যুদ্ধ বন্ধের আকুতি জানানো ইসরায়েলি জিম্মি নিহত, রোববার শুরু যুদ্ধবিরতির আলোচনা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০: ৪৭

গাজায় জিম্মি এক ইসরায়েলির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার ইসরায়েল বলেছে, বিশেষ বাহিনী গাজায় সমাহিত করা ওই জিম্মির লাশ উদ্ধার করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা ওই জিম্মিকে বেশ কিছু দিন আগে হত্যা করেছে। 

এদিকে হামাস জানিয়েছে, মিসরের কায়রোতে অনুষ্ঠেয় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় তারা অংশ নেবে। রোববারই মিসরের মধ্যস্থতায় এই আলোচনায় শুরু হতে যাচ্ছে। এই আলোচনার মধ্যে অবশ্যই ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির বিষয়টিও থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর যুদ্ধের প্রায় ছয় মাস হতে চলল। ওদিকে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের জীবিত উদ্ধারের আশাও ক্রমে ক্ষীণ হতে চলেছে। এর মধ্যে এক জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধারের খবরে ইসরায়েলের জনগণই সরকারকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। 

পশ্চিমা দেশগুলোও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির পাশাপাশি ভয়াবহ মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ দেখাচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির সমালোচনায় দেশগুলো সোচ্চার হচ্ছে। ফলে পশ্চিম থেকে ইসরায়েলের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ৪৭ বছর বয়সী ইসরায়েলি কৃষক এলাদ কাৎজিরের মৃতদেহ দক্ষিণ খান ইউনিসে রাতের বেলা উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের অপহরণকারীরাই তাঁকে হত্যা করেছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। 

হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। 

হামাসের বন্দুকধারীরা গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া ২৫৩ জনের মধ্যে একজন কাৎজির।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবন্দী এবং জিম্মিরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীন নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। জিম্মিদের কিছু ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। একটি ভিডিওতে কাৎজির ইসরায়েল সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং জিম্মিদের তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

ইসলামিক জিহাদ অনলাইনে গত ৮ জানুয়ারি ওই ভিডিও পোস্ট করে। ভিডিওতে কাৎজির বলেন, ‘আমি একাধিকবার মৃত্যুর কাছাকাছি ছিলাম। এটি একটি অলৌকিক ঘটনা যে আমি এখনো বেঁচে আছি...আমি আমার পরিবারকে বলতে চাই যে, আমি তাদের খুব ভালোবাসি এবং আমি তাদের খুব মিস করি।’ 

বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ইসরায়েল গাজায় বন্দিদশায় থাকা অন্তত ৩৫ জিম্মিকে মৃত ঘোষণা করেছে। ফিলিস্তিনি পক্ষগুলো বলছে, ইসরায়েলি হামলায় এর কয়েকজন নিহত হয়েছে। 

কাৎজির বাবা আব্রাহাম নির ওজের বসতিতে নিহত হন। মা হান্নাকেও জিম্মি করা হয়েছিল। তবে গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে তিনি মুক্ত হন। 

এদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কাতার এবং মিশর গাজায় দীর্ঘ যুদ্ধবিরতিতে অবশিষ্ট ১২৯ জিম্মির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জোর দিতে চায়। 

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে এটিই দৈনিক সর্বনিম্ন মৃত্যু। 

শনিবার হামাস বলেছে, তাদের যোদ্ধারা খান ইউনিসে তিনটি ইসরায়েলি ট্যাংকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে অবশ্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। যদিও তারা আগে বলেছিল, সৈন্যরা ওই এলাকায় বন্দুকধারীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংস্থার একটি দল গাজা শহরের আল–শিফা হাসপাতালে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। এখানেই ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনী সন্দেহভাজন যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহের অভিযান পরিচালনা করেছে। এই এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপ।

সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্বেচ্ছাসেবী দলটি ধ্বংসপ্রাপ্ত আল–শিফা কমপ্লেক্সে কমপক্ষে পাঁচটি মৃতদেহ দেখেছে। এখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। স্বল্প মেয়াদে ন্যূনতম ব্যবহার উপযোগী করার মতো অবস্থাও নেই! 

যুদ্ধের আগে গাজা উপত্যকায় সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ছিল আল–শিফা। 

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বৃহস্পতিবার ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ এবং ইসরায়েলকে মানবিক ত্রাণ ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনার পর ইসরায়েল উত্তর গাজায় ইরেজ ক্রসিং পুনরায় চালু করার অনুমোদন দিয়েছে, অ্যাশদোদ বন্দর অস্থায়ী ব্যবহারেরও অনুমতি দিয়েছে তারা। 

এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ শনিবার এন ১২–এর মিট দ্য প্রেসকে বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটনে সফর করছেন। সেখানে আগামী সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা লাপিদের সঙ্গে দেখা করবেন কিনা সে ব্যাপারে কেউ মুখ খোলেননি। 

হামাস বলেছে, আলোচনার নতুন দফার জন্য রোববার কায়রোতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে তারা। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, তেল আবিবের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি মনে করেন, এটি ‘প্রকৃত অগ্রগতির চেয়ে বেশি রাজনৈতিক নাটক’ হবে! 

হামাস চায়, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের জন্য যেকোনো চুক্তি। ইসরায়েল বলছে, যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির পর, তারা হামাসের পতন ঘটাবে, তাদের ধ্বংস করবে। 

জিম্মি মুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে রোববার জেরুজালেমে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ছয় মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে এদিন। যেখানে শনিবার তেল আবিবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত