Ajker Patrika

বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল, নেতানিয়াহুকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১৭: ০৪
নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে ইসরায়েলিরা। ছবি: সংগৃহীত
নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে ইসরায়েলিরা। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত-এর প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের ঘোষণার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজপথ।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) নেতানিয়াহু প্রশাসনের পুনরায় হামলা শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রোনেন বারকে বরখাস্ত ইস্যুতে ভোটাভুটির ঘোষণার পর ক্ষোভ আরও তীব্র হয়। গতকাল রাত থেকে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছিলেন ইসরায়েলিরা। আজ শুক্রবার রোনেন বারকে বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তেল আবিব ও জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।

বিক্ষোভকারীরা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে স্বৈরাচারী বলেও আখ্যা দেন। রিনাত হাদাশি নামের ৫৯ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে বলেন, ‘ইসরায়েলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। স্বৈরাচারী নেতানিয়াহু আমাদের জিম্মিদের পরিত্যাগ করেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি স্পষ্ট অবহেলা দেখাচ্ছে।’

আজ স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ইসরায়েলি মন্ত্রিপরিষদে নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্তসংক্রান্ত ভোটাভুটি হয়। বৈঠক শেষে শিন বেত প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের ঘোষণা দেয় মন্ত্রিপরিষদ। ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের তথ্যমতে, দেশটির ইতিহাসে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্তের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। আগামী ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে তাঁকে। যদিও প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এপ্রিলের ২০ তারিখ হবে শিন বেতে তাঁর শেষ দিন। পরে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সেই তারিখ এগিয়ে আনা হয়।

রোনেনকে অপসারণের এই সিদ্ধান্তকে নেতানিয়াহু ও নিরাপত্তাপ্রধানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কাতারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত শুরুর পর থেকেই এই উত্তেজনা বাড়ে। নেতানিয়াহু এই অভিযোগকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, তিনি ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি দুর্বল করার চেষ্টা করছেন এবং রোনেনের অপসারণ সেই চেষ্টারই অংশ।

এর আগে রোনেন নিজেই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের হামলা প্রতিরোধে গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় নিতে চান উল্লেখ করে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপরও রীতিমতো এলাহি কাণ্ড করে রোনেনকে অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।

এ ছাড়া জিম্মি মুক্তি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরিও উসকে দিয়েছে ইসরায়েলিদের ক্ষোভ। হামাসের হাতে এখনো জিম্মি আছেন ৫৯ জন, যাঁদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত থাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করায় তাঁদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে বন্দীদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘দ্য হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’ এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি এমন একটি পরিণতি, যা ইসরায়েলের সাধারণ জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত