Ajker Patrika

অন্তরঙ্গ মুহূর্তে পরকীয়া প্রেমিককে শ্বাসরোধ করে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সেই নারী। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সেই নারী। ছবি: সংগৃহীত

অন্তরঙ্গ মুহূর্তে পরকীয়া প্রেমিককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন এক নারী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বরেলিতে। ৩২ বছর বয়সী এই নারীর ভাষ্য, তাঁর প্রেমিক তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। এই অবস্থায় তাঁর সামনে দুটি পথ খোলা ছিল, হয় নিজেকে শেষ করা, নয়তো দীর্ঘদিনের নির্যাতনকারীকে সরিয়ে দেওয়া। তিনি দ্বিতীয় পথটাই বেছে নেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ৩২ বছর বয়সী ওই নারী বলেছেন, ইকবাল নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। ইকবাল ছিলেন একজন জরি কারিগর। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করতেন। এভাবেই তাদের পরিচয়। প্রথমদিকে সব স্বাভাবিক ছিল, ফোন নম্বর বিনিময়, কথাবার্তা সব ঠিক ছিল। কিন্তু এরপরই বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি।

একদিন ইকবাল ওই নারীকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। সেখানে গিয়ে ওই নারী বুঝতে পারেন, ইকবাল কেবল বন্ধুত্ব চাননি, তাঁর ইচ্ছা অন্য কিছু। ইকবাল ওই নারীকে বাধ্য করেন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে। আতঙ্কিত ওই নারী তখন হুমকি দেন, ‘আমি যদি আমার স্বামীকে বলে দিই?’ কিন্তু ইকবাল তখন ঠান্ডা গলায় জানান, ‘আমার কাছে আমাদের ফোনে হওয়া সব কথোপকথনের রেকর্ড আছে। যদি তুমি কিছু বলো, আমি তোমার পুরো সংসার ধ্বংস করে দেব।’

এই হুমকির পর ওই নারীর জীবন হয়ে ওঠে এক দুঃস্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তাই আমি সহ্য করে যাচ্ছিলাম। একবার নয়, বহুবার ব্ল্যাকমেলের শিকার হন তিনি। প্রতিবারই ইকবাল তাঁকে বাধ্য করতেন, আর প্রতিবারই তিনি নিরুপায় হয়ে সহ্য করতেন। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে ক্ষোভ, ভয় আর অসহায়তা জমতে থাকে। তিনি মুক্তি চাইছিলেন, কিন্তু পথ পাচ্ছিলেন না।

অবশেষে একরাতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, হয় তিনি নিজে মরবেন, না হয় ইকবালকে সরিয়ে দেবেন। পরিকল্পনা অনুসারে গত বুধবার সন্ধ্যায় ইকবাল তাঁর স্ত্রীকে তাঁর বাবার বাড়ি রেখে ফিরছিলেন। ফেরার পথে ফোনে ওই নারীর সঙ্গে কথা হয়। ফোনে ওই নারী জানান, ‘আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

ইকবাল রাজি হয়, কিন্তু সে নিশ্চিত করতে চায়, ওই নারীর স্বামী যেন কোনোভাবে টের না পায়। তাই ইকবাল ওই নারীকে দুটি ঘুমের ওষুধ দেয় এবং বলে, ‘এগুলো তোমার স্বামীর চায়ে মিশিয়ে দাও, সে কিছু বুঝতে পারবে না।’ রাত ৮টার দিকে ওই নারী তাঁর স্বামীর জন্য চা বানান। নিজের কাপ আলাদা রেখে, স্বামীর কাপে ইকবালের দেওয়া ওষুধ মিশিয়ে দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বামী ঘুমিয়ে পড়েন, হাতে মোবাইল রেখেই।

রাত ১১টা ৪০ মিনিট। ফোন বেজে ওঠে। ইকবাল ওই নারীকে বলেন, ‘এখন চলে এসো। আমি একা আছি।’ সেই মুহূর্তেই ওই নারী দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেন যে, আজ ইকবালকে সরিয়ে দেবেন। পুলিশের কাছে তিনি বলেন, ‘তাঁর বাড়িতে যাওয়ার সময় আমি ভাবছিলাম, হয় আজ আমি মরব, না হলে তাঁকে মেরে ফেলব।’

ওই নারী ইকবালের বাড়িতে পৌঁছান। ইকবাল তখনো জানত না, এই রাতটি তাঁর জীবনের শেষ রাত হতে চলেছে। ইকবালের বাড়িতে পৌঁছার পর তাঁরা কথাবার্তা শুরু করেন। ওই নারী জানান, ‘আমরা কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ পর সে আবার আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে।’ এবার আর সহ্য করেননি তিনি। হঠাৎ করেই তিনি ইকবালের দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরেন, তারপর তার বুকের ওপর বসে পড়েন।

ইকবাল তখনো ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওই নারী আরও দৃঢ়ভাবে তাঁকে চেপে ধরেন। এক হাতে তাঁর মুখ বন্ধ করে দেন, অন্য হাতে শ্বাসরোধ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে ইকবাল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। যখন তিনি নিশ্চিত হন যে, ইকবাল আর বেঁচে নেই, তখন ঠান্ডা মাথায় তার দেহ সিঁড়ির দিকে টেনে নিয়ে যান। এরপর কোনো চিৎকার নয়, কোনো অস্থিরতা নয়, তিনি চুপচাপ নিজের বাড়ি ফিরে আসেন।

দুদিন পর ইকবালের মরদেহ তাঁর বাড়ির কাছে পাওয়া যায়। তদন্ত শুরু হয়, এবং শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ওই নারী। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, ‘আমি ইকবালের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলাম। আমার আর কোনো উপায় ছিল না, আমাকে আমার পরিবারকে রক্ষা করতে হতো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত