সিনওয়ার হত্যার পর হামাসের শীর্ষ নেতা হিসেবে আলোচনায় যাঁরা 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ৫৪
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ৪১

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। এই সময়ের মধ্যে দেশটির নির্বিচার আগ্রাসনে অঞ্চলটির ৪২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় লাখখানেক। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি আগ্রাসন গাজা ছাড়িয়ে লেবাননেও পৌঁছে গেছে। সেখানেও প্রায় তিন-চার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

কেবল সাধারণ মানুষ নয়, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া গত জুলাইয়ে গুপ্তহত্যার শিকার হন। এরপর গোষ্ঠীটির প্রধান নির্বাচিত ইয়াহইয়া সিনওয়ার। তিনিও গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

সিনওয়ারের নিহত ওয়ার পর থেকেই নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, গাজায় কি ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ হয়ে যাচ্ছে? তবে সেই গুঞ্জনে পানি ঢেলেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ হয়নি। তবে শেষের শুরু হয়ে গেছে। যা–ই হোক, সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর নতুন করে একটি বিষয় সামনে এসেছে। তা হলো আগামী দিনে হামাসকে নেতৃত্ব দেবেন কে বা কারা।

এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজনের নাম সামনে আছে। তাঁরা হলেন খালিদ মেশাল, খলিল আল হাইয়্যা, মুসা আবু মারজুক, মোহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ ও মোহাম্মদ সিনওয়ার। কম আলোচনায় থাকলেও মাহমুদ আল-জাহার, মোহাম্মদ শাবানা ও রওহি মুশতাহাদের মতো নেতারাও গোষ্ঠীটিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

খালিদ মেশাল
হামাসের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ৬৮ বছর বয়সী খালিদ মেশাল ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মাধ্যমে হামাসের নতুন সর্বোচ্চ নেতা হতে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছেন। হামাসের এই নেতা ১৯৯৭ সালে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সে সময় তাঁকে হত্যার জন্য ইসরায়েলি এজেন্টরা জর্ডানের রাজধানী আম্মানে একটি গুপ্তহত্যা মিশনে তাঁকে বিষ মেশানো ইনজেকশন দিয়েছিল। 

খলিল আল-হাইয়্যা
খলিল আল-হাইয়্যা গাজায় ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ডেপুটি। সম্প্রতি হানিয়ার তত্ত্বাবধানে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তেহরানে হানিয়ার বাসভবনেই হাইয়্যার আবাস ছিল। কিন্তু যখন ভবনটিতে হামলা হয়, তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

এর আগে তিনি দুই দফায় ইসরায়েলি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। ২০০৭ সালে এক ইসরায়েল তাঁর বাড়িতে আঘাত করে বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে হত্যা করে। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে আবারও তাঁর বাড়িতে হামলা হয়। সেই দফায়ও তিনি বেঁচে যান, তবে তাঁর বড় ছেলে নিহত হন।

মুসা আবু মারজুক
মুসা আবু মারজুক ১৯৫১ সালে গাজার সীমান্ত শহর রাফাহে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার সময় অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। পরে তিনি এর পলিটব্যুরোর সদস্য হন। বর্তমানেও তিনি সক্রিয়ভাবে গোষ্ঠীটির শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। 

মারজুকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও। তিনি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত হামাসের পলিটব্যুরোর প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যোগ থাকায় ১৯৯৫ ও ১৯৯৯ সালে জর্ডান তাঁকে দুবার নির্বাসনে পাঠায়। প্রথমবার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে এফবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আটকে রাখে। পরে তাঁকে ফের জর্ডানে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ১৯৯৯ সালে জর্ডান থেকে তাঁকে সিরিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি ২০১২ সালে সিরিয়া ত্যাগ করেন। এর পর থেকে গাজা, মিসর ও কাতারে সময় কাটাচ্ছেন।

মোহাম্মদ সিনওয়ার
ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার (৪৯)। তিনি গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদার সরাসরি ইসরায়েলবিরোধী কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি হামাসের প্রথম ব্যাচে যোগ দেওয়া কর্মীদের অন্যতম । ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ৯ মাস দেশটির কারাগারে বন্দী ছিলেন। পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কারাগারেও কাটিয়েছেন তিন বছর। ২০০০ সালে তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে যান। মোহাম্মদ সিনওয়ার হামাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা আবদুল-আজিজ আল-রানতিসির আদর্শিক প্রভাবে বেড়ে ওঠেন। 

মোহাম্মদ সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার অন্যতম কারিগর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধারণা করা হয়, ইসরায়েলি হামলায় হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দায়েফ নিহত হওয়ার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ সিনওয়ার। 

মোহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ
মোহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ ‘আবু ওমর হাসান’ নামেও পরিচিত। তিনি হামাসের শুরা কাউন্সিলের প্রধান। ৬ অক্টোবর তাঁকে হামাসের শুরা কাউন্সিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন। এই বাইরে তাঁর সম্পর্কে খুব একটা তথ্য জানা যায় না।

মাহমুদ আল-জাহার
৭৯ বছর বয়সী মাহমুদ আল-জাহার পেশায় একজন সার্জন। ইসরায়েল ও হামাসের অন্যান্য বিরোধীর প্রতি তাঁর কট্টর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বন্ধু ও শত্রুরা তাঁকে ‘জেনারেল’ বলে ডাকত। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে জাহার কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি। এরপর তাঁকে দেখাও যায়নি। তিনি জীবিত না মৃত, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

হামাসের এই নেতা ২০০৩ সালে একবার ইসরায়েলি হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। ২০০৭ সালে গৃহযুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে হামাস ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মোহাম্মদ শাবানা 
হামাস নেতা শাবানা, আবু আনাস শাবানা নামে বেশি পরিচিত। তিনি এখনো বেঁচে থাকা হামাসের শীর্ষ ও অভিজ্ঞ সশস্ত্র কমান্ডারদের একজন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণে রাফাহে হামাসের একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। হামাস সূত্র জানিয়েছে, শাবানা রাফাহে টানেল নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৪ সালে ৫০ দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল হামাসের তিনজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার পর শাবানা রাফাহ ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব নেন।

রওহি মুশতাহা
রওহি মুশতাহা হামাসের ভেতরে সিনওয়ারের আস্থাভাজন ও শক্তিশালী মিত্র। সিনওয়ারের সঙ্গে মিলে মুশতাহা ১৯৮০–এর দশকের শেষের দিকে হামাসের প্রথম নিরাপত্তাব্যবস্থা (সিকিউরিটি সিস্টেম) প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করা ফিলিস্তিনিদের ট্র্যাকিং এবং হত্যার জন্য দায়ী ছিল। তিনিও ২০১১ সালে সিনওয়ারের সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পান। সম্প্রতি তাঁকে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং অপারেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গাজায় হামাস ও মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ওয়াইনেট, ইউরোপীয়ান কাউন্সিল ফর ফরেইন রিলেশন ও আল জাজিরা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত