পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ভারতের লোকসভা নির্বাচন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ১৯: ১৩
আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ১৯: ৫৫

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার ভোট গ্রহণে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ দফায় রাজ্যের ৯ আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কলকাতার কাছে যাদবপুর নির্বাচনী এলাকার ভাঙ্গার সাটুলিয়াতে ভারতীয় সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এবং সিপিআই (মার্ক্সিস্ট) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের সময় দেশীয় বোমার বিস্ফোরণে আইএসএফ সদস্যদের মধ্যে বেশ কজন আহত হয়েছেন। 

আজ শনিবার (১ জুন) সকাল ৭টায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। এ দফায় রাজ্যের ৯ আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। সেগুলো হলো—দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতার উত্তর কেন্দ্র। 

কিন্তু ভোট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় থেকে সহিংসতার খবর আসতে থাকে। বেলা যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে অশান্তিও বাড়ে। পোলিং এজেন্টকে বুথে প্রবেশে বাধা ও ভোট দিতে না পারায় ২৪ পরগণা জেলার কুলতলীতে ইভিএম পানিতে ফেলে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্ৰামবাসীরা। ভাঙ্গরে গুলি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। বোমার আঘাতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটেছে। ভাঙরের হাতিশালায় দফায় দফায় সহিংসতা হয়েছে। আইএসএফ বুথ এজেন্টকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের পিকনিক গার্ডেনসের ২৬৬ নম্বর বুথে ভুয়া এজেন্ট বসানো নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি হয়। ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সায়রা শা হালিম অভিযোগ জানাতেই দৌড়ে পালান অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ছাড়া ভোট শুরুর আগেই রক্ত ঝরেছে বারাসাতে কদম্বগাছিতে। বিজেপির বুথ সভাপতির মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। 

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জয়নগরের কুলতলীতে আজ শনিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় জনতা বেণীমাধবপুর এফপি স্কুলের কাছে সেক্টর অফিসারের রিজার্ভ ইভিএম এবং কাগজপত্র লুট করেছে। তারা ভোটিং মেশিন পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এ ঘটনায় সেক্টর অফিসার এফআইআর দায়ের করেছেন এবং সেক্টরের অধীনে ছয়টি বুথে ভোট প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে এবং সেক্টর অফিসারকে কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে বসিরহাট লোকসভার অধীনে সন্দেশখালিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভোট গ্রহণের প্রথম এক ঘণ্টা এই উত্তেজনা বিরাজ করে। স্থানীয় নারীরা বাঁশের লাঠি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) কর্মী এবং রাজ্য পুলিশকে ধাওয়া করেছে। তাঁদের অভিযোগ, কারাবন্দী তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের সহযোগীরা তাঁদের পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন। রাজ্য পুলিশ বলছে, স্থানীয় বিজেপি সমর্থকেরা স্বেচ্ছাসেবকদের লাঞ্ছিত করার পরে অশান্তি শুরু হয়। 

টিএমসির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির শক্ত ঘাঁটি ডায়মন্ড হারবার। সেখানেও টিএমসি এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস টিএমসির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন, যা টিএমসি অস্বীকার করেছে। 

ছবি: সংগৃহীত যাদবপুরের গাঙ্গুলীবাগানে সিপিআই (এম) কর্মীরা টিএমসি কর্মীদের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেখানে বামদের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে সিপিআইএমের ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ টিএমসি অস্বীকার করেছে। 

দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ক্যানিংয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশপাশে টিএমসি এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় পাথর ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। যাতে একজন মিডিয়া কর্মী আহত হয়েছেন। 

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখাতে দলীয় গুন্ডা বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশকে ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন। 

আজ ভোরে ভাঙ্গারে টিএমসি এবং অল ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্ট (এআইএসএফ) কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে এআইএসএফের একজন নারী কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া তৃণমূল সমর্থকেরা এআইএসএফের প্রার্থী নুর আলম খানের গাড়ি ভাঙচুর করে। 

এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের অভিষেক ব্যানার্জি, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র এবং দমদম থেকে সিপিআইর (এম) সুজন চক্রবর্তী। 

নির্বাচন পরিচালনায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর (সিএপিএফ) ১ হাজার ২০টি কোম্পানির সঙ্গে ৯৭৮টি পোলিং ডিউটি অফিসার রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যব্যাপী মোট ১ হাজার ৯৬০টি কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত