সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে এবার ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩: ৩৮
Thumbnail image
ইসরায়েলের একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান। ছবি: এএফপি

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের তীব্র ও বজ্রগতির আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের সুবিধা ভালোমতোই নিয়েছে ইসরায়েল। টানা কয়েক দিন সিরিয়ায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পুরোটাই প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। এবার ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছে ও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিশ্বাস করে যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্র গোষ্ঠীগুলোর দুর্বলতা এবং সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের নাটকীয় পতনের পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানার মোক্ষম সুযোগ তৈরি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী (আইএএফ) সেই সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতির জন্য নিজেদের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। আইডিএফ আরও বিশ্বাস করে যে, আসাদ সরকারের পতন এবং লেবাননে ইরানের প্রধান মিত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দুর্বলতার পর ইরান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং সেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা হিসেবে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি আরও এগিয়ে নিতে পারে এবং একটি বোমা তৈরি করতে পারে।

ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, তাদের মহাকাশ কর্মসূচি এবং পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নাগরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান ২০০৩ সাল পর্যন্ত একটি সংগঠিত সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে এসেছে এবং এর পর নাগরিক প্রয়োজনীয়তার বাইরে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েল দাবি করে যে, ইরান কখনোই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুরোপুরি ত্যাগ করেনি এবং তাদের অনেক পারমাণবিক স্থাপনা শক্তভাবে সুরক্ষিত পর্বতের নিচে অবস্থিত।

ইসরায়েলকে চিরশত্রু মনে করে ইরান এবং দেশটি প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত বছর ইরান দুবার ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার জবাবে ইসরায়েল তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন প্রতিরোধ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইরানের উভয় হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েল গুরুত্বপূর্ণ ইরানি সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হেনেছে। এই হামলাগুলো ইরানি সন্ত্রাসী মিত্রদের দ্বারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি বহুমুখী যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছে।

আইএএফ জানিয়েছে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়ার আকাশসীমায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইরানের অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের পর তারা ওই এলাকায় সম্পূর্ণ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। সিরিয়ার ওপর এই শ্রেষ্ঠত্ব আইএএফের বিমানগুলোকে ইরানে আঘাত হানার জন্য আরও নিরাপদ পথে চলাচল করার সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছেন তেল আবিবের সামরিক কর্মকর্তারা বলেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে সিরিয়াজুড়ে ইসরায়েলের পরিচালিত ব্যাপক বোমা হামলা সিরিয়া অধিকাংশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সামরিক সূত্রমতে, আইএএফ সিরিয়ার আসাদ সরকারের সাবেক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ৮৬ শতাংশ ধ্বংস করেছে। এতে ১০৭টি পৃথক প্রতিরক্ষা ইউনিট এবং ৪৭টি রাডার অন্তর্ভুক্ত। ইসরায়েলের ধ্বংস করা সামরিক শক্তির তালিকায় স্বল্প থেকে মাঝারি পাল্লার এসএ-২২ (যা পান্তশির-এস ১ নামে পরিচিত) এবং রুশ এসএ-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত। রাশিয়ার তৈরি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আইএএফের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।

বর্তমানে সিরিয়ায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অবশিষ্ট আছে, যা আইএএফের জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। আইএএফ বলেছে, তারা সিরিয়ার আকাশে অবাধে কার্যক্রম চালাতে পারবে। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ‘সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী ছিল এবং এর ওপর আঘাত আইএএফের আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।’

এই নতুন আকাশসীমায় কার্যক্রমের স্বাধীনতা ইরানে সম্ভাব্য হামলার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি আইএএফকে সিরিয়ায় নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। আগে যখন আইএএফ সিরিয়ায় ইরান-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাত তখন তারা সরাসরি দামেস্কের ওপর দিয়ে উড়তে পারত না। তবে এখন এটি সম্ভব। আইএএফ এখন সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ওপর নজরদারি ড্রোনও পাঠাতে পারে কোনো ভয় ছাড়াই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত