পাকিস্তানের রাজনীতি: ইতিহাসের পরিক্রমায় বিপরীত অবস্থানে ইমরান-নওয়াজ 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ১২
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ২৪

যে দেশের সরকারপ্রধানেরা কখনোই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন না; দীর্ঘ সেনাশাসন ও একনায়কতন্ত্রের সাক্ষী যে দেশটির বাসিন্দারা, সেখানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এটিই তো উদ্‌যাপনের মতো বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এখনকার মতো সময় কখনোই এর আগে দেখেনি পাকিস্তান। ক্ষোভ, হতাশা, আশা—সবকিছু মিলেমিশে একাকার। এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ৮ তারিখ পাকিস্তানে নির্বাচন। অভিযোগ উঠেছে, এই নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রচ্ছন্ন সামরিক হস্তক্ষেপে। এটি লক্ষণীয়, একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচনের সাক্ষী পাকিস্তান। তবে আসন্ন নির্বাচনে অন্যবারের বিতর্ক ছাড়িয়ে গেছে বলেই জোর ধারণা করা হচ্ছে। এর কারণও রয়েছে। 

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যতম বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান এক মামলায় তিন বছরের কারাভোগ করছেন। কারারুদ্ধ অবস্থায় নির্বাচনের একেবারে আগেভাগে পরপর দুই দিন গত মঙ্গল ও গতকাল বুধবার পৃথক মামলায় যথাক্রমে ১০ ও ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই নেতাকে। 

অন্যদিকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা আরেক নেতা নওয়াজ শরিফের পুনরুত্থানের বিষয়টিও আমলে নেওয়ার মতো। নাটকীয়ভাবে দেশে ফেরার পর একে একে দণ্ডাদেশগুলো থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল-এনের এই নেতাকে। 

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দাঁড়াননি। সেবার তিনি কারাগারে ছিলেন। বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগে নির্বাচনে লড়তে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ওই নির্বাচনের মাত্র ছয় বছর পর ঠিক একই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে ইমরান খানকে, যেখানে এখন নওয়াজ শরিফ পুরোপুরি বিপরীত ভূমিকায় বললে ভুল হয় না। 

 ২০২২ সালে ইমরান খান উৎখাত হন। তখন নওয়াজের দল পিএমএল-এল ক্ষমতায় আসে। সে সময় নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন। আর এবারের নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পর সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পান নওয়াজ। এবার সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন মদদ নিয়ে চতুর্থ মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

নওয়াজ শরিফ এ-ও জানেন, সেনাবাহিনী যেমন তাঁকে ক্ষমতায় বসাচ্ছে, তেমনি ক্ষমতা নিয়েও নিতে পারে। কারণ, দ্বিতীয় মেয়াদে অভ্যুত্থানের শিকার হন তিনি, সালটি ছিল ১৯৯৯। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন নওয়াজ। 

আর ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানের এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার অন্যতম কারণ, এখন তিনি কারারুদ্ধ। ইমরানের দল ও সমর্থকেরা মনে করছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একের পর এক কারাদণ্ডাদেশে দণ্ডিত হচ্ছেন ইমরান। 

ইমরানের ক্ষমতায় উত্থান এবং সেখান থেকে ছিটকে যাওয়া—সবকিছুই সেনাবাহিনীর ইচ্ছায় ঘটেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। যদিও সেনার ভূমিকায় উত্থান ও পতনের অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে ইমরান ও নওয়াজের দল। 

 ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানের আবির্ভাব ঘটেছিল পরিবর্তনের কান্ডারি হিসেবে। কিন্তু ইমরানের শাসনামলে অর্থনীতি আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় যায়। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে এবং কারারুদ্ধ হন তাঁর বিরোধী রাজনীতিবিদেরা। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইমরান তাঁর জনসমর্থন খুইয়েছেন। কাজেই কারাগারে না থাকলেও এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা আছে তাঁর। 

তবু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ব্রিটিশ জরিপ সংস্থা গ্যালপের জরিপ অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে ইমরান খান এখনো দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। মনে করা হচ্ছে, জনপ্রিয়তার এই ব্যবধান গত ছয় মাসে লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে এনেছেন নওয়াজ শরিফ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত