গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ দেখছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯: ২৪
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ১০

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে বন্দিবিনিময় বিষয়ে চলমান আলোচনায় সন্তোষজনক উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি। গতকাল সোমবার তিনি জানিয়েছেন, উভয় পক্ষ একটি সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে। এই চুক্তিতে পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতি, নারী ও শিশু বন্দীদের বিনিময় এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিসর, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আলোচনা করছেন। বিষয়টির মধ্যস্থতা করছে কাতার। তিন দেশের গোয়েন্দাপ্রধানেরা গত ৭ অক্টোবরের পর থেকেই যুদ্ধ থামানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। সর্বশেষ তাঁরা গত সপ্তাহের শেষ দিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠকে বসেছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আটলান্টিক কাউন্সিল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি বলেন, ‘আমরা এই প্রস্তাব হামাসের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এবং তাদের এমন একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আশা করছি, যেখানে তারা (হামাস) প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে জড়িত থাকবে।’ 

কাতারের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হামাস আলোচনায় প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসেবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা এমন একটি জায়গায় চলে এসেছি, যেখান থেকে সম্ভবত ভবিষ্যতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে পারব।’ 
 
এদিকে, হোয়াইট হাউস থেকে সতর্কতা, জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের রায় কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছেন না ইসরায়েল সরকারের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী-এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ মন্ত্রী-এমপিদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, যুদ্ধের পরে গাজায় ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ঠেকানো যাবে না। 

ইসরায়েলিদের গাজায় ‘পুনর্বাসনের’ দাবিতে গত রোববার রাতে জেরুজালেমে হাজার হাজার মানুষের একটি সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশে হাজির ছিলেন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ। তাঁরা সেখানে জ্বালাময়ী বক্তৃতাও দিয়েছেন। 

‘সেটেলমেন্ট ব্রিংস সিকিউরিটি’ শীর্ষক ওই সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিল ডানপন্থী নাচালা সংগঠন, এরা ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে। যদিও সেটি আন্তর্জাতিক এবং মানবিক সংস্থাগুলো বহু আগেই অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। সমাবেশটিতে ইসরায়েল সরকারকে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর অংশে বসতি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 

টানা ৩৮ বছর দখলে রাখার পর ২০০৫ সালে একতরফাভাবে এই অঞ্চল থেকে সরে আসে ইসরায়েল। এরপর গাজায় ইহুদিদের বসতিগুলো ভেঙে ফেলা হয়। গাজা ছিটমহলটি তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে এবং সরকার গঠন নিয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। 

পশ্চিমের চাপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘স্থায়ীভাবে গাজা দখল করার বা বেসামরিক লোকদের উচ্ছেদের কোনো ইচ্ছা ইসরায়েলের নেই।’ তবে ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তাদের এখনকার আচরণে প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত