Ajker Patrika

ইসরায়েলের হামলায় গাজার ১৭ হাজার শিশু অভিভাবকহীন: জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৫৫
ইসরায়েলের হামলায় গাজার ১৭ হাজার শিশু অভিভাবকহীন: জাতিসংঘ

টানা প্রায় চার মাসের ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। এসব হামলায় ২৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে অন্তত ১৭ হাজার শিশু অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। 

অবরুদ্ধ গাজার প্রায় সব শিশুরই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তার দরকার বলে ইউনিসেফের ফিলিস্তিন বিষয়ক মুখপাত্র জনাথান ক্রিক্স জানান। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুরই স্বজন হারানোর ও ভোগান্তির হৃদয়বিদারক গল্প আছে।’

জেরুজালেম থেকে ভিডিও বার্তায় ক্রিক্স বলেন, ‘এই (১৭ হাজার) সংখ্যাটি সামগ্রিক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির, যা প্রায় ১৭ লাখ বা এক শতাংশের সমান।’ 

তবে এ সংখ্যাকে ‘কেবল অনুমান’ বলছেন তিনি। কারণ বিরাজমান পরিস্থিতিতে প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করা প্রায় অসম্ভব।

ক্রিক্সকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরার বলছে, প্রতিটি শিশুই ভয়াবহ এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। অভিভাবকহীন শিশু শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ হাসপাতালে আনা আহত শিশুরা নিজের নামটিও বলতে পারে না। 

সংঘাতের সময় মা–বাবা হারা শিশুদের পরিবারের অন্য সদস্যরা দেখাশোনা করে থাকেন। ক্রিক্স বলেন, ‘গাজায় খাবার, পানি ও আশ্রয়ের অভাবে স্বজনেরা নিজেই দুর্দশার মধ্যে দিন পার করছেন। যেখানে তারা নিজের সন্তানের দেখাশোনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে অন্য শিশুর দায়িত্ব নেওয়া তাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং।’

মা–বাবা হারা শিশুদের ইউনিসেফ বিচ্ছিন্ন শিশু বলে উল্লেখ করেছে এবং যে শিশুদের মা–বাবাও নেই ও কোনো স্বজনও নেই তাদের অভিভাবকহীন শিশু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ক্রিক্স আরও বলেন, সংঘাতের কারণে গাজার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং দশ লাখেরও বেশি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা প্রয়োজন। গাজার শিশুদের মধ্যে বেশ কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিয়েছে—উচ্চমাত্রায় উদ্বেগ, ক্ষুধামন্দা, অনিদ্রা, বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনলেই তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং হঠাৎই তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে। 

ইউনিসেফ বলছে, সংঘাতের মাত্রা বাড়ার আগে গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও মনো–সামাজিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল। তবে, এখন ইউনিসেফের অনুমান প্রায় সব শিশুরই এ ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। ক্রিক্স বলছেন, এমন প্রায় দশ লাখেরও বেশি শিশু রয়েছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে ২৭ হাজার ১০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ জনই শিশু। এ ছাড়াও গত ৭ অক্টোবর থেকে প্রায় ৬৬ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছে। প্রায় হাজারের মতো ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছে এবং অনেকেই ধ্বংস স্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। 

গাজায় যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে তাদের ওপর গুলি ছোড়া হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা দক্ষিণে পালাতে সফল হয়েছেন তারা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। 

ক্রিক্স বলেন, ‘এ সংঘাতের সঙ্গে শিশুদের কোনো সম্পর্ক নেই। এরপরও তারা এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যা কোনো শিশুরই হওয়া উচিত না। কোনো শিশুরই গত ৭ অক্টোবরের মতো সহিংসতা দেখা উচিত না, এমনকি এরপর থেকে যে মাত্রার সহিংসতা চলছে তাও কোনো শিশুর দেখা উচিত না।’

অভিভাবকহীন শিশুর সংখ্যা বের করে তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করতে এবং মানসিক সহায়তা দিতে ক্রিক্স যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত