Ajker Patrika

বাড়ি নম্বর ৩৯৮৯, গুয়াহাটি: পাঞ্জাবের মনমোহন সিং যেভাবে আসামের হলেন

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৩০
২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত
২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। গতকাল বৃহস্পতিবার ৯২ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর আবার আলোচনায় এল আসামের গুয়াহাটির নন্দননগরের ৩৯৮৯ নম্বর বাড়িটি। ভারতের দুবারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের নামের সঙ্গে এ বাড়ির নাম বহু আগে থেকেই জড়িয়ে আছে।

মনমোহন সিংয়ের জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়েছে কয়েকটি দেশের নাম, কয়েকটি জায়গার ঠিকানা। বর্তমান পাকিস্তানের চাকওয়াল জেলার গাহ গ্রামে জন্ম মনমোহন সিংয়ের। দেশ ভাগের পর পরিবারের সঙ্গে আসেন ভারতে। হলদওয়ানিতে শুরু হয় নতুন জীবন। তারপর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি ফিল অর্জন করেন তিনি।

১৯৭১ সালে কেন্দ্র সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন মনমোহন সিং। এরপর প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর এবং পরিকল্পনা কমিশনের উপচেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এসব কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় দিল্লিতেই থেকেছেন।

মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরশরন কৌরের দিল্লিতে বসন্ত কুঞ্জ এবং চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১১ বিতে দুটি বাড়ি রয়েছে। তবুও তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠল গুয়াহাটির নন্দননগরের ৩৯৮৯ বাড়িটি।

যেভাবে মনমোহন সিং হয়ে উঠলেন গুয়াহাটির বাসিন্দা

গুয়াহাটির একটি বাড়ির ঠিকানা: বাড়ি নম্বর ৩৯৮৯, নন্দননগর, ওয়ার্ড নম্বর ৫১, সরুমাটারিয়া, ডিসপুর, গুয়াহাটি, কামরুপ জেলা, আসাম–৭৮১০০৬।

প্রায় তিন দশক এই বাড়ির ঠিকানা মনমোহন সিংয়ের নামের পাশে যুক্ত হয়ে রয়েছিল। এ বাড়ির ঠিকানাতেই আসামের বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন এ ঠিকানায়ই।

বাড়িটি ছিল আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা হিতেশ্বর শইকিয়ার স্ত্রী হেম প্রভা শইকিয়ার। হিতেশ্বর শইকিয়ার জোরাজুরিতে মনমোহন সিংকে আসাম থেকে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হয়। ১৯৯১ সালে মনমোহন সিং যখন উচ্চকক্ষের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন, তখন থেকে তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে যায় এই ঠিকানা।

সে সময় থেকে এই বাড়ির বাসিন্দা মনমোহন সিং। কিন্তু কখনোই সে বাড়িতে থাকেননি মনমোহন। এমনকি আসামে নিজ নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছেন সেটাও কদাচিৎ দেখা গেছে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত আসামের হয়ে রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন মনমোহন সিং। কেবল ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে আসাম কংগ্রেস পরাজিত হয়। সে সময় মনমোহন সিংকে রাজস্থান থেকে মনোনীত করতে হয়।

ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ডাক পেয়ে বিস্মিত হয়ে যান ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের এই নকশাকার।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও মনমোহন সিং আনুষ্ঠানিকভাবে গুয়াহাটির নন্দন নগরের বাড়ি নম্বর ৩৯৮৯–এর বাসিন্দা ছিলেন।

২০০৪ সালে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে গুয়াহাটির এই বাড়ি নিয়ে দ্য টেলিগ্রাফে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একদিকে ১০ জনপথের সামনে উচ্ছ্বসিত জনতার ভিড়, অন্যদিকে নন্দননগরের দোতলা বাড়িটি যেন শান্তির নীড়। বিভিন্ন আয়োজনের সময় কিছু টিভি চ্যানেলের ফটোসাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের উপস্থিতি ছাড়া এ বাড়িতে কোনো কার্যকলাপ দেখা যাচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবন হিসেবে পরিচিত ১০ জনপথ দীর্ঘদিন ধরে গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হেম প্রভা শইকিয়ার কিছু নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া সে বাড়িতে আর কোনো ভিআইপি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। এক রক্ষী দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছিলেন, ‘মনমোহন সিং যখন এখানে থাকেন, তখন বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়।’

মনমোহন সিং আসামের সংসদ সদস্য হওয়ার পর সেখানে বেশ উন্নয়ন হয়। এমপি লোকাল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট (এমপিএলএডি) তহবিল ব্যবহার করে আসামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নাগরিক অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন তিনি।

পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনর্নির্মাণ, একটি সিভিল হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক স্থাপন এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি পার্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন। এ ছাড়া গুপ্ত যুগের মদন কামদেব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারেও সহায়তা করেছিলেন।

২০১২ সালে আসাম বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণ শুরু করেছিলেন এই বলে, ‘আমাকে দত্তক নেওয়া রাজ্য আসামে আবারও আসতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।’

২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গুয়াহাটিতে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মেছিলাম এই উপমহাদেশের এক দুর্গম ধূলিমলিন গ্রামে, যা এখন আর ভারতের অংশ নয়। অল্প বয়সে আমি গৃহহীন ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়ি। আসামই সেই জায়গা, যেখানে আমি আমার একটি বাড়ি খুঁজে পেয়েছি, যা আমাকে নিজ বাড়ির অনুভূতি দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আপনাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আমি যে বন্ধুত্ব, স্নেহ এবং উষ্ণতা পেয়েছি, তা কখনোই ভুলতে পারব না।’

২০২৩ সালের এপ্রিলে রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন মনমোহন সিং।

মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে আসামের নন্দননগরের বাড়ি নম্বর ৩৯৮৯ হারাল তার তিন দশকের বিশিষ্ট বাসিন্দাকে। আসামের উন্নয়নে জন্য নীরবে কাজ করে যাওয়া মানুষটি রয়ে যাবেন আসামের জনগণের মনেও। ‘দত্তক নেওয়া সন্তান’–এর মৃত্যুতে আসাম রাজ্যে সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত