কুম্ভ মেলা থেকে এবার আয়ের লক্ষ্য ২ লাখ কোটি রুপি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২০: ৩৯
Thumbnail image
প্রতি ১২ বছর পরপর উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে আয়োজিত হয় কুম্ভ মেলা। ছবি: এক্স

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজে আজ সোমবার সকালে শুরু হয়েছে মহা কুম্ভ মেলা। গঙ্গা, যমুনা এবং পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলের পানিতে প্রথম পবিত্র ডুব দিতে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম মানব সমাবেশ হিসেবে পরিচিত এই হাজার বছরের পুরোনো কুম্ভ মেলা উপলক্ষে এবার প্রায় ৪০ কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে জড়ো হবেন বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্মিলিত জনসংখ্যার প্রায় সমান!

প্রতি ১২ বছর অন্তর এই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জুড়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এটি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখবে বলে আশা করছে সরকার। যেখানে ৪৫ দিনব্যাপী এই মহা মেলার জন্য প্রায় ৭ হাজার কোটি রুপি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

কুম্ভ মেলা থেকে ২ লাখ কোটি রুপি আয়ের সম্ভাবনা

মহা কুম্ভ মেলা থেকে উত্তর প্রদেশের অর্থনীতিতে ২ লাখ কোটি রুপি যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুমান অনুযায়ী, যদি ৪০ কোটি দর্শনার্থী গড়ে ৫ হাজার রুপি করেও ব্যয় করেন, তাহলে আয় এই পরিমাণে পৌঁছাতে পারে।

তিন নদীর সঙ্গমস্থলে পবিত্র জলে ডুব দেন ভক্তরা। ছবি: এএফপি
তিন নদীর সঙ্গমস্থলে পবিত্র জলে ডুব দেন ভক্তরা। ছবি: এএফপি

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস–এর মতে, প্রতিজনের গড় ব্যয় ১০ হাজার রুপিতেও পৌঁছাতে পারে। তাহলে অর্থনীতিতে এই মেলার অবদান দাঁড়াবে ৪ লাখ কোটি রুপিতে। এর ফলে উত্তর প্রদেশের জিডিপি ১ শতাংশের বেশি বাড়তে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে প্রয়াগরাজের অর্ধ কুম্ভ মেলা রাজ্যের অর্থনীতিতে ১ দশমিক ২ লাখ কোটি রুপি অবদান রেখেছিল। ২০১৯ সালের ‘অর্ধ’ কুম্ভ মেলায় প্রায় ২৪ কোটি তীর্থযাত্রী সমবেত হয়েছিলেন। এবার ৪০ কোটি দর্শনার্থীর প্রত্যাশিত উপস্থিতির কারণে মহা কুম্ভ মেলা অর্থনীতিতে আরও বড় প্রভাব ফেলবে।

অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী আয়ের পরিমাণ (সম্ভাব্য)

-খাদ্য ও পানীয়: প্যাকেজ খাবার, পানীয় জল, বিস্কুট, জুস এবং খাবার থেকে ২০ হাজার কোটি রুপি।

-ধর্মীয় সামগ্রী: তেল, প্রদীপ, গঙ্গাজল, মূর্তি, আগরবাতি ও ধর্মীয় বইয়ের মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি রুপি।

-পরিবহন ও লজিস্টিকস: স্থানীয় ও আন্তঃরাজ্য পরিষেবা, পণ্য পরিবহন ও ট্যাক্সি থেকে ১০ হাজার কোটি রুপি।

-পর্যটন পরিষেবা: ট্যুর গাইড, ট্রাভেল প্যাকেজ ইত্যাদি থেকে ১০ হাজার কোটি রুপি।

-স্বাস্থ্য পরিষেবা ও আয়ুর্বেদ: অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, আয়ুর্বেদিক পণ্য ও ওষুধ থেকে ৩ হাজার কোটি রুপি।

-ডিজিটাল পরিষেবা: ই–টিকেটিং, ডিজিটাল পেমেন্ট, ওয়াই–ফাই পরিষেবা থেকে ১ হাজার কোটি রুপি।

-বিনোদন ও মিডিয়া: বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি রুপি।

কুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে এবার দেড় লাখ তাঁবু বসানো হয়েছে। ছবি: এএফপি
কুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে এবার দেড় লাখ তাঁবু বসানো হয়েছে। ছবি: এএফপি

মহা কুম্ভ মেলার তাৎপর্য

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহা কুম্ভ মেলার শুরুকে ‘কোটি মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এটিকে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য এবং সংস্কৃতির মিলনস্থল’ বলে উল্লেখ করেছেন।

কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছরে চারটি পবিত্র স্থানে পালিত হয়—হরিদ্বার (উত্তরাখণ্ড), উজ্জয়িনী (মধ্যপ্রদেশ), নাসিক (মহারাষ্ট্র) এবং প্রয়াগরাজ (উত্তর প্রদেশ)।

এই বছর বিশেষ স্নান দিবসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে যেসব দিবসে:

-মকর সংক্রান্তি (১৪ জানুয়ারি)

-মৌনী অমাবস্যা (২৯ জানুয়ারি)

-বসন্ত পঞ্চমী (৩ ফেব্রুয়ারি)

-মাঘী পূর্ণিমা (১২ ফেব্রুয়ারি)

-মহা শিবরাত্রি (২৬ ফেব্রুয়ারি)।

এ বছর মেলা প্রাঙ্গণে ১ লাখ ৫০ হাজার তাঁবু, ৩ হাজার রান্নাঘর, ১ লাখ ৪৫ হাজার শৌচাগার এবং ৯৯টি পার্কিং লট নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় রেল প্রায় ১০০টি নতুন ট্রেন যোগ করেছে। এ ছাড়া ১৫ লাখ বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত