এ সপ্তাহেই গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, নিহত বেড়ে ৪৬৬০০

অনলাইন ডেস্ক    
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ৪৮
Thumbnail image
নির্বিচার আগ্রাসন চালিয়ে গাজাকে স্রেফ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। ছবি: আনাদোলু

যুদ্ধবিরতি নিয়ে গাজাকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই পক্ষ হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যবধান কমার খবর দিয়েছিল কাতারি সংবাদমাধ্যম। সেই সংবাদই সত্য হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহেই হতে পারে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি।

এদিকে, কাতারের রাজধানী দোহায় যখন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন সমান্তরালে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনও চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার ৬০০।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৮৪। এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান হামলায় ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩১ জন আহত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী দুটি পরিবারের ওপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করেছে এবং ৭১ জনকে আহত করেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলতে থাকলেও কাতারের রাজধানী দোহায় অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির মাঝে অবস্থিত সীমারেখায় তেল আবিবের সেনা উপস্থিতি বজায় থাকবে। এমনই একটি নতুন পরিকল্পনা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জমা দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে, জিম্মি মুক্তি নিয়ে নতুন পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এতে।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-কুদস আল-আরাবি জানিয়েছে, ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনারত মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। যেখানে গাজা উপত্যকায় সম্ভাব্য জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের সময় ও পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলি উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বরাবর প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে এবং এই বাফার জোন তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি করেছে। এর আগে, মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে ৩০০ মিটার এলাকাকে বাফার জোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সরাসরি উপস্থিতি না থাকলেও অনুপ্রবেশকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর বিষয়টির উল্লেখ ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আইডিএফ যেসব এলাকা থেকে সরে যাবে, তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে যে চুক্তির বর্তমান প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথম দুই পর্যায়ে সব জিম্মি এবং চুক্তিকৃত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এখনো আলোচনার অধীন বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের সংখ্যা এবং কঠোর শাস্তি ভোগকারীদের কোথায় ও কীভাবে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েল জানিয়েছে, চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আগে তারা জানতে চায় কতজন জিম্মি জীবিত রয়েছেন। তবে, গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে মানবিক সহায়তা পরিচালনার বিষয়ে ইতিমধ্যেই সমঝোতা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সোমবার জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দী মুক্তির একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদের শেষ সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে।

জেক সুলিভান বলেন, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি এবং এটি এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে। আমি কোনো প্রতিশ্রুতি বা ভবিষ্যদ্বাণী করছি না, তবে এটি সম্ভব এবং আমরা তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ সুলিভান জানান, ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ের তুলনায় এখন একটি চুক্তি হওয়ার বিষয়ে তিনি অনেক বেশি আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘এর কারণ হলো, মতপার্থক্যগুলো অনেকটাই কমে এসেছে।’ হামাসের হাতে থাকা জিম্মি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ের ফর্মুলা নিয়ে এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান কেমন হবে, এসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।

সুলিভান বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং হামাস ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যখন এই দুই বিষয় একসঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়, আমরা মনে করি চুক্তি সম্পন্ন করার এটাই সঠিক সময়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত