নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর নির্বাচন সিরিয়ায়, সময় লাগবে ৪ বছর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪২
Thumbnail image
আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার ডি-ফ্যাক্টো নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি ওরফে আহমেদ আল-শারা বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নির্বাচন আয়োজন করতে চার বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তার আগে, সিরিয়ার জন্য নতুন একটি সংবিধান রচনা করা হবে। এই প্রথম তিনি কিংবা বাশার আল-আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীর কোনো নেতা সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আহমেদ আল-শারা এই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’

আল-জোলানি বলেন, ‘নির্বাচন সম্ভবত চার বছর পর অনুষ্ঠিত হবে কারণ একটি নতুন আদমশুমারি পরিচালনা করতে হবে যা দেশে যোগ্য ভোটারদের সংখ্যা নির্ধারণ করবে। কোনো অর্থপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি ব্যাপক আদমশুমারি চালানো প্রয়োজন।’ তাঁর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন দামেস্কের নতুন সরকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেশে শান্তি-স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আল-শারা বলেন, ‘সিরীয়রা সম্ভবত এক বছরের মধ্যে তাদের দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবে।’ তিনি বলেন, ‘এইচটিএস—সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি—একটি জাতীয় সংলাপ সম্মেলনের শেষে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ এ সময় তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘সিরিয়া কারও জন্যই উদ্বেগের কারণ হবে না।’

একই সাক্ষাৎকারে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেন, তাঁর দেশ রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখবে। তিনি বলেন, তারা এমন কোনো উপায়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করতে চান না, যা দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

আল-জোলানি রাশিয়ার সঙ্গে সিরিয়ার শক্তিশালী কৌশলগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি মস্কোর বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আল-শারা বলেন, ‘রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাষ্ট্র। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্বার্থ ভাগাভাগি করে।’ আল-শারা আরও বলেন, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব দেশটিতে রাশিয়ার উপস্থিতি এমন কোনো উপায়ে শেষ করতে চায় না, যা দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

এর আগে, গতকাল রোববার রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুৎনিককে দেওয়া এক মন্তব্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানান, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি সম্পর্কিত চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনার কোনো পরিকল্পনার কথা মস্কোকে জানায়নি।

লাভরভ বলেন, ‘এটি নিয়ে কোনো সন্দেহে নেই যে, ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেছে এবং সেখানে (সিরিয়ায়) পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়েছে তা রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কিছু সমন্বয় আনছে। এটি শুধু আমাদের ঘাঁটি বা শক্ত ঘাঁটিগুলো সংরক্ষণ করা নয় বরং সেগুলোর কার্যক্রম, রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা সম্পর্কিত শর্তাবলি নিয়ে। এই বিষয়গুলো নতুন সিরিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার বিষয় হতে পারে।’

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেন যে, সিরিয়ার পরিস্থিতি রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যাপক চুক্তিকে প্রভাবিত করে না। তিনি জানান, দুই দেশই এই চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত। তিনি চুক্তিটিকে ব্যাপক, দীর্ঘমেয়াদি এবং সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার উপযোগী হিসেবে বর্ণনা করেন। সিরিয়ার নেতৃত্ব পরিবর্তন সত্ত্বেও এতে কোনো সংশোধনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান লাভরভ। তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির প্রতিফলন এবং এটিকে কৌশলগত অংশীদারত্বের স্তরে উন্নীত করেছে।’

এদিকে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের গভর্নর মাহের মারওয়ান বলেছেন, তাঁরা দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান। বিদ্রোহী দল হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) নেতা আহমেদ আল-শারার হয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে গত শুক্রবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীরা ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইসরায়েল সীমান্ত নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। যা স্বাভাবিক ঘটনা। এ কারণে ইসরায়েলি সেনারা সিরিয়ায় ঢুকে পড়ে, অগ্রসর হয় এবং কিছুটা বোমা হামলা চালায়। কিন্তু ইসরায়েলের প্রতি তাঁদের কোনো ভীতি নেই উল্লেখ করে দামেস্কের গভর্নর বলেন, ‘আমাদের সমস্যা ইসরায়েলের সঙ্গে নয়। যারা সহাবস্থান চায় তাদের সঙ্গে থাকার জন্য অনেকে আছে। ইসরায়েল শান্তি চায়। তারা কোনো দ্বন্দ্ব চায় না। আমরাও শান্তি চাই। আমরা ইসরায়েলসহ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারব না।’

এর আগে, বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ৮ ডিসেম্বর পালিয়ে রাশিয়া চলে যান। এর পরপরই সিরিয়ার গোলান মালভূমির বাকি অংশ দখল করে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া সীমান্তে যে বাফার জোন ছিল সেখানেও প্রবেশ করে দখলদার সেনারা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, নতুন করে সিরিয়ার যেসব ভূখণ্ড তারা দখল করেছেন সেখানে তাদের সেনারা অস্থায়ী ভিত্তিতে থাকবে। তবে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমির আংশিক দখলের পর এখন পর্যন্ত সেগুলো ছাড়েনি। ওই সময়ও এই দখলকে অস্থায়ী বলেছিল তারা। উল্টো নতুন করে এই অঞ্চলের উঁচুতম স্থানটির বাকি অংশ নিজেদের কবজায় নিয়েছে তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত