Ajker Patrika

নরমাংস খাওয়ায় অনুতাপ নেই, বললেন আন্দিজ ‘প্লেন ক্র্যাশে’ জীবিতরা

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ১৭: ১২
নরমাংস খাওয়ায় অনুতাপ নেই, বললেন আন্দিজ ‘প্লেন ক্র্যাশে’ জীবিতরা

লাতিন আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা বা প্লেন ক্র্যাশের কথা আমরা অনেকেই জানি। ১৯৭২ সাল অর্থাৎ আজ থেকে ৫০ বছর আগে সংঘটিত ওই দুর্ঘটনায় জীবিত ছিলেন ১৬ জন। তুষারে মোড়ানো আন্দিজের সেই অংশে জীবন ধারণের স্বাভাবিক কোনো উপকরণই ছিল না। ফলে টানা ৭২ দিন কোনো ধরনের খাবার ছাড়াই সেখানে বেঁচেছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি তাদেরই কয়েকজন জানিয়েছেন, জীবন বাঁচাতে নরমাংস খাওয়ায় তাঁর কোনো অনুতাপ নেই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

উরুগুয়ের এয়ারফোর্সের একটি চার্টার্ড বিমানে একটি রাগবি দল ছিল। সঙ্গে দলটির তাদের বন্ধুরাও যাচ্ছিলেন। উরুগুয়ে থেকে চিলিগামী বিমানটি আন্দিজ পর্বতমালার মধ্যবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মারা যান বিমানটির ২৯ যাত্রী। পরে দুর্ঘটনার ৩ সপ্তাহ পর তুষারপাতে মারা যান আরও ১৩ জন। তারপরও যাত্রীদের মধ্যে আরও ১৬ জন জীবিত ছিলেন। ঘটনার ৭২ দিন পর সে বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওই ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়। 

সম্প্রতি গত ১৩ অক্টোবর সেই বিমান দুর্ঘটনায় জীবিত ফেরারা মিলিত হয়েছিলেন ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে। সেই দলেরই একজন রবার্তো কানেসা। সেই সময়ে কানেসা একটি মেডিকেল কলেজে পড়তেন। খাদ্য সংকটে পড়ায় কানেসাই প্রথমবার বিমানটির ধ্বংসাবশেষের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের মরদেহ খাওয়ার ধারণার পরামর্শ দেন এবং তিনিই প্রথম কাচের টুকরো ব্যবহার করে তাঁর বন্ধুদের মৃতদেহ থেকে মাংস ছাড়িয়ে এনেছিলেন।

কানেসা বলেন, ‘পরে আমাকে তাদের (বন্ধুদের) পরিবারের কাছে ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল।’ তবে তাদের পরিবার কানেসার যুক্তি কীভাবে নিয়েছে তা ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে মৃত বন্ধুদের মাংস খাওয়ার বিষয়ে কানেসা বলেন, তিনি যদি মারা যেতেন ও তার বন্ধুরা যদি জীবিত থাকত এবং তাঁরা তাঁকে তাদের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করত তবে তিনি সেটিকে ‘সম্মান’ হিসেবেই বিবেচনা করতেন। 

আন্দিজ বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা আরেকজন হলেন র‍্যামন সাবেলা। যুক্তরাজ্যের টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেছিলেন—‘অবশ্যই মানুষের মাংস খাওয়ার ধারণাটি ছিল ভয়ানক ও ঘৃণ্য। মাংসগুলো মুখে নেওয়াই কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।’

ওই দুর্ঘটনায় জীবিতরা প্রথমে মৃতদের চামড়া খেতে শুরু করেছিলেন। এরপর চর্বি, মাংস পেশি এবং সর্বশেষ মানুষের মস্তিষ্কও খেয়েছেন। এই বিষয়ে সাবেলা বলেন, ‘এক দিক থেকে, আমাদের বন্ধুরাই বিশ্বের প্রথম অঙ্গ দাতা। কারণ তারাই আমাদের পুষ্টি জুগিয়ে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে। 

কানেসা জানিয়েছিলেন, যারা জীবিত ছিলেন তাঁরা নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করেছিলেন যে—জীবিতদের মধ্যে কেউ যদি মারা যায় তবে বাকিরা তাঁর মৃতদেহ খাবে। এটি বাধ্যতামূলক। 

যা হোক, দুর্ঘটনার পরপরই তাদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু তুষারের ওপর জীবিতদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাই হোক, ঘটনার দুই মাস পর ১৬ জনের দলের দুই সদস্য কানেসা এবং প্যারাদো সাহায্য সন্ধানে ১০ দিনব্যাপী একটি অভিযান চালান। এই অভিযানে তাঁরা নিজেদের তৈরি একটি স্লিপিংব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেই ব্যাগটি ছিল মানুষের চামড়া ও রাগবি খেলোয়াড়দের মোজার সমন্বয়ে তৈরি। যা হোক, অবশেষে ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্ধারকারীরা ওই ১৬ জনকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত