বিচিত্র /সুরের মালিকানা দিতে হবে বনকে, আদালতে আরজি

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
লস সেদরস বনের একাংশ। ছবি: মথ

গানের সুরের মালিকানা তথা স্বত্ব দিতে হবে বনকে। এমন দাবি নিয়েই আদালতে আরজি দায়ের করেছে মধ্য আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের একটি সংগঠন। মূলত মানব সমাজে শৈল্পিক সৃষ্টিতে প্রকৃতির অবদান স্বীকার করে নেওয়ার লক্ষ্যেই এই আরজি দায়ের করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন মোর দ্যান হিউম্যান লাইফ বা মথ এই আরজি জানিয়েছে আদালতের কাছে। আরজিতে বলা হয়েছে, ইকুয়েডরের বন ‘লস সেদরসকে’ সুর বা সংগীতের সহ-স্রষ্টার স্বীকৃতি দিতে হবে। ইকুয়েডরের এই বনভূমির আয়তন প্রায় ১৫ হাজার একর। প্রস্তাবটি সৃষ্টিশীলতায় প্রকৃতির ভূমিকার আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ। যা পরিবেশ ও কপিরাইট আইন ব্যবস্থায় এক নতুন নজির স্থাপন করতে পারে।

মোর দ্যান হিউম্যান লাইফের (মথ) এই আবেদন মানুষের ও প্রকৃতির অন্যান্য উপাদানের অধিকার উন্নয়নের পক্ষেই গুরুত্ব তুলে ধরেছে। আবেদনে লস সেদরস বনকে ‘সিডারদের গান’—এর সহ-লেখক বা সহ-স্রষ্টা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এই গানটি সুরকার কসমো শেলড্রেক, লেখক রবার্ট ম্যাকফারলেন এবং ফাঙ্গি ফাউন্ডেশনের মাইকোলজিস্ট জুলিয়ানা ফুরসি যৌথভাবে রচনা করেছেন। ফাঙ্গি ফাউন্ডেশন একটি মার্কিন পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠন।

যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকফারলেন বলেন, ‘এই গানটি রচনার পুরো প্রক্রিয়া এবং যা কিছু এর সঙ্গে জড়িত সেগুলোতে মধ্যে বন ও নদীগুলোর অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা ছিল। আমরা অল্প সময়ের জন্য সেই বনভূমির একটি চলমান অংশ হয়ে গিয়েছিলাম এবং বনের সহায়তা ছাড়া এই গানটি লেখা সম্ভব হতো না। বন আমাদের সঙ্গে এই গান লিখেছে।’

এর আগে, ২০০৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার নেতৃত্বে ইকুয়েডর নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। সে সময় প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলোর বিশেষ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইকুয়েডর ছিল প্রথম দেশগুলোর একটি, যারা একটি বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।

ইকুয়েডরের সংবিধানের ১০ এবং ৭১-৭৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রকৃতির অধিকারগুলো হলো—১. প্রকৃতির, যা ইকুয়েডরে ‘পাচামামা’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে প্রাণের উৎপত্তি হয়, যেখানে প্রাণ বজায় থাকে—তার অস্তিত্ব, বাস্তুতন্ত্র, কাঠামো, কার্যক্রম এবং বিবর্তন প্রক্রিয়া বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। ২. প্রকৃতির পুনরুদ্ধারের অধিকার রয়েছে। এই পুনরুদ্ধার প্রাকৃতিক এবং আইনি ব্যক্তিদের অথবা রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে না বরং এই প্রক্রিয়া প্রকৃতির নিজস্ব। ৩. যেকোনো কর্মকাণ্ড যা কোনো প্রজাতির বিলুপ্তি, বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস বা প্রাকৃতিক চক্রের স্থায়ী পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সতর্কতা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ৪. এবং জনগণ, সম্প্রদায় এবং জাতিগোষ্ঠীগুলোর অধিকার থাকবে পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে মঙ্গল লাভ করার।

এর আগে, ২০২১ সালে ইকুয়েডরের সাংবিধানিক আদালত প্রকৃতিতে ‘ব্যক্তি সত্তার’ অধিকারী হিসেবে ঘোষণা করে। সে সময় লস সেদরসকে জৈবিক সত্তা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের একটি আদালত ‘তে ওরেওয়েরা’ বনভূমিকে ‘মানব মালিকার ঊর্ধ্বে এবং নিজস্ব স্বত্ব ও আইনি ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

এরপর, ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের পর্বতগুলোতেও আইনি ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। একই ধরনের অধিকার দেওয়া হয় দেশটির ওয়াংগানুই নদীকেও। কেবল নিউজিল্যান্ডই নয়, বাংলাদেশও ২০১৯ সালে দেশের সব নদীকে ‘জৈবিক সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশের হাইকোর্ট এক নির্দেশের পর এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত