘এই বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না’—বলছিলেন হাদিল আল ঘেরবাওয়ি। ২৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নারী গাজা যুদ্ধে চরম ক্ষুধা, ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দুটি গর্ভধারণ ও দুবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর সময় হাদিল সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হওয়ায় তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন, আলট্রাসাউন্ড করাতেন এবং ভিটামিন নিতেন। গাজা সিটির পূর্বাংশে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বসবাস করায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিনই তিনি গাজার পশ্চিম অংশে বসবাস করা বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। হাদিল ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরপর পরিবারটি অন্তত ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয় এবং স্বামীর বাড়িটিও একদিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বড় ধরনের হামলার কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন হাদিল। তাঁর কাছে এটিকে একটি ভূমিকম্প মনে হয়েছিল। পরে আশ্রয় নেন আল-শিফা হাসপাতালে। সেখানে অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় এত বেশি ছিল যে, বাথরুম ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল। সেদিনের দৃশ্য আজও তাড়া করে ফেরে হাদিলকে। স্তূপ করে রাখা লাশ, ড্রামে রাখা খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর তীব্র গন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী ছিলাম, সহ্য করতে পারিনি।’

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে—নিরাপত্তার আশায় এবার তিনি ও তাঁর স্বামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগেই সন্তান প্রসবের অনুরোধ করেন। হাদিল যখন সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন হাসপাতালটির পাশের ভবনেই হামলা হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে সন্তান বদলে যাওয়ার আতঙ্কও গ্রাস করেছিল হাদিলকে। তবে আতঙ্কের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলে জাওয়াদের জন্ম দেন।

নবজাতক নিয়ে হাদিলকে ৩০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টিতে সেলাইয়ের তীব্র ব্যথার মধ্যেও তিনি কোনো ওষুধ পাননি; রাতের পর রাত চুপচাপ এই ব্যথা সহ্য করেছেন। তাঁর ধারণা, প্রসবের পর তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর তাঁরা একটি তাঁবুতে ওঠেন। বালু, পোকামাকড় আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় একের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর খবরে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন হাদিল। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার জেগে উঠতেন। জাওয়াদের বয়স ৯ মাস হলে আবারও গর্ভবতী হন তিনি। হাদিল বলেন, ‘তাঁবুতে থেকে আরেকটি সন্তান—ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির খবর কিছুটা আশা জাগিয়েছিল তাঁদের। সেই আশা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতি। পেটে সন্তান নিয়ে আবারও পালাতে হয় হাদিলকে। পালানোর পর তাঁদের বাড়িটিও ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের মধ্যে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হাদিলের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। এই সন্তান পেটে রাখার ৯ মাসই তাঁর যুদ্ধের মধ্যে কেটেছে। এমনও দিন গেছে, সারা দিন শুধু একটি শসা খেয়ে কাটিয়েছেন। আর কোথাও এক মুঠো খাবার পেলে নিজের ভাগটুকু তিনি ছেলে জাওয়াদকে দিতেন।

দ্বিতীয়বার প্রসবের সময়ও তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কারণ ওই বাড়ি থেকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নবজাতক সুরক্ষার জন্য ইনকিউবেটর ছিল। এক রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে, লিফট না থাকায় পাঁচ তলা থেকে হেঁটেই নামতে হয় হাদিলকে। পরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ছেলে ফারেসের জন্ম দেন। জন্মের সময় ফারেসের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি।

এবারে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সেলাই দেওয়া হয় হাদিলকে। আর অন্যকে সুযোগ করে দিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানা খালি করে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। ফারেসের জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর, চরম ক্লান্তি ও ব্যথা নিয়ে তিনি আবার পাঁচ তলা সিঁড়ি বেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে ফেরেন। এই যুদ্ধ, তাঁর শরীর ও মনে রেখে গেছে এমন ক্ষত—যা ভুলবার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ ভেবেছিল—দেশটির কুখ্যাত কারাগার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা জেলখানার দরজা ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেছিল, পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়েছিল নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই সেই কারাগারগুলো আবার ভরে উঠছে। এবার নতুন সরকারের অধীনেই সিরিয়ায় আবারও ফিরে এসেছে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত এক বছরে অন্তত ৮২৯ জন নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বড় অংশই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই বন্দী রয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় প্রথম দফার গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল বিদ্রোহীদের বিজয়ের পরপরই। সে সময় মূলত আসাদের আমলের সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে শীতের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতার জের ধরে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক ধরপাকড় চলে। একই সঙ্গে সুন্নি, খ্রিষ্টান ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা আসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অস্পষ্ট অভিযোগে আটক হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের অন্তত ২৮টি কারাগার ও আটক কেন্দ্র আবার সক্রিয় হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলোই অতীতে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল। যদিও বর্তমান সরকার বলছে, অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনেক বন্দীকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেনি।

সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, আটক কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাদাগাদি করে বন্দী রাখা, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, ত্বকের রোগ এবং নিয়মিত মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অন্তত ১১ জন বন্দী কারা হেফাজতে মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পরিবার জানতই না—দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারে।

চাঁদাবাজিও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৪টি পরিবার জানিয়েছে, স্বজনকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থ পরিশোধের পরও অনেকেই মুক্তি পাননি।

এদিকে সরকার স্বীকার করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের সময় কিছু ‘ফাঁকফোকর’ তৈরি হয়েছে এবং কিছু নিরাপত্তা সদস্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৫৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাপক আটক ও গুমের অভিযোগ নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও আসাদের পতনের পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্বিচার আটক’-এর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আসাদের শাসনামলের মতো নির্মম নির্যাতন না হলেও, পুরোনো কারাগার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের ভাষায়, ‘শাসক বদলেছে, কিন্তু কারাগারের ছায়া এখনো কাটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত