দিল্লিতে জোটের বার্তা মমতা-সোনিয়ার

প্রতিনিধি, কলকাতা
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২১, ২২: ৫২

ভারতে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় । বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব কে দেবেন, সে প্রশ্ন ঊহ্য রেখেই তিনি হাত বাড়ালেন কংগ্রেসের দিকে। কংগ্রেসের তরফেও বন্ধুত্বের বার্তা দেওয়া হয়েছিল আগেই। এদিন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার বৈঠকের পর ভারতে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রক্রিয়া আরও শক্ত হলো।

মমতা জানান, 'বৈঠকে সোনিয়া ছাড়াও রাহুল গান্ধীও ছিলেন। পেগাসাস, কোভিড থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠক খুব ভালো হয়েছে। আমি নেতা নই। রাস্তায় লড়াই করা মানুষ।' কংগ্রেস ছাড়াও অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গেও বৈঠক করছেন মমতা। বিরোধী জোট নিয়ে আশাবাদী মমতা বামেদেরকেও আসল শত্রু বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে চান ভারতের মোদী বিরোধীরা। মমতার নতুন স্লোগান, ‘হোপ ট্যুয়েন্টি ফোর’। আশার ২৪।

বুধবার দিল্লিতে তৃণমূল সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকের পর দলের সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দোপাধ্যা মন্তব্য করেন, মমতা ব্যানার্জিকেই তাঁরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বিরোধী জোটকেই পাখির চোখ করার বার্তা দেন মমতা। এদিন সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'জোটের নেতা কে হবেন তা আমি জানি না। কারণ আমি রাজনৈতিক জ্যোতিষী নই'। পাশাপাশি তিনি বিরোধী জোট গঠনে আশা প্রকাশ করেন। মমতা জানান, বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তাঁর খুবই সুসম্পর্ক রয়েছে। সকলেই আন্তরিক জোট গঠনের বিষয়ে। বামেদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ওরা (বাম দলগুলি) ঠিক করে নিক, আসল শত্রু কারা।' মমতার সাফকথা, মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। পেগাসাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনাও করেন। মমতার সাফকথা, খুব শিগগিরই জোটের ছবি পরিষ্কার হয়ে যাবে। জোটকে কে নেতৃত্ব দেবে সেটা এখনই বলা যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস আগে থেকেই জোটের বার্তা দিয়ে রেখেছে তৃণমূলকে। সম্প্রতি তৃণমূলের ভার্চুয়াল সভায় কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা পি চিদাম্বরম ও দ্বিগ্বিজয় সিং উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসের অফিশিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকেও তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পেগাসাস নজরদারির প্রতিবাদ জানানো হয়। বুধবার সোনিয়ার সঙ্গে মমতার বৈঠকের আগে মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা কমলনাথ ও আনন্দ শর্মা বৈঠক করেন মমতার সঙ্গে। এদিন সোনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর জোটের রাস্তা আরও প্রশস্ত হলো বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। শুধু কংগ্রেসই নয়, মমতার সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির সম্পর্কও খুব ভালো। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সময় অখিলেশ যাদব তাঁর দলের নেত্রী, অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী জয়া বচ্চনকে তৃণমূলের হয়ে ভোটের প্রচার চালান। আম আদমি পার্টির নেতা, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে শুরু করে বিরোধী শিবিরের বহু নেতার সঙ্গেও বৈঠক করছেন মমতা।

সোনিয়ার সঙ্গে মমতার বৈঠকের দিকেই এদিন গোটা ভারত তাকিয়ে ছিল। সূত্রের খবর, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে দুই নেত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে যাওয়ার আগেই মমতা বলেছিলেন, সোনিয়াও বিরোধী জোট চাইছেন। এদিন, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিতর্কিত কৃষি বিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি পরাস্ত করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মমতা। তবে মমতার এই প্রয়াসকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, বিরোধীরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নন। সংসদ অচল করে দিচ্ছে তাঁরা। দেশের মানুষ তাঁদের বিচার করবেন। বামেদের আসল শত্রু বাছতে বলায় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা কটাক্ষ করেছেন মমতাকে। তাঁর অভিযোগ, 'তৃণমূলের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান। তাঁর পরামর্শের প্রয়োজন নেই বামেদের।' তবে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বিজেপিকে হারাতে যেকোনো দলের সঙ্গে হাত মেলানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। কংগ্রেসও স্বাগত জানিয়েছে বিরোধীদের জোট প্রয়াসকে। কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, নেতৃত্বের প্রশ্ন ঊহ্য রেখে জোট প্রয়াস শুরু হতেই পারে।

মমতা ও সোনিয়ার বৈঠক থেকে ভারতে বিরোধী জোটের স্পষ্ট বার্তা, মোদীর বিকল্প হিসেবে এখনই কাউকে ভাবতে নারাজ মমতা, বামদেরও আসল শত্রু বাছার পরামর্শ মমতার, তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত