Ajker Patrika

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণ ও লক্ষণ

অনলাইন ডেস্ক
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণ ও লক্ষণ

ঢাকা: করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেই নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। ভারতে সরকারি হিসাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ। আর মারা গেছেন ৯০ জন। বাংলাদেশেও দুইজন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লাভলি বাড়ৈ সংবাদমাধ্যমকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

মিউকরমাইকোসিস এক ধরনের গুরুতর ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) কোনো শারীরিক জটিলতা থেকে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়লে এই ছত্রাকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ভারতের নীতি আয়োগ সংস্থার সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পাল বলেন, মিউকরমাইসিট নামক ছত্রাক মিউকোরমাইকোসিস রোগের জন্য দায়ী। অন্য ছত্রাকের মতো এটিও আর্দ্র স্থানে জন্মে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে এই রোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে– মিউকোরমাইকোসিস (আগে বলা হতো জাইগোমাইকোসিস) রোগটি মারাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ তবে বিরল। এই ছত্রাক সব পরিবেশেই থাকে। সাধারণত যাদের স্বাস্থ্য সমস্যা আছে বা এমন ওষুধ গ্রহণ করেন যা জীবাণু ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় তারাই এ ছত্রাকে আক্রান্ত হতে পারেন। বাতাস থেকে ছত্রাকের স্পোর (বীজাণু) শ্বাসের মধ্যমে সাইনাস বা ফুসফুসে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। এটি কাটা, পোড়া বা অন্যান্য ধরনের আঘাত পাওয়া ত্বকেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কেও এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ ছত্রাকের সংক্রমণে মাথাব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাশির সাথে রক্ত আসা, শ্বাসকষ্ট, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। এটি ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের সাইনাসের সমস্যা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, দাঁতে ব্যথা ও দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড পজিটিভ রোগীদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাঁদের এ রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। করোনা রোগীর সেরে ওঠার পরে অনেকের দেহেই এই মিউকরমাইকোসিস রোগ দেখা দিয়েছে।

সিডিসির ওয়েবসাইটের বর্ণন অনুযায়ী মিউকোরমাইকোসিসের লক্ষণ:
সাইনাস ও ব্রেন মিউকোরমাইকোসিস
মুখের এক পাশ ফুলে যাওয়া
মাথাব্যথা
নাসারন্ধ্র বা সাইনাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
নাকে বা মুখের তালুতে কালো ক্ষত। ক্রমেই ক্ষত বড় হতে পারে।
জ্বর

ফুসফুসের মিউকোরমাইকোসিস
জ্বর
কাশি
বুকব্যথা
ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া

ত্বকের মিউকোরমাইকোসিস
ত্বকে ফুসকুড়ি বা ঘা
আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়
ত্বকে ব্যথা, গরম হওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ক্ষতের চারপাশ ফুলে যাওয়া

অন্ত্রের মিউকোরমাইকোসিস
তলপেটে ব্যথা
বমিভাব বা বমি হওয়া
অন্ত্রে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ

আরেক ধরনের মিউকোরমাইকোসিস যেটিকে বলে ডিসেমিনেটেড মিউকোরমাইকোসিস, এটি সাধারণত যাদের অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছে তাঁদের হয়। ফলে তাঁরা আসলে কোন ধরনের মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত সেটি শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই ধরনের রোগীর মধ্যে যাঁদের মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি কোমায়ও যেতে পারে।

চিকিৎসা
মিউকোরমাইকোসিস একটি গুরুতর সংক্রমণ। সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়েই এটির চিকিৎসা করা হয়। তবে অনেক সময় সংক্রামিত টিস্যু কেটে ফেলতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত